বঙ্গমাতার দূরদর্শী সিদ্ধান্তই খুলে দেয় স্বাধীনতার পথ

প্রকাশিতঃ 6:58 am | August 08, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো :

মহিয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের দূরদর্শী একটি সিদ্ধান্তই খুলে দেয় স্বাধীনতার পথ। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু যখন কারান্তরীণ তখনই নানাজনের নানান মতকে আমলে না নিয়ে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা বঙ্গমাতা গ্রহণ করেছিলেন বিচক্ষণ এক সিদ্ধান্ত।

আরও পড়ুনঃ রেণু থেকে বঙ্গমাতা

বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে সরাসরি ‘না’ করে দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের তৎকালীন অনেক নেতা সেদিন এ সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু অনড় ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সার্বক্ষণিক এই ছায়াসঙ্গী। প্যারোলে মুক্তি নিয়ে পাক সামরিক বাহিনী সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে নিষেধ করেই তিনি সেদিন খুলে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার দূয়ার।

আরও পড়ুনঃ শেখ হাসিনার চোখে ‘আসল গেরিলা’ বঙ্গমাতা

৫ বছর আগে বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এমন তথ্যই জানিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা’র জ্যেষ্ঠ সন্তান হ্যাট্টিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আবেগ আপ্লুত কন্ঠে স্মৃতিচারণ করে সরকারপ্রধান বলেছিলেন, ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে ক্যান্টনমেন্টে ধরে নিয়ে যায় পাক সামরিক সরকার। ছয় মাস পর্যন্ত তাঁর কোন হদিস ছিল না, আমরা জানতেও পারিনি তিনি বেঁচে আছেন কি না।

এরপরে কোর্টেই বঙ্গবন্ধুকে প্রথম দেখার সুযোগ হয়। তখন পাকিস্তান সরকার আম্মাকে ভয় দেখান, বঙ্গবন্ধু প্যারোলে মুক্তি না নিলে তিনি বিধবা হবেন। আম্মা সোজা বলে দিলেন, কোন প্যারোলে মুক্তি হবে না। নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে কোন মুক্তি হবে না।’

আরও পড়ুনঃ অমূল্য সেই দলিলের রূপকার বঙ্গমাতাই

শেখ হাসিনা সেদিন আরও বলেন, ‘আমি মায়ের সিদ্ধান্তের কথা কোর্টে যখন বঙ্গবন্ধুকে জানালাম, তখন অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকেও দেখেছি তারা বলেছেন, তুমি কেমন মেয়ে? বাবার মুক্তি চাওনা? আম্মাকে বলেছে-‘ভাবি আপনি কিন্তু বিধবা হবেন’। আমার মা তখন কঠিন স্বরেই বলেছেন, ‘প্যারোলে মুক্তি নিলে মামলার আর ৩৩ জন আসামীর কি হবে? বঙ্গবন্ধু প্যারোলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। গণঅভ্যুত্থানে পাকিস্তান সরকার আব্বাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়’।

২০২০ সালে বঙ্গমাতার ৯০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই বিষয়ে বলেছিলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানে গোলটেবিল আলোচনায় যোগ দেয়ার জন্য প্যারোলে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির প্রস্তাব দেয়া হলে জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তা প্রত্যাখ্যান করে তিনি (বঙ্গমাতা) সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সঠিক ও সময়োচিত সিদ্ধান্ত আইয়ুব খানকে (আগরতলা ষড়যন্ত্র) মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছিল এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের পথও বদলে দিয়েছিল।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘তিনি (বঙ্গমাতা) দলকে যোগ্যতার সাথে পরিচালনা করতেন (বিশেষত বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকাকালীন) এবং সঠিক সিদ্ধান্ত দিতেন।’

কালের আলো/এমএএএমকে