ত্রাতারূপে আবির্ভূত পুনাক, জাফর-জমেলাদের মুখে তৃপ্তির হাসি

প্রকাশিতঃ 7:36 pm | July 19, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলোঃ

ক্ষুধা-ক্লিষ্টে কাটে দিন। দেহঘড়িতেও হরেক রোগের বসতি। দিন যাচ্ছে আর শরীর ভাঙছে। হুইল চেয়ারে জীবন একেবারেই দুর্বিষহ। আবার ঘরে নুন থাকে তো পান্তা ফুরায়। জীবন যেন একেবারেই অর্থহীন জাফর মিয়ার কাছে। শান্তিবাগে থাকলেও করোনা সঙ্কটের এই অস্থির সময়ে শান্তি নেই জাফরের ভুবনে।

দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে দিন পার করা জাফরের কানে হঠাৎ আটকে গেলো একটি সুখবর। সেই খবরেই বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) নিমন্ত্রণে এসেছেন রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে। সোমবার (১৯ জুলাই) সকালে ঈদ উপহার সামগ্রী ও খাবার হাতে পেয়ে আনন্দাশ্রু জাফরের চোখে।

ভেজা চোখ নিয়ে বলছিলেন, ‘হামার হাত চলে না, ঠ্যাং চলে না। আমারে নতুন কাপড়, খাওন দাওন (ঈদ উপহার সামগ্রী) দিছু। তোমরা দুধে-ভাতে বেঁচে থাকবা। আল্লাহ তোমাগোর ভালো করুক।’

রাজধানীর টিন্ডটি কলোনীর জমেলা খাতুন (৫০) করোনায় গৃহকর্মীর কাজ হারিয়েছেন। কষ্টেসৃষ্টে দিন পার করছেন। দু’মুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে আছেন কোনোমতে। আয়-রোজগারের পথ পুরোপুরি বন্ধ। এরই মধ্যে আবার দূয়ারে কড়া নাড়ছে ঈদ। মানবেতর জীবন যাপন করে আসা এই জমেলার হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে ঈদ উপহার সামগ্রী ও খাবার।

আনন্দে ছলছল চোখ জমেলার। যেন অন্ধকার থেকে আলোতে ফিরেছেন। মুখভরা হাসিতে স্বস্তির নি:শ্বাস ছেড়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলেন, ‘ভাবছিলাম গরিবরে দেখার কেউ নাই। কিন্তু অহন সেই চিন্তা ভুল মনে হইতাছে। এই খাবার দিয়া ঈদসহ ১০ দিন খাইতে পারবো।’

শুধুমাত্র জাফর বা জমেলাই নন, সোমবার (১৯ জুলাই) সকালে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এমন দু:স্থ, গরিব ও অসহায় মানুষকে দু:সহ যন্ত্রণার সময়ে দ্বিগুণ খুশির বারতাই দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)।

ওদের হাতে নতুন কাপড়, চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আলু, চিনি, সেমাই, গুঁড়া দুধ, তেলসহ ঈদ সামগ্রী, রান্না করা গরুর মাংস ও প্যাকেট করা খাবার তুলে দিয়েছেন পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা। কষ্টের ঘূর্ণিপাকের সময়ে এমন সহায়তায় উচ্ছ্বসিত ঘরবন্দি জীবনে কর্মহীনরা।

পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর বিধি-নিষেধে ক্ষতিগ্রস্তদের মুখে হাসি ফুটাতে সরকারের পাশাপাশি সামর্থ্যবানদের তাদের মানবিক সহায়তায় এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান।

এ সময় তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এসব দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে এসে দাঁড়ালে তাদের কঠিন মুহুর্ত জয় করা সম্ভব। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বে মানবিক এবং সামাজিক কার্যক্রমে আমাদের অংশগ্রহণ অব্যাহত থাকবে।’

সূত্র জানায়, প্রাণঘাতী করোনা যাপিত জীবনে ঘোর অমানিষার অন্ধকার নিয়ে আসার পর ছিন্নমূল, দিনমজুর, অভাবী ও অসহায় এসব মানুষের কঠিন বাস্তবতা অনুধাবণ করে নানাভাবেই পাশে দাঁড়ায় পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)। ওইসব মানুষের হাহাকার আর আর্তনাদের সময়টিতে সঙ্কটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে এবং আঁধার কাটাতে বাস্তবধর্মী বহুমাত্রিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা।

বিপদেই মনুষ্যত্বের পরিচয়-এ মর্মবাণী হৃদয়ে গেঁথে পথশিশু, ছিন্নমূল, বাস্তুহারা, দুস্থ ও অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষের দোরে দোরে গিয়ে নিজেদের রান্না করা খাবার পৌঁছে দেয় পুনাক। চরম অভাবের জীবনে নিম্নবিত্তের কাছে এসব খাবার বা উপহারই যেন আবির্ভূত হচ্ছে ত্রাতারূপেই।

সামাজিক দূরত্বের রীতি-নীতি মেনেই নিজের বহুমাত্রিক মেধার কিরণে মানবিক জীবনদর্শন ও মানবিক হৃদয় নিয়েই নিগূঢ়তম বাস্তবতায় দরিদ্র ও দুস্থ মানুষের কল্যাণে অরাজনৈতিক এই সংগঠনটিকে পরিপূর্ণভাবে নিবেদন করেছেন আইজিপি পত্নী। দেশপ্রেম, আবেগ আর মানবিকতার সঙ্গেই বিপন্ন ও নিরন্ন এসব মানুষের জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ধারাবাহিক প্রয়াস নিয়েছেন।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা অন্যদের সঙ্গে নিয়ে গত ৪ জুলাই থেকে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পুনাক’র তহবিল থেকে নয়, নিজেদের আয়োজনে বাসায় রান্না করা খাবার বিতরণ করেছেন।

প্রতি রাতে ও সকালে পুনাক’র একাধিক টিম রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে ঘুরে রান্না করা খাবার তুলে দিয়েছেন ক্ষুধার্ত অসহায় দরিদ্র মানুষের হাতে। এসবের মাধ্যমেই চলমান সঙ্কটে বা দু:সময়ে জীশান মীর্জার নেতৃত্বে একেকজন পুনাক সদস্য যেন হয়ে উঠেছেন আলোর পথের যাত্রী।

কালের আলো/এএএমকে/এনএল