পাটের বাজারে তেজিভাবে হাসি কৃষকের মুখে
প্রকাশিতঃ 11:10 am | August 14, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ৷ মাত্রাতিরিক্ত বন্যা আর খরা এ দেশের কৃষকদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে৷ তা সত্ত্বেও ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন কৃষকরা৷
বাংলার সোনালী আঁশ তথা পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসছে আবারও। আর এ পাটেই আবারও তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি ফিরে পেয়েছেন কৃষকরা।
এবার কিশোরগঞ্জের বাজারের নতুন পাট ওঠার শুরুতেই হাসি ফুটিয়েছে কৃষকের মুখে। পাটেই আবারও তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি ফিরে পেয়েছেন তারা। তাদের চোখেমুখে এখন কেবলি ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন।
এক্ষেত্রে উন্নতমানের পাটবীজ ও কীটনাশক সরবরাহের জন্য সরকারের সহযোগিতা চান কৃষকরা। তাহলে আগামী মৌসুম থেকে পাটের আবাদও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি করার প্রত্যয় কৃষকদের।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলাকে ধান এবং পাটের অফুরন্ত ভাণ্ডার বলা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘদিন ধরে এসব ফসলের উৎপাদন ও ক্রয়মূল্যের ফারাক খুব একটা না বাড়ায় কৃষিকাজ থেকে দিনে দিনে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন অধিকাংশ কৃষক।
গত মৌসুমে পাটের বাজার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। বর্তমান বাজারেও নতুন পাট প্রকারভেদে ৩০০০ হাজার থেকে ৩৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত এ মূল্য বেড়ে সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত গড়ানোর প্রত্যাশায় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি কৃষকরাও মজুত করছেন স্বর্ণতন্তু পাটের।
গত মৌসুমের মাঝামাঝি হঠাৎ বেড়ে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত গড়ানোর কথা জানিয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ও পাটের বাজার পরিদর্শনের সময় পাটচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলেন, আর এ জন্য ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি কৃষকরাও সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে কিছু পাট বিক্রি করে অধিকাংশ পাটই মজুত রাখছেন তারা।
পাট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিজেএমসিসহ বেসরকারি কোম্পানিতে বকেয়া টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে সরকার ভূমিকা নিলে পাটের বাজারে আরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এ সময় কৃষক মাহমুদ কামাল জানালেন, উৎপাদন এবং বিক্রয় মূল্যের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য না থাকায় তারা দিনে দিনে এসব উৎপাদন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু গত বছর থেকে পাটের বাজারমূল্য সন্তোষজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় পাটেই তারা ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি দেখছেন।
কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট পাট ব্যবসায়ী সুজিত কুমার সাহা বলেন, বাজারে তোষা, কেনাফ ও দেশি পাট ইতোমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে। এ পাট তারা বর্তমানে প্রকারভেদে ৩০০০ থেকে ৩৮০০ টাকা পর্যন্ত মণ দরে কিনছেন। তবে, শেষ দিকে দাম বেড়ে ৪৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত গড়াবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর এজন্য আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি কৃষকরাও পাট মজুত রাখছেন।
তবে বিজেএমসিসহ বিভিন্ন বেসরকারি মিল-কারখানায় তাদের বকেয়া বিল পরিশোধে সরকার দৃষ্টি দিলে পাটের বাজারে আরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এ বিশিষ্ট পাট ব্যবসায়ী।
কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামার বাড়ি) উপপরিচালক মো. ছাইফুল আলম পাটের সোনালি অতীত ফিরে আসার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ মৌসুমে কিশোরগঞ্জ জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৭ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এক লাখ ৯১ হাজার ৩০৫ মেট্রিক টন।
তিনি আরও জানান, আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে এবং বাম্পার ফলনও হয়েছে। আগামী মৌসুমে এসব লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আর এজন্য কৃষকের মধ্যে উন্নত জাতের বীজ ও কীটনাশক সরবরাহের সহযোগিতার বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কালের আলো/আরএস/এমএইচএস