‘চৌকস’সেনা প্রধান আজিজ আহমেদকে নিয়ে কেন ডা: জাফরুল্লাহ’র ‘মিথ্যাচার’?

প্রকাশিতঃ 10:54 am | October 11, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও সময়ের পালাবদলে নিজেকে বদলে ফেলেছেন। স্বাধীন চিন্তার মানুষ হিসেবে এক সময় পরিচিত এই মানুষটিকে এখন অনেকেই বলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা! কেউ বলেন আবার বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী।

২০১৬ সালের আগষ্টে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদাকে সাড়ে ৩ হাজার শব্দের চিঠি লিখে প্রথম বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আন্ডার গ্রাউন্ড ‘পলিসি মেকার’ এবং বিএনপি’র প্রভাবশালী ‘থিংক ট্যাংক’ হিসেবেও আলোচিত তিনি।

তবে মঙ্গলবার (০৯ অক্টোবর)বেসরকারি নিউজ চ্যানেল সময় টিভিতে ‘সম্পাদকীয়’ টকশোতে চৌকস সামরিক কর্মকর্তা, পেশাগত জীবনে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী’র প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে নিয়ে ‘মিথ্যাচার’ করে নতুন বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি।

তাঁর উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও অসত্য এমন বক্তব্য সেনাবাহিনীর মতো একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সংহতি ও একতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলেই মনে করছেন সেনা সদর দপ্তর। বুধবার (১০ অক্টোবর) রাতে একই টিভিতে ‘সম্পাদকীয়’ টকশোতে ডা: জাফরুল্লাহ’র বক্তব্যের প্রতিবাদে এমনটিই জানিয়েছে সেনা সদর।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ একদিনে তৈরি হননি। যোগ্যতা, মেধা-শ্রম-ঘামে তিলে তিলে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। বিজিবি ও সেনাবাহিনীর বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ইউনিটে নেতৃত্ব দেওয়া কমান্ড অভিজ্ঞতায় অনন্য নজির স্থাপন করেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় সেনা প্রধানের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হয়েছেন ‘ইলিশের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত চাঁদপুরে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি।

সময় টেলিভিশন এর টকশো’তে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

তাদের ভাষ্যে- রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহে বিডিআর শৃঙ্খলাহীন হয়ে পড়লে বাহিনীর পুনর্গঠন জরুরি হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সুনাম ফিরিয়ে এনে একটি আধুনিক ও সৃশৃঙ্খল সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে রূপ দিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন আজিজ আহমেদ। এই বাহিনীর তৃণমূলের সদস্যদের মাঝে এখনো রয়েছে তাঁর আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা।

অসাধারণ স্টাফ অভিজ্ঞতায় সেনাবাহিনীর সুনাম বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মদক্ষতা, দূরদর্শিতা, অসম সাহসকিতায় বাহিনীকে অন্য রকম এক উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন ঠিক তখনই নির্লজ্জ মিথ্যাচারের শিকার হয়েছেন এই সেনা প্রধান। তাকে উদ্দেশ্য করে অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করেছেন শান্তিতে ড.ইউনুসের নোবেল প্রাপ্তির পর প্রথম তাকে অভ্যর্থনা জানানো জাফরুল্লাহ।

মঙ্গলবার (০৯ অক্টোবর) রাত ১০ টায় বেসরকারি নিউজ চ্যানেল সময় টিভিতে প্রচারিত ‘সম্পাদকীয়’ টকশোতে ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘‘‘…..দেখেন আরজেএস গ্রেনেড, আমি জানি না সময়টি মিলে কি না- আমাদের বর্তমান চীফ অব আর্মি আজিজ সাহেব চট্টগ্রামের কমান্ড্যান্ট ছিলেন, জিওসি ছিলেন, কমান্ড্যান্ট ছিলেন।

তাঁর ওখান থেকে একটা ব্যাপক সংখ্যক সমরাস্ত্র, গোলাগুলি চুরি হয়ে গিয়েছিল, হারিয়ে গেছিল, বিক্রি হয়ে গেছিল এবং এজন্য একটা কোর্ট মার্শালও হয়েছিল, আজিজের নামে, জেনারেল আজিজের নামে কোর্ট মার্শালও হয়েছিল। আজকে উনি….., কিন্তু উনার কেন এসেছে, উনি হলেন ওভার অল, উনি নিশ্চয়ই এখনতো ওখান থেকে এবং আমরা আরো দেখছি মিরপুরে সম্প্রতি কয়েক বাক্স পুকুরের মধ্যে পাওয়া গেছে, এ সবগুলি আমাদের ব্যর্থতা……।’’

ডা: জাফরুল্লাহ’র এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানায় সেনা সদর দপ্তর। বুধবার (১০ অক্টোবর) রাতে সময় টিভিতে ‘সম্পাদকীয়’ টকশোতে সঞ্চালনার শুরুতেই মোরশেদুল ইসলাম এই ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করেন এবং সেনা সদর দপ্তরের লিখিত প্রতিবাদ পড়ে শোনান।

সেনা সদর দপ্তরের লিখিত প্রতিবাদ’র ছবিট সময় টিভি থেকে স্কিনশট(তিনধাপে) নেয়া।

প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়, ‘বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সম্পর্কে জনাব ডা: জাফরুল্লাহ’র বক্তব্য ছিল একটি দায়িত্ব জ্ঞানহীন, অসত্য বক্তব্য। কারণ বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ চাকরি জীবনে কখনোই চট্টগ্রামের জিওসি বা কমান্ড্যান্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন না। তিনি সেপ্টেম্বর ২০১০ হতে জুন ২০১১ পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩৩ আর্টিলারি ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার, জুন ২০১১ হতে মে ২০১২ পর্যন্ত ঢাকায় মিরপুরে ৬ স্বতন্ত্র এডিএ ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার এবং ২০১২ হতে ডিসেম্বর ২০১২ পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।’

আরো বলা হয়েছে, ‘বর্ণিত সময়ে চট্টগ্রাম বা কুমিল্লা সেনানিবাসে কোন সমরাস্ত্র বা গোলাবারুদ চুরি বা হারানোর কোন ঘটনা ঘটেনি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তাঁর দীর্ঘ বর্ণাঢ্য সামরিক চাকরি জীবনে কখনোই কোর্ট মার্শালের সম্মুখীন হননি।

চাকুরিরত একজন সেনাবাহিনী প্রধান সম্পর্কে ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির এরূপ দায়িত্ব জ্ঞানহীন অসত্য বক্তব্য সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত যা সেনাবাহিনী প্রধানসহ সেনাবাহিনীর মতো রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে জনসম্মুখে হেয় করার হীন অপচেষ্টা মর্মে স্পষ্টত: প্রতীয়মান।

ডা: জাফরুল্লাহ’র উপরোক্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন অসত্য বক্তব্য কেবলমাত্র সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে জেনারেল আজিজ আহমেদের সুনাম ও সামাজিক অবস্থানকে ক্ষুন্ন করেনি, বরং তা সেনাবাহিনী প্রধানের পদকে চরমভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছে। যা প্রকারান্তরে চাকুরিরত সেনাবাহিনীর সকল সদস্যকে বিভ্রান্ত করছে এবং তাদের মনোবলের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এছাড়া এরূপ অপপ্রচার সেনাবাহিনীর মতো সুশৃঙ্খল বাহিনীর সংহতি ও একতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে যা অনাকাঙ্খিত।’

কালের আলো/এএ