প্রথম দিনেই ২৬০৫ কোটি টাকা তুলে নিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রকাশিতঃ 12:35 pm | August 10, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

বাজার থেকে অতিরিক্ত তারল্য তুলে নেওয়ার অকশনে (নিলাম) ভালোই সাড়া দিয়েছে ব্যাংকগুলো। প্রথম দিন প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার বেশি বিড দাখিল হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক দুই হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বিড অনুমোদন করেছে। ১ শতাংশেরও কম সুদে এই টাকা খাটিয়েছে ব্যাংকগুলো। এর মানে প্রথম দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ঢুকেছে দুই হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মুদ্রানীতি বাস্তবায়নে যত দিন ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের প্রয়োজন হয় তত দিন টাকা উত্তোলন করা হবে। তবে ঋণের জোগান বাড়াতে ব্যাংকগুলো যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টি খেয়াল রাখা হবে।

প্রায় দেড় বছর যাবৎ করোনায় ব্যবসাবাণিজ্যে অনেকটা স্থবিরতা নেমে আসে। বেশির ভাগ উদ্যোক্তা নতুন করে বিনিয়োগ বাড়াতে চাচ্ছেন না। তবে চলমান পরিস্থিতিতে অনেকের পক্ষে বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্য টিকে রাখাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। অনেক ব্যাংক ব্যবসায়ীদের চাহিদা মাফিক টাকা সরবরাহ না করে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মধ্যেই তাদের বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ করে ফেলে। শুধু প্রণোদনা কর্মসূচির কাজেই বেশির ভাগ ব্যাংক ব্যস্ত ছিল। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি অনুসারে বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। গত বছরের ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বাস্তবায়ন হয় মাত্র ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এতে বেশির ভাগ ব্যাংকে উদ্বৃত্ত তহবিল থেকে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, আমানতের বিপরীতে ৮৭ শতাংশ বিনিয়োগ অনুমোদন দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বেসরকারি ঋণ প্রবাহ তলানিতে নেমে যাওয়ায় জুন শেষে ঋণ আমানতের অনুপাত গড়ে ৭২ শতাংশে নেমে গেছে। এর মধ্যে কোনো কোনো ব্যাংকের ৫০ শতাংশেরও নিচে নেমেছে। ফলে ব্যাংকিং খাতে অলস অর্থসহ বিনিয়োগ্যযোগ্য উদ্বৃত্ত অর্থের পাহাড় জমে গেছে। জুন শেষে ব্যাংকগুলোর হাতে উদ্বৃত্ত অর্থ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি বাধ্যতামূলক নগদ জমার হার অর্থাৎ সিআরআর অতিরিক্ত অলস অর্থ রয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। এমনি পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে বাজার থেকে অতিরিক্ত অর্থ তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে গতকাল ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। আরেক দফা হবে আগামী ১১ আগস্ট ৩০ দিন মেয়াদি বিলের নিলাম।

জানা গেছে, বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সিআরআর হার কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। একই সাথে প্রণোদনার কর্মসূচি বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের আওতায় টাকার জোগান দেয়া হচ্ছে। একই সাথে রেমিট্যান্সের বিপরীতে বাজারে টাকা ছাড়া হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা উদ্বৃত্ত বৈদেশিক মুদ্রা কিনে নিয়ে গত এক বছরে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা বাজারে ছাড়া হয়েছে। এতে বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে গেছে। কিন্তু বিপরীতে করোনার কারণে চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, জুন শেষে ব্যাংকগুলোর হাতে এসএলআর অতিরিক্ত বিনিয়োগযোগ্য তহবিল রয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা। যদিও এর বেশিরভাগ অংশ সরকারের ঋণ দিয়ে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মধ্যে আটকে রয়েছে। এর বাইরে সিআরআর অতিরিক্ত অলস অর্থ রয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। বিনিয়োগযোগ্য বাড়তি তহবিলের কারণে আমানতের সুদহার তলানিতে নেমে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমানতের সুদহার ১ থেকে ২ শতাংশে নেমে গেছে। এতে এক দিকে আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অপর দিকে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার চাপ রয়েছে।

কালের আলো/এসবি/এমএম