খা‌লেদার ‘স‌ঠিক চি‌কিৎসা’ নি‌য়ে শঙ্কা ডা. জাহিদের

প্রকাশিতঃ 8:13 pm | October 06, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

মেডিকেল বোর্ড হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী পুনর্গঠিত হয়নি দাবি করে খালেদার চিকিৎসা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব-এর মহাসচিব ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

তিনি দাবি করে বলেছেন, কার্ডিলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি, অর্থোপেডিকস বিভাগের অধ্যাপক ডা. নকুল কুমার দত্ত এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহাবিলিটিশন বিভাগের ডা. বদরুন্নেছা আহমেদ-তারা তিনজনই স্বাচিপের আজীবন সদস্য।

ডা: জাহিদ বলেন, উচ্চ আদালত তার নির্দেশনায় বলেছিলেন, বেগম খালেদা জিয়া তার পছন্দের চিকিৎসকের চিকিৎসা নিতে পারবেন। একইসঙ্গে তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডে আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপ (স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ) এবং বিএনপিপন্থী চিকিসকদের সংগঠন ড্যাব (ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) এর কেউ থাকতে পারবে না।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, কিন্তু তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তিনজনই স্বাচিপের আজীবন সদস্য। তাহলে এখানে আদালতের নির্দেশনা কোথায় মানা হলো।

বিএনপির এ নেতা বলেন, ‌‌তি‌নি বিএন‌পির চেয়ারপারসন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপ‌তি’ জিয়াউর রহমা‌নের স্ত্রী ও তিনবা‌রের প্রধানমন্ত্রী। এর বাই‌রেও তি‌নি একজন মানুষ এবং একজন ব‌য়ো‌জ্যেষ্ঠ নাগ‌রিক। তার অ‌নেকগু‌লো অসুখ আ‌ছে, যেগু‌লো সম্প‌র্কে আমরা জা‌নি না। তার দুইবার ক‌রে হাঁটু ও চো‌খের অপা‌রেশন হ‌য়ে‌ছে। তার চি‌কিৎসা দে‌শে-বি‌দে‌শে সবসময় হ‌য়ে‌ছে এবং তার পছন্দমত চি‌কিৎস‌কেরাই এক্ষেত্রে ফ‌লোআপের স‌ঙ্গে জ‌ড়িত আ‌ছেন। সেই সমস্ত চি‌কিৎস‌কের পরামর্শ এবং বি‌দেশি চি‌কিৎস‌কের পরামর্শ নি‌য়ে তার চি‌কিৎসা চল‌ছিল। তিনি যে নি রি‌প্লেস (হাঁটু প‌রিবর্তন) ক‌রে‌ছেন তা দেশবাসী জা‌নে। বাংলা‌দে‌শে এই যে এই হাসপাতা‌লে এখা‌নে নি রি‌প্লেস‌মেন্ট শুরু হ‌য়ে‌ছে মাত্র ক‌য়েকদিন। তা‌দের বিশেষত্ব কী? তারা কতোদিন ধ‌রে কর‌ছে? আ‌মি বিএসএমএমইউকে ‘আন্ডারমাইন’ (খাটো করে দেখা) কর‌ছি না।

তিনি বলেন, একজন সাংবা‌দি‌ক যেমন অ‌নেক দিন লেখার পর ‘এক্সপারটাইজ ডেভেলপ’ ক‌রে, একজন চি‌কিৎস‌কেরও প্র্যাক‌টিস কর‌তে কর‌তে হি অর শি আর্ন এক্সপার্ট (তিনি বিশেষজ্ঞ হন)। এখা‌নে আমাদের বক্তব্য হ‌চ্ছে, খালেদা জিয়ার একটা বি‌শেষা‌য়িত হাসপাতা‌লে চি‌কিৎসা প্র‌য়োজন, তার পছন্দমত। যাই হোক মহামান্য আদালত ম‌নে ক‌রে‌ছেন বিএসএমএমইউ‌তে চি‌কি‌ৎসা হ‌বে এবং কতোগু‌লো শর্ত দি‌য়েছেন। আদালতের পক্ষ থেকে বলা হ‌য়ে‌ছে যে, তাকে সা‌বেক প্রধানমন্ত্রী হি‌সে‌বে স‌র্বোচ্চ অগ্রা‌ধিকার দি‌তে হ‌বে। তার মে‌ডিকেল বোর্ড গঠ‌নের সময় পছ‌ন্দের য‌দি কো‌নো চি‌কিৎসক থা‌কে সেটা বোর্ড সদস্য‌দের স‌ঙ্গে আ‌লোচনা ক‌রে এমন‌কি প্রতিষ্ঠা‌নে যে ডাক্তার কর্মরত নন (‌খালেদা জিয়ার ব্য‌ক্তিগত চি‌কিৎসক ছি‌লেন) তাদের‌ও প্র‌য়োজ‌নে আনা যাবে।

