পাইপলাইনে ঢাকায় আসবে জ্বালানি তেল

প্রকাশিতঃ 2:18 pm | October 09, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনা হবে জ্বালানি তেল। সহজ, সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্নভাবে জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্যই এই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামের এই পাইলাইন কুমিল্লা ও চাঁদপুরেও যাবে। এতে করে সিস্টেম লস কমানো সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ জন্য দুই হাজার ৮৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন পরিবহনের জন্যই প্রথমবারের মতো এমন উদ্যোগে বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। ট্যাংকারের মাধ্যমে জ্বালানি পরিবহনের পরিবর্তে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য প্রকল্পটি নেয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা চিন্তা করে আধুনিক পদ্ধতিতে দ্রুততার সঙ্গে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা, পরিবহন সময় ও পরিবহন ঘাটতি কমাতে পাইপলাইন বেশ কার্যকর হবে।

বর্তমান ব্যবস্থায় দেশের সব অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল পরিবহনে সরকারকে বড় অংকের খরচ এবং পরিবহন ঘাটতি বহন করতে হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ও চাঁদপুরে জ্বালানি তেল সহজ, সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্ন পরিবহনের জন্য এমন উদ্যোগ।

প্রকল্পের আওতায়, চট্টগ্রাম হতে গোদনাইল পর্যন্ত ২৩৭ দশমিক ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৬ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট পাইপলাইন, গোদনাইল হতে ফতুল্লা পর্যন্ত ৮ দশমিক ২৯ কিলোমিটার ১০ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট এবং কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৫৯ দশমিক ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট ভূগর্ভস্থ পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম পণ্যের বর্তমান বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৫৮ লাখ টন। দেশে বিদ্যমান গ্যাস সংকটের ফলে পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। ২০২১ সালের পর দেশের পুরাতন বিভিন্ন গ্যাস ফিল্ড থেকে গ্যাস উত্তোলন কমতে থাকবে। দেশে আর কোন নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত না হলে পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

ঢাকা এবং আশপাশের এলাকায় জ্বালানি তেলের বর্তমান চাহিদা প্রায় ১৫ লাখ টন। যা ঢাকায় অবস্থিত গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোগুলোর মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। চাঁদপুরে অবস্থিত তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর তিনটি ডিপোতে জ্বালানি তেলের বর্তমান চাহিদা প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। চট্টগ্রামস্থ প্রধান স্থাপনা থেকে কোস্টাল ট্যাংকারযোগে বর্তমানে গোদনাইল, ফতুল্লা ও চাঁদপুরে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়, যা প্রস্তাবিত পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিবহন করা হবে।

এছাড়া ঢাকায় অবস্থিত বিপণন কোম্পানিগুলোর গোদনাইল ফতুল্লা ডিপো হতে শ্যালো ড্রাফট ট্যাংকারযোগে উত্তরবঙ্গে অবস্থিত বাঘাবাড়ি, চিলমারী ও সাচনা বাজার ডিপোতে জ্বালানি তেল পাঠানো যায়। এই ডিপোগুলোর বর্তমান বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৪ লাখ ১৮ হাজার টন। বিদ্যমান পরিবহন ব্যবস্থায় ট্যাংকার যোগে এ বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল যথাসময়ে চট্টগ্রাম থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পরিবহনে সরকারকে বিপুল পরিবহন খরচ এবং পরিবহন ঘাটতি বহন করতে হবে। পাশাপাশি নদী পথে ট্যাংকারযোগে জ্বালানি তেল পরিবহনে পরিবেশগত প্রভাবও রয়েছে।

এছাড়া বর্তমানে জলপথে প্রায় ৯০ শতাংশ জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয় এবং এই বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর পরিবহনে বছরে প্রায় ২০০টি কোস্টাল ট্যাংকার নিয়োজিত রয়েছে। ভবিষ্যতে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে কোস্টাল ট্যাংকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, যা চট্টগ্রামস্থ প্রধান স্থাপনায় বিদ্যমান লোডিং আনলোডিং এবং চাঁদপুর, গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে লোডিং আনলোডিং অবকাঠামো দ্বারা পরিচালন কার্যক্রম গ্রহণ করা দুরূহ হয়ে পড়বে।

অন্যদিকে দিন দিন নদীগুলোর নব্যতা কমে যাচ্ছে তাই কোস্টাল ট্যাংকার চলাচলে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত তেল পরিবহন সম্ভব হবে না।
ভবিষ্যত চাহিদার কথা বিবেচনা করে আধুনিক পদ্ধতিতে দ্রুততার সঙ্গে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা, পরিবহন সময় ও পরিবহন ঘাটতি কমের জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত পাইপলাইন স্থাপনের জন্য প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে।

পাইপলাইনের মাধ্যমে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য পরিবহণ সহজতর, নির্বিঘ্ন, সময় সাশ্রয়ী, কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং পরিবেশবান্ধব হবে। এতে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশেও জ্বালানি তেল সরবরাহ সম্ভব হবে। সার্বিকভাবে দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস একনেকের জন্য তৈরি করা প্রকল্প সার-সংক্ষেপে মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত পাইপলাইনের মাধ্যমে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য পরিবহন সহজতর, নির্বিঘ্ন, সময় সাশ্রয়ী, কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং পরিবেশবান্ধব হবে এবং এর ফলে সাশ্রয়ী মূল্যে ও স্বল্প সময়ে জ্বালানি তেল পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সাধিত হবে।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম গুলো হচ্ছে-ডিটেইলড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন অ্যান্ড ড্রইং অব আন্ডারগ্রাউন্ড পেট্রোলিয়াম অয়েল পাইপলাইন ফ্রম চট্টগ্রাম টু ঢাকা। বহির্বিভাগে থ্রি এলপিই কোটেড পাইপলাইন চারটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প, ভাল্ব, স্ট্যাটিক ইক্যুপমেন্ট, রোটেটিং ইক্যুপমেন্ট ক্রয়। চট্টগ্রাম থেকে গোদনাইল পর্যন্ত ২৩৭ দশমিক ৭১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৬ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট, গোদনাইল হতে ফতুল্লা পর্যন্ত ৮ দশমিক ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ১০ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট এবং কুমিল্লা হতে চাঁদপুর পর্যন্ত ৫৯ দশমিক ২৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট ভূগর্ভস্থ পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন স্থাপন। কুমিল্লায় একটি ইন্টারমিডিয়েট পিগিং স্টেশন স্থাপন। ক্যাথোডিক প্রোটেকশন ইলেক্ট্রিক্যাল সংক্রান্ত মালামাল ক্রয়। পাইপলাইন স্থাপনের জন্য এইচডিডি পদ্ধতিতে ২২টি নদী এবং কেইজড ক্রসিং পদ্ধতিতে ৪৬টি রাস্তা ও ১১টি রেল ক্রসিং নির্মাণ। কম বেশি ৩০টি করিয়োলিস মাস ফ্লো-মিটার এবং সেকশনালাইজিং ভাল্ব ক্রয় ও পাঁচটি সেকশনালাইজিং ভাল্ব স্টেশন নির্মাণ। ট্রান্সফরমার ও পাওয়ার ক্যাবল ক্রয় এবং পাইপলাইন স্থাপন, টেস্টিং ও কমিশনিং কাজ সম্পন্নকরণ করা হবে।

কালের আলো/ওএইচ