‘শিশুসুলভ’ রাজনীতির পর লজ্জা ভেঙে টিকা নিলেন খালেদা-ফখরুল-রিজভীরা!

প্রকাশিতঃ 5:17 pm | July 26, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো :

সেই শুরু থেকেই ইচ্ছামতো নানা কথা বলছিলেন বিএনপির মির্জা ফখরুল-রিজভীরা। করোনার টিকার মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। চালিয়ে যাচ্ছিলেন দেদারছে অপপ্রচার। সাধারণ মানুষকে টিকা গ্রহণে প্রণোদিত করে মৃত্যুছোবল থেকে রক্ষার ব্যবস্থা না করে উল্টো তারা নিয়েছিলেন ‘মার্চেন্ট অব ডেথ’ এর ভূমিকা।

কিন্তু তাদের কথায় কান দেয়নি দেশের মানুষ। এমনকি তাদের এই ‘শিশুসুলভ’ অপরাজনীতি নিয়েই ক্ষোভ-অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল জনমনে। আবার ভেতরে ভেতরে নিজেরাও করোনার টিকা প্রত্যাখ্যান করে অস্থির সময় কাটাচ্ছিলেন।

কিন্তু সরকারের সবার জন্য সুরক্ষা নীতির আওতায় অবশেষে লজ্জা ভেঙে একে একে করোনার টিকা নিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে মহাসচিব মির্জা ফখরুলও।

সবশেষ বেশ ঘটা করেই টিকা নিয়েছেন ‘বাঁচাল’ হিসেবে পরিচিত বিএনপি নেতা রিজভী। সোমবার (২৬ জুলাই) বেলা পৌনে একটার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকাদান কেন্দ্রে মডার্নার টিকা গ্রহণ করেন রিজভী।

এসবের ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই টিপ্পনি কেটে বিএনপি নেতাদের উদ্দ্যেশ্যে বলছেন, সেই যখন এলি তবে কেন লোক হাসালি?

জানা যায়, দেশে করোনার টিকা আসার পর থেকে নানা কথাবার্তা বলে আসছিলেন বিএনপি নেতারা। আবার কেউ প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আগে টিকা নেয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বাঁচলে বা মরলেও টিকা শরীরে প্রবেশ করাবেন না বলে প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছিলেন।

গত ১৫ মার্চ নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এমনটা বললেও শেষ পর্যন্ত নিজের ঘোষণায় অটল থাকতে পারলেন না তিনি। সেদিন রিজভী বলেছিলেন, ‘আমাকে অনেক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছেন আপনি টিকা নেবেন কিনা? আমি বলেছি, ন্যায়সঙ্গতভাবে আমি যে টিকার বিরোধিতা করেছি, বাঁচি আর মরি ওই টিকা আমার শরীরে প্রবেশ করতে দেবো না। আমি আমার কথা রেখেছি।’

সেসময় কেন টিকার বিরোধিতা করছেন তারও ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন রিজভী। তার দাবি ছিল, ‘করোনা টিকার ব্যাপারে আমরা এমনি এমনি বিরোধিতা করিনি। আন্তর্জাতিক নিউজ এজেন্সি রয়টার্স বলেছে, বাংলাদেশে যে টিকা পাঠাচ্ছে, ভারত সেটি ট্রায়াল করার জন্য পাঠাচ্ছে। অর্থাৎ আমরা গবেষণাগারে যেভাবে তেলাপোকা, ব্যাঙ কেটে ইন্টারনাল এনাটমি জানতাম; ঠিক তেমনই আমাদের ল্যাবরেটরির ব্যাঙ হিসেবে গণ্য করছে ভারতের নীতিনির্ধারকরা। আর এ কারণেই তারা এখানে পরীক্ষামূলকভাবে এই টিকা পাঠিয়েছে।’

টিকা নেয়ার পর চার মাসেরও বেশি আগের ঘোষণার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে রিজভী বলেন, ভারতে উৎপাদিত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেব না বলে কথা দিয়েছিলাম। আমি সেই কথা রেখেছি। ভারতের উৎপাদিত টিকা আমি নেইনি। নিয়েছি আমেরিকার তৈরি মডার্নার টিকা।

এর আগে গত ৮ জুলাই ‘সুরক্ষা’ অ্যাপসের মাধ্যমে করোনার টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর ১১ দিনের মাথায় গত সোমবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে গিয়ে করোনার টিকা নেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ওইদিন তিনি ছাড়াও তার বাসভবনের আরও পাঁচজন করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়েছেন। খালেদার দ্বিতীয় টিকার ডোজের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ১৯ আগস্ট।

বিএনপির হেভিওয়েটদের মধ্যে প্রথম করোনার টিকা নেন নোয়াখালী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। গত ০৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ নেন তিনি।

এরপর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সস্ত্রীক করোনার টিকা নিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ওইদিন দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালে তার স্ত্রী তাহেরা আলমও করোনার টিকা গ্রহণ করেন।

সূত্র মতে, সারা দেশে কর্মসূচি শুরুর পর পরই টিকা নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও তার স্ত্রী, সিনিয়র নেতা নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান।

চলতি বছরের ০৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচির শুরুর দিনেই টিকা নেন বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএসইউ) ভ্যাকসিন সেন্টারে করোনার টিকা নিয়েছিলেন এই চিকিৎসক।

বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা ভ্যাকসিনকে রাজনৈতিক ইস্যু করতে চেয়েও পুরোপুরি বিফল হয়েছে বিএনপি। তাদের এই নেতিবাচক রাজনীতিকে ভালভাবে গ্রহণ করেনি দেশের মানুষ। দলটির সব পর্যায়ের শীর্ষ নেতারাই এখন ‘নাকে খত’ দিয়ে ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। এটি তাদের আরেকটি রাজনৈতিক পরাজয়।

কালের আলো/জিকেএম/এমএএএমকে