শিশু সন্তানকে ফিরে পেতে হতভাগ্য মায়ের আকুতি
প্রকাশিতঃ 7:04 pm | August 07, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
এক মাসের শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে আরেক সন্তানকে এক নজর দেখার জন্য তপ্ত রোদে রাজপথে ঠায় দাঁড়িয়ে মা। নাড়ি ছেঁড়া ধনকে গত আড়াই মাস ধরে একবার চোখের দেখা দেখতে পারেননি হতভাগ্য মা।
অভিযোগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ.এফ হাসান আরিফের ছেলের বউ মাধবী আক্তার নীলার কাছ থেকে তার বড় সন্তান শিশু মাইরিনকে আলাদা করে রেখেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এমনকি শিশুটিকে দেখার অনুমতিও পাচ্ছিলেন না মা।
এমতাবস্থায় ১২ দিনের আরেক শিশু সন্তান জারাকে নিয়ে দারস্ত হন আদালতের। মায়ের আকুতিতে সারা দিয়ে সপ্তাহে ২ দিন শিশু মাইরিনকে তার মায়ের সঙ্গে দেখানোর নির্দেশ দেন আদালত। তারপরও দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী এ মায়ের।
শুক্রবার (০৭ আগস্ট) এই মা আবারও হাজির হন শশুর বাড়ির সামনে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকার পরও সন্তানকে দেখতে না পেয়ে যান পুলিশের কাছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ জানায় আদালতে নির্দেশ প্রতিপালনের ব্যবস্থা করবেন তারা।
ভুক্তভোগী মায়ের অভিযোগ বিয়ের পর থেকেই শশুর বাড়ির লোকজন তার উপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। এমনকি গর্ভ অবস্থায় দ্বিতীয় সন্তান জোর পূর্বক গর্ভপাত করানোর অভিযগো আনেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফের পরিবারের বিরুদ্ধে।
গত ২০ জুন নির্যাতন ভ্রুণ হত্যা ও দুই বছরের সন্তানকে আটকে রাখার অভিযোগে স্বামী মুয়াজ আরিফের বিরুদ্ধে মামলা করেন মাধবী আক্তার নীলা। অন্য দিকে স্বামীকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে শশুরও মামলা করেন তার বিরুদ্ধে। এই মামলাতে জেল খেটেছেন মাধবী আক্তার নীলা।
ভুক্তভোগী মাধবী বলেন, আড়াই মাস হয়ে গেছে আমি আমার বাচ্ছাটাকে দেখতে পারছি না। আমি বাচ্চাটাকে শুধু দেখতে চাচ্ছি আমি তো আর কিছু চাচ্ছি না। আমি বুজতেছি না কি করা উচিৎ, কার কাছে যাওয়া উচিৎ। এতটুকু ক্ষমতা মানুষের কি করে হয় শিশু বাচ্ছাকে আটকিয়ে রাখবে। মাকে দেখতে দিবে না, ফোনে কথা বলতে দিবে না। এগুলো কেন? আমি কি চাচ্ছি, আমি কি টাকা পয়সা চাইতেছি? আমি কি চাচ্ছি, আমার চাওয়াটা কি? আমার বাচ্চা আমি দেখতে চাচ্ছি। আমার পেটের বাচ্চা আমার নিজের বাচ্চা আমি দেখতে চাচ্ছি। আমাকে দেখতে দিবে না এটা কেমন কথা। কোট পারমিশন দিয়েছে তারা কোর্টের পারমিশনকেও মানতেছে না। এতটা ক্ষমতা মানুষের।
‘আমি কোর্টের পারমিশন নিয়ে বাচ্চাকে দেখতে আসি, ঈদের আগেও আসছিলাম, ঈদের দিনও আসছিলাম দুপুর ১২টা থেকে একদম সন্ধে পর্যন্ত ছিলাম আমার এই ছোট বাচ্চাটাকে নিয়ে। কিন্তু ওরা আমার বাচ্চাটাকে দেখতে দেয়নাই। ওরা বলছে আমি নাকি কোর্টকে বিভ্রান্ত করে পারমিশন নিয়ে আসছি। ওরা আমাকে বাচ্চা দেখতে দিবে না। ওরা আমাকে ড্রাইভার, কাজের ছেলে এদেরকে দিয়ে খুব হেনস্তা করে পরে আমি সন্ধায় চলে গেছি।
এই নারী আরও বলেন, আমি বুঝতেছিনা, আমরা তো মরে যাওয়া উচিত। আমিতো আত্মহত্যা করতে চাচ্ছি। কি করবো বলেন তো। আমার বাচ্চা, আমার পেটের বাচ্চা আমাকে দেখতে দিবে না। এটা কোন দেশের কথা, এটা কি ধরণের কথা। এই বাচ্চাটার বয়স হচ্ছে এক মাস। এক মাস ধরে এই বাচ্চাটা ঘরের বাহিরে এখন পর্যন্তও ভেতরে ঢুকতে পাচ্ছে না। আবার আমার দুই বছরের বাচ্চা ও ঘরের ভিতরে ওকে ঘর থেকে বের করছেনা। ওরা যদি বাচ্চাকেই ভালোবাসতো, বাচ্চার জন্যই যদি সমস্ত কিছু হইতো তাহলে তো সব বাচ্চাকেই ইক্যুয়াল হাওয়ার উচিত। দুইটা বাচ্চাকে ওরা ভালবাসবে তাই না। এই বাচ্চাকে রাস্তায় ফেলে দিবে ওই বাচ্চাকে ঘরে আটকে রাখবে এটা কেন? যাস্ট এটা শুরু করতেছে হাসান আরিফ সাহেব ক্ষমতায় নাই, সে বুঝাতে চাচ্ছে আমি ক্ষমতায় নাই আমার দল ক্ষমতায় নাই তাতে কি হয়েছে আমার পাওয়ার এখনোও আছে। এটা এস্টাবলিস করতে চাচ্ছে।
এ বিষয়ে ধানমণ্ডি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, ভদ্র মহিলা আসছেন উনার বাচ্চা দেখার জন্য। বিজ্ঞ আদালত যে নির্দেশনা আছে শুক্র ও শনিবার অথবা ঈদুল আজাহার দিনে দেখা করতে পারবেন, তিনটা থেকে পাঁচটার মধ্যে। আমাদের যেভাবে ডিরেকশন দিয়েছে আমাদের সেই ভাবে প্রতিপালন করতে হবে।
কালের আলো/ডিএসকে/এমএম