সুরক্ষা অ্যাপে ভয়াবহ সাইবার হামলা
প্রকাশিতঃ 10:17 am | August 23, 2021
নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
বাংলাদেশে করোনার টিকা গ্রহণে ডিজিটাল নিবন্ধন ব্যবস্থা ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ ও ওয়েব পোর্টালে ভয়াবহ সাইবার হামলা হয়েছে। সম্প্রতি অন্তত ১০টি দেশ থেকে একসঙ্গে এই হামলা করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৪৮ ঘণ্টায় প্রায় ৪ কোটি বার এ সাইবার হামলা চালায় হামলাকারীরা। এতে ওই সময়ে অ্যাপটিতে সেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়।
এটিকে বলা হচ্ছে ‘ডিনাইয়াল অব সার্ভিস অ্যাটাক’ বা সেবা বাধাদানে আক্রমণ। এতে টিকার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। তবে বাংলাদেশি দক্ষ বিশেষজ্ঞ দল সেই হামলা রুখে দিতে সক্ষম হয়। ফলে এই অ্যাপটিতে রেজিস্ট্রেশন করা তিন কোটির অধিক নাগরিকের তথ্য হাতিয়ে নিতে ব্যর্থ হয় হ্যাকাররা। এরপর জিও ফেন্সিং (ভূ-বেড়া) চালুসহ বেশকিছু কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমে ‘সুরক্ষা’ রেজিস্ট্রেশন সেবাকে আরও সুরক্ষিত করা হয়েছে।
তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ বিভাগের ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি সূত্র জানায়, গত ৬ আগস্ট থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ২০ দেশের অবকাঠামো ব্যবহার করে সুরক্ষা অ্যাপে প্রায় চার কোটি বার সাইবার হামলা চালিয়েছে হ্যাকাররা। ওই সময়ে ছয় কোটি ১৬ লাখ ৭৪ হাজার জন অ্যাপটিতে হিট করে।
এর মধ্যে প্রকৃত বাংলাদেশ থেকে নিবন্ধনের জন্যে প্রবেশ করেন প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। এর বাইরে যারা অ্যাপটিতে প্রবেশ করেছে বা হিট করেছে তাদের সবাই সাইবার হামলাকারী ছিল।
ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির পরিচালক (অপারেশন) তারেক এম বরকতউল্লাহ বলেন, আমরা বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে কাজে নেমে পড়ি। দক্ষ কর্মী বাহিনী খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে হ্যাকারের হাত থেকে রক্ষা করে সুরক্ষা অ্যাপকে। আমাদের পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়া, আমেরিকা, ভিয়েতনামসহ ২০ দেশের অবকাঠামো ব্যবহার করে এ হামলা চালায় হ্যাকাররা।
এ ধরনের হামলা যেন না হয় সেই প্রস্তুতি শুরুতে কেমন ছিল? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শুরুতে আমরা ভেবেছিলাম বিমানবন্দরে প্রবেশের সময় ও বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের কাজে লাগবে অ্যাপটি। এ জন্যে কোনো রেস্ট্রিকশন রাখা ছিল না। এ ঘটনার পর সম্পূর্ণটা ঠিক করা হয়েছে। বিদেশ থেকে নিবন্ধনের ব্যবস্থাসহ সব বিষয়ে আমাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
কী কারণে এতো বড় হামলা চালানো হয়েছে উত্তরে এ প্রযুক্তিবিদ বলেন, একাধিক কারণে অ্যাপটিতে সাইবার হামলা হতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো অ্যাপের সেবাকে বাঁধাগ্রস্ত করা, দেশকে বিপদে ফেলে মুক্তিপণ দাবি, তথ্য চুরি। এছাড়া নতুন নতুন যারা হ্যাকিং শিখতে আসে তারা এ ধরনের অ্যাপ বেছে নেয়। শুধু যে বাংলাদেশে এমন হয়েছে তা কিন্তু নয়, সম্প্রতি ইতালির করোনাভাইরাসের অ্যাপ হ্যাক করে মুক্তিপণ দাবি করে হ্যাকাররা।
এ ধরনের জাতীয় অ্যাপ তৈরির প্রস্তুতিতেই সাইবার হামলার বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক ড. হোসেন আসিফুল মুস্তাফা।
তিনি বলেন, সুরক্ষা অ্যাপের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ আরও নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংযুক্ত রয়েছে। এ সময়ে অ্যাপটির কার্যক্রমও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামান্য সময় সেবা বন্ধ বা বিঘ্নিত থাকাও ঠিক হবে না। সুতারাং অ্যাপটির সাইবার নিরাপত্তা খুবই গুরুত্ব বহন করে। ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি হয়তো দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছ।
তিনি বলেন, যেহেতু এটি সেবামূলক অ্যাপ, তাই হয়তো সেবাকে বিঘ্নিত করাই তাদের (হ্যাকারের) মূল উদ্দেশ্য ছিল। এছাড়া তথ্য চুরির মতো ঘটনা ঘটাতে পারতো হ্যাকার। এমনও হতে পারে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য কাজটি করেছে। নেতিবাচক অনেক কিছুই হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, এ পর্যন্ত অ্যাপটির মাধ্যমে প্রায় তিন কোটির মতো মানুষ করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকা গ্রহণে নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ চালু করা হয়। এর মাধ্যমে টিকা গ্রহণে আগ্রহীরা নিবন্ধন করার পাশাপাশি টিকা নেওয়ার সনদও তুলতে পারছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিতি থেকে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে সুরক্ষা অ্যাপের উদ্বোধন করেন।
কালের আলো/ডিএসকে/এমএম