৫০ বছর আগের অমলিন স্মৃতি, জন্মের পর জয়কে দেখেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 7:55 pm | July 27, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
চরম বৈরী সময়। চারদিকে যুদ্ধের দামামা। এই কঠিন এক ঝঞ্জারমুখর সময়ে পৃথিবীতে জন্ম নিলেন এক মানব শিশু, যিনি আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশের স্থপতি। তারুণ্যের অহংকার। তিনি সজীব ওয়াজেদ জয়।
আরও পড়ুন: আপন আলোয় উদ্ভাসিত প্রযুক্তি বিপ্লবের অগ্রনায়ক
মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোর মাঝে জুলাইয়ের ২৭ তারিখে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। কঠিন এই সময়ে মা শেখ হাসিনার পাশে কোনো স্বজন নেই।
এমনকি মা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবকেও পাশে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পাক বাহিনীর বাঁধার মুখে যেন হাসপাতালের বিছানাতেও একাই লড়াই চালিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। অতঃপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দেশের পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার ঘর আলো করে জন্মগ্রহণ করলেন আজকের এক মধ্যবয়সী টেক উদ্যোক্তা।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল বাংলাদেশের নেপথ্য নায়কের জন্মদিন, মন্ত্রী-নেতাদের শুভেচ্ছা
সময়টি সবারই জানা। জন্মের পর কোন একদিন সেদিনের নবজাতক সজীব ওয়াজেদ জয়কে দেখতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
নিজের গাইনি চিকিৎসক বোন ডা. শাহলা খাতুনের মাধ্যমেই আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর জ্যেষ্ঠ সন্তানের খোঁজ খবর নিতে পেরেছিলেন তিনি। ৫০ বছর পরও সেই স্মৃতি বর্ণিল এক ক্যানভাস হয়ে উঠে এসেছে এই মন্ত্রীর কণ্ঠে।
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) দেশের জনপ্রিয় অনলাইন গণমাধ্যম কালের আলো’র সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন স্মৃতির পাতা উল্টে রোমন্থন করেছেন স্বর্ণালী সেই স্মৃতি। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের সফল রূপকার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ঘটে যাওয়া বিপ্লবের স্থপতি সজীব ওয়াজেদ জয়কে। মঙ্গল কামনা করেছেন তাঁর পরিবারের প্রতিটি সদস্যের।
প্রসঙ্গত, ড. মোমেনের বাবা অ্যাডভোকেট আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ছিলেন একজন বলিষ্ঠ আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ। তাঁর মমতাময়ী মা সৈয়দা শাহার বানু ছিলেন আসাম মহিলা মুসলিম লীগের সভাপতি। ছিলেন ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এবং সিলেটে নারী জাগরণের অগ্রদূত।
সেদিনের ছোট্ট সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে ৫০ বছর আগের পুরনো দিনের ভাঁজে লুকিয়ে থাকা স্মৃতির কথা পররাষ্ট্রমন্ত্রী তুলে ধরেন এভাবে- ‘আমার এখনও মনে আছে ১৯৭১ সালে তাঁর (সজীব ওয়াজেদ জয়) জন্মের পরপরই আমি তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সিলেটে আমাদের বাড়িতে তৎকালীন ইপিআর সদস্যদের একটি দল আশ্রয় নেয়। ‘
”একাত্তরের ৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী মর্টার সেল নিক্ষেপ করে বাড়িটি ধ্বংস করে দেয়। এতে আমার বাবা আহত হন। তিনি তখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মূলত সেদিনই আমাদের বাড়ি থেকে সিলেট শহরে প্রথম ‘মুক্তিযুদ্ধ’ শুরু হয়েছিল।’’
অমলিন সেই স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলতে থাকেন, ‘আমি বাবাকে দেখতে ভারত থেকে দেশে এসেছিলাম। আমার বাবা এবং জয়ের মা, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একই কেবিনে ভর্তি ছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর নিরাপত্তারক্ষী ও দু’জন মিলেশিয়া তখন শেখ হাসিনাকে পাহারা দিত।
তাই কাউকে তাঁর কেবিনের ভেতরে যেতে দেওয়া হয়নি। যাই হোক, একদিন আমি আমার বড় বোন ডা. শাহলা খাতুনের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলাম। আমার এই বোন ছিলেন একজন গাইনি চিকিৎসক। তিনি কেবিনে ভর্তি মা ও নবজাতকের সেবা ও তাদের দেখভাল করতেন। সেই সুবাধেই সেদিন জয়কে আমার দেখার সুযোগ হয়েছিল।’
একাত্তরের ডায়েরিতে ৩০ জুলাই, শুক্রবার ১৯৭১, বেগম সুফিয়া কামাল লিখেছেন এভাবে- ‘বিকালে বৌমা আমি হাসিনার ছেলে দেখতে হাসপাতালে গেলাম। কি ভীষণ দুর্ব্যবহার যে করল ওখানকার মিলিটারি পাহারাদারটা। হাসিনার মা মাত্র ১০ মিনিটের জন্য গতকাল ওদের দেখতে পেয়েছিলেন। আজ হতে কড়া নিয়ম চালু করা হল, কোন মানুষই আর ওদের দেখতে যেতে পারবে না। এ যে কি অমানুষিক ব্যবহার। জেলখানার কয়েদীও সাক্ষাতের জন্য সময় পায়। আল্লাহ আর কত যে দেখাবে।’
কালের আলো/এমএএএমকে