মহাসড়কে নান্দনিক দৃশ্য, রাঙিয়ে দিচ্ছে যাত্রীদের যাত্রা!

প্রকাশিতঃ 3:45 pm | July 26, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলোঃ

প্রকৃতিতে বিরাজ করছে বর্ষাকাল, তবুও তাপদাহের দাপট। আষাঢ়—শ্রাবণ মাসেও খালে-নদীতে পানির কমতি। তবে ‘কালে-ভদ্রে’ আসা বৃষ্টির ঝাপটায় সতেজ হয়ে উঠেছে গাছপালা।

আর এই সতেজ গাছে ফোটা রং-বেরঙের ফুল যেন প্রতিনিয়ত ‘ঝড়ে’র গতিতে চলে যাওয়া যানবাহনের যাত্রীদের যাত্রাকে আরও রাঙিয়ে দিয়েছে।

সম্প্রতি ওই সড়কে ভ্রমণকালে দেখা যায়,  ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেন মহাসড়কের দুই পাশে এবং রাস্তার মাঝে বিভাজনে লাগানো হয়েছে জারুল গাছ।

‘বাংলার চেরি’ ফুল খ্যাত মায়াবি জারুলের ফুলে এক নান্দনিক রূপ নিয়েছে মহাসড়ক। যা পথিক তথা যাত্রীদের মুগ্ধ করেছে। শ্রাবণের আকাশে সবুজাভ আকাশ, কখনও মেঘের উড়াউড়ি আর ভূমিতে বেগুনি রঙের জারুল ফুল যেন আলাদা মায়াজাল সৃষ্টি করেছে মানসপটে। যেন তপ্ত দুপুরে মগ ডালে বসে আকাশের সঙ্গে গড়েছে এক ভালোলাগার সখ্য।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে নিয়মিত যাতায়াত করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম কালের আলোকে বলেন, প্রতিমাসেই বাড়ি যাই। রাস্তার মাঝে সড়ক দ্বীপে গাছগুলো দেখেছি আগেও, কিন্তু এবার ঈদে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় যাওয়ার সময় আবিষ্কার করলাম গাছে বেগুনি ফুল ফুটে আছে। গাড়িতে যাওয়ার সময় কী যে সুন্দর লাগে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।

এদিকে অতিমারী করোনাবাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এই ধারাবাহিক লকডাউনে মহাসড়কে যানবাহন চলছে সীমিত। এই সুযোগে ছয় পাঁপড়ির মাঝে হলুদ রংয়ের পরাগে মায়াবী জারুল ফুলের ছোঁয়ায় প্রকৃতি সেজেছে তার আপন মহিমায়।

পিচঢালা কালো মহাসড়কের মাঝে মন মাতানো সবুজে তপ্ত এক উদাসী দুপুরেও জারুল ফুলের আভায় সড়কে লেগেছে নৈস্বর্গিক ছোঁয়া।

মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের সড়ক দ্বীপ ও পাশে লাগানো হয়েছে জারুল। মহাসড়কের মাঝে জারুলের নয়নাভিরাম দৃষ্টি নন্দন রঙ ও রূপ যেন বুলিয়ে দিচ্ছে ভালোবাসার পরশ। যানবাহনের যাতায়াতে বাতাসের দোলায় মন ভরিয়ে দিচ্ছে চালক, যাত্রী ও পথচারীদের।

অধিকাংশ জারুল গাছ প্রাকৃতিক ভাবেই বেড়ে উঠে। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে রূপান্তরের পাশাপাশি সড়ক বিভাজনের মাঝে ফলজ, বনজ, ওষুধি গাছের পাশাপাশি রোপণ করা হয়েছে নানা প্রজাতির ফুলগাছ। কিন্তু সৌন্দর্য বিলাতে ফুল গাছের চেয়ে পিছিয়ে নেই জারুলও। ওই বনজ গাছে ফোটা ফুলের শোভায় মহাসড়কে যোগ হয়েছে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য।

মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া বাস স্টেশন থেকে কুটুম্বপুর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শতশত জারুল গাছে ফুটে আছে রাশি রাশি ফুল।

বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রী থেকে শুরু করে পথচারীরা জারুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আচমকা থমকে দাঁড়াতে দেখা গেছে। শত ব্যস্ততার মাঝেও জারুল ফুলের সাথে ফ্রেম বন্দি কিংবা খানিক সময় কাটিয়ে সুখানুভূতি প্রাপ্তির যেন তাদের অসামান্য প্রয়াস।

চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জের বাসিন্দা আব্দুল আলিম ডাকায় বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করেন। গত ২২ জুলাই ঈদের পর ব্যক্তিগত গাড়িতে সপরিবারে ঢাকায় ফিরলেন।

গুলশানের অফিসে বসে সড়কে সৌন্দর্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই সড়কে যারা নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন তারা অনেক সময় জ্যামের কারণে বিরক্ত থাকেন। তবে ফুলের সৌরভ আর সৌন্দর্যে সেই বিরক্ত এখন থাকে না। অনেকে গাড়ি থামিয়ে সেলফি কিংবা ছবি তোলায় ব্যস্ত হশে যান।

তথ্য অনুযায়ী, জারুলের ইংরেজি নাম প্রাইড অব ইন্ডিয়া এবং বৈজ্ঞানিক নাম লেজারস্ট্রমিয়া স্পেসিওজা। বৈজ্ঞানিক নামটির প্রথম অংশ এসেছে সুইডেনের অন্যতম তরু অনুরাগী লেটারস্ট্রমের নাম থেকে। শেষাংষটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ স্পেসিওজা। যার বাংলা সুন্দর।

জারুল ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব বৃক্ষ। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, চীন মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে জারুলের সন্ধান মেলে।

পাতা ঝড়া এই বৃক্ষ শীতকালে পত্র শূন্য থাকে। বসন্তে নতুন গাঢ় সবুজ পাতা গজায়। গ্রীষ্মে ফুটে অসম্ভব সুন্দর থোকায় থোকায় ফুল। দূর থেকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জারুল।

২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে এই জারুল গাছ। রয়েছে তার নানা প্রকার ভেষজগুণও। এরপরও জারুল গাছ রোপণে আগ্রহ নেই অধিকাংশ মানুষের। প্রাকৃতিকভাবে বাড়ির পাশে জারুল গাছ বেড়ে উঠলে তা রাখতেও চায় না অনেকে। তাই জারুল অবহেলিত বৃক্ষও বটে।

এ ব্যাপারে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মেহেরুন নেছা বলেন, জারুলকে ‘বাংলার চেরি’ বলা হয়। গাঢ় সবুজ পাতার উপরে বেগুনি রঙয়ের পাঁপড়িতে ফোটা জারুল ফুল গ্রীষ্ম থেকে শরৎ পর্যন্ত থাকে।

‘জারুলের ভেষজ গুণও রয়েছে। জ্বর, অনিদ্রা, কাশি ও অজীর্ণতায় জারুল খুবই উপকারী। বাতের ব্যাথায় জারুল গাছের পাতা বেটে প্রলেপ দেয়া হয়। শিকড় সিদ্ধ করা পানি মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কাশি ভালো হয়। ডায়বেটিস রোগেও এর বীজ, ছাল ও পাতা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।’

তাই প্রকৃতিকে সুন্দরভাবে সাজাতে এবং ভেষজ ওষুধ হিসেবে জারুল গাছ রোপণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

কালের আলো/বিএস/এএওএম