আদালতের পক্ষ থেকে তিনটি বিষয় নির্দিষ্ট ক‌রে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিষয় তিনটি হলো- গাই‌নকোল‌জি, ফি‌জিওথেরা‌পি এবং ফি‌জিক্যাল মে‌ডি‌সিন। এই তিনটা বিষয়ে তিনি যা‌দের চাই‌বেন বোর্ড ছাড়াও তা‌দের দি‌তে হ‌বে। কোর্ট কিন্তু অ‌নেক সীমাবদ্ধতার ম‌ধ্যেও সু‌বি‌বেচনাপ্রসূত কাজ ক‌রে‌ছেন।

এ সময় অভিযোগের সুরে তিনি বলেন, আজ‌কে আমরা কী লক্ষ্য করলাম? তাকে যেভা‌বে আনা হল, তিনি যেখা‌নে হুইল চেয়া‌রে ব‌সেন, তাকে হা‌ঁটি‌য়ে নেওয়ার চেষ্টা হলো। প‌রে ব্যর্থ হ‌য়ে তা‌কে হুইল চেয়ারে ক‌রে নেওয়া হ‌লো। হুইল চেয়ারের র‌োগীকে সাধারণত জিপ বা উঁচু গা‌ড়িতে ক‌রে নি‌তে হয়। এই যে ট্রান্স‌পো‌র্টেশন, এটা তো কম‌ফো‌র্টেবল হয়‌নি। তার পরবর্তী‌তে তাকে কে‌বি‌নে ঢোকা‌নো হ‌লো। এরপর যে সমস্ত ডাক্তার‌দের নাম শুন‌ছি এবং মি‌ডিয়া‌তে চ‌লে আস‌ছে, হাসপাতাল অথবা জেল কর্তৃপ‌ক্ষের উ‌চিত তা‌দের বক্তব্য দেওয়া। সেখানে এমন সব ডাক্তার‌দের নাম আ‌ছে, তা‌দের নি‌য়ে বিতর্ক আ‌ছে। যেমন কা‌র্ডিওল‌জি‌র প্রধান (অধ্যাপক সজল কৃষ্ণ ব্যানা‌র্জি) বিএন‌পি মহাস‌চিবকে (কারাবন্দি থাকতে চিকিৎসা নেওয়ার সময়) ভুল সা‌র্টি‌ফি‌কেট দি‌য়ে‌ছি‌লেন। আ‌পিল ডি‌ভিশন প‌রে তাকে বাদ দি‌য়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগী‌রের জন্য নতুন মে‌ডিকেল বোর্ড গঠ‌নের নি‌র্দেশ দি‌য়ে‌ছি‌লেন। তাছাড়া সাবেক প্রধান বিচারপ‌তি এস কে সিনহা‌কে অসুস্থ বানা‌নোর জন্য যে চি‌কিৎস‌কের নাম বলা হয়, সে ডাক্তার তো ভদ্র‌লোক। তারপর শ‌র্তে বলা ছিল, ড্যাব বা স্বা‌চি‌পের মেম্বার হ‌বে না। বো‌র্ডে তিনজন আ‌ছেন স্বা‌চি‌পের আজীবন সদস্য। তাহ‌লে কো‌র্টের যে নি‌র্দেশনা, কী এখা‌নে বাস্তবায়ন হ‌লো?

বিশেষায়িত হাসপাতালে খালেদার চিকিৎসার দাবি পুনরায় তুলে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, প্রত্যেকটা বিভাগেই অত্যন্ত প্রফেশনাল চিকিৎসক আছেন, তাদেরকে নিয়ে মেডিকেল বোর্ড কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী যদি করা হত, তাহলে তাহলে আদালতের রায়ের প্রতিফলন ঘটত।

নিজে চিকিৎসক হিসেবে জাহিদ বলেন, তবে কে স্বাচিপের কিংবা কে ড্যাবের, সেটা নয়; সবার পরিচয় হওয়া উচিৎ চিকিৎসক। আদালতের নির্দেশনা মেনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উনাকে যেন যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং সম্মানের সঙ্গে যেন তা দেওয়া হয়।

কালের আলো/এনএল