তারেকের মতো মানুষ বিশ্বে বিরল: নজরুল

প্রকাশিতঃ 5:24 pm | October 13, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে বিরল ব্যক্তিত্ব হিসেবে মনে করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। বলেন, খালেদা জিয়া পুত্রের সব সংগ্রাম দেশের জনগণের জন্য, গণতন্ত্র ‘পুনঃপ্রতিষ্ঠার’ জন্য।

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার ইউনিটিতে এক সমাবেশে এ কথা বলেন বিএনপি নেতা। খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের ‘ফরমায়েসী ও প্রতিহিংসামূলক’ সাজা বাতিল এবং হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী ফোরাম এর আয়োজন করে।

দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত তারেক রহমানকে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।

বিএনপির ভবিষ্যত নেতা হিসেবে যাকে ধরা হয় তিনি ১০ বছর ধরেই যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তার হয়ে পরের বছর প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তিনি যুক্তরাজ্যে যান চিকিৎসার জন্য। এর মধ্যে জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও তিনি আর দেশে ফেরেননি।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতো এমন মানুষ বিশ্বে খুঁজে পাওয়া যাবে না। যার বাবা সাবেক প্রেসিডেন্ট আর মা তিন বারের প্রধানমন্ত্রী।’

‘এরকম একজন ভাগ্যের অধিকারী মানুষের কোনো কিছু না হলেও তো তাকে মানুষ সম্মান করতো শহীদ জিয়ার পুত্র হিসেবে, খালেদা জিয়ার পুত্র হিসেবে। মানুষের সম্মান নিয়ে শুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারতেন।’

‘কিন্তু তারা এটা করেননি। করেননি আমাদের জন্য। জনগণের জন্য। দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য।’

লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান

গণতন্ত্র ‘পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ করতে ‘শক্তিশালী লড়াইয়ের জন্য’ নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ারও আহ্বান জানান বিএনপি নেতা। বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আপনারা আগামী দিনে গণতন্ত্রের জন্য শক্তিশালী লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হবেন। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা এদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করব।’

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি পূরণে গত সেপ্টেম্বর থেকেই আন্দোলনে যাওয়ার কথা ছিল বিএনপির। পরে ১ অক্টোবর থেকে নেতা-কর্মীদের ‘রেডি’ হতে বলেন মওদুদ আহমদ। তবে বিএনপির সেই আন্দোলন আর শুরু হয়নি।

নজরুল বলেন, ‘আজকে ভাবতে খুব কষ্ট হয় যে, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর আজ পর্যন্ত আমাদের এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হয়। আমরা আজ পর্যন্ত ঠিক করতে পারলাম না নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে। আজ পর্যন্ত আমরা একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশে জীবনযাপনের পন্থা বাহির করত পারলাম না।’

‘স্বাধীনতা যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ যেসব মানুষ জীবন দিয়েছে। কথায় কথায় যাদেরকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। তাদের আত্মা যে কষ্ট পাচ্ছে এটা বুঝি না।’

‘আ.লীগের নিবন্ধন কীভাবে থাকে?’

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ের পর বিএনপির নিবন্ধন থাকা উচিত নয় বলে আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানান নজরুল। বলেন, ‘২১ শে আগস্টের সময় বিএনপি ক্ষমতায় থাকায় সন্ত্রাসী দল হিসেবে বিএনপির যদি নিবন্ধন বাতিল হয় তাহলে বোমা হামলা শুরু হয়েছিল আওয়ামী লীগের সময়। তাদের সময় উদীচীর অনুষ্ঠানে রমনায় বোমা হামলা হয়েছিল।’

‘লগি বৈঠা দিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় পিটিয়ে পল্টনে মানুষ হত্যা করেছিল আওয়ামী লীগ। তাদের নিবন্ধন থাকে কীভাবে?’

এসব কি ইয়ার্কির বিষয়?

বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও তাদের আটকের সমালোচনা করে নজরুল বলেন। বিশেষ করে যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।

নজরুল বলেন, ‘কেউ বলে তার (সোহেল) বিরুদ্ধে ৪০০ মামলা, কেউ বলে ৬০০ মামলা। মামলা কোনো ইয়ার্কির বিষয় নাকি। মানে ইচ্ছা হল আর মামলা করে দিলেন। ইয়ার্কির বিষয় না হলে একজন মানুষের নামে সাড়ে ছয়শ মামলা হল কীভাবে?’

‘কোনো লোকের বিরুদ্ধে যদি কোনো ফ্যাক্ট ছাড়াই মামলা করা যায়। তদন্ত করে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়। তাহলে আর মামলা করতে অসুবিধা কোথায়।’

‘পুলিশ এসব গায়েবী মামলা করছে। আর সরকার তাতে উৎসাহ দিচ্ছে। যে কারণে এখন মামলা নিয়ে ইয়ার্কি করার সুযোগ পাচ্ছে। এই সরকারের দেয়া মামলার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একটাই মাত্র সম্ভাবনা আছে। সেটা হল আন্দোলন। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে হবে। এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।’

মামলা দিয়ে কোনো লাভ নেই বলেও সরকারকে বলেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘নেতাদের গ্রেপ্তার করে বা তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে যদি রাজনীতি বন্ধ করা যেত, লড়াই সংগ্রাম বন্ধ করা যেত। তাহলে দুনিয়াতে কোনো পরিবর্তন হতো না।’

‘কতো স্বৈরাচার, কতো ফ্যাসিস্ট সরকার এই দুনিয়াতে এসেছে। তারা যদি এই রকম অত্যাচার, নির্যাতন করে টিকে যেতে পারত, তাহলে কখনো কোথাও আর গণতন্ত্র ফিরে আসত না।’

‘ইতিহাস বলে স্বৈরাচারী সরকার যতো ক্ষমতাবানই হোক তাকে জনগণের সামনে নত হতে হয়, পরাজিত হতে হয়। এই সরকারেরও পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।’

আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক আত্তারুজ্জামান বাচ্চুর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা সুলতানা আহমেদ, তাঁতীদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, জিয়া নাগরিক ফোরামের সভাপতি মিয়া মো. আনোয়ার প্রমুখ বক্তব্য দেন।

কালের আলো/এনপি