নিরাপদ বাংলাদেশের ‘টার্গেট’ দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের, একক সংখ্যায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রাণহানি!

প্রকাশিতঃ 10:33 pm | August 24, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো :

লক্ষ্য দুর্যোগ সহনীয়, টেকসই ও নিরাপদ বাংলাদেশ। দুর্যোগে ঝুঁকি হ্রাসের মাধ্যমে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে সক্ষম হলেই পূরণ হবে টার্গেট। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি ঠাঁই নিয়েছে ১০০ বছর মেয়াদী ডেল্টা প্ল্যানেও। নিজেদের লক্ষ্যপূরণে পরিকল্পিতভাবেই নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা: মো. এনামুর রহমান জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে বাংলাদেশের ঝুঁকিতে থাকার বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে নিরাপদ বাংলাদেশ উপহারে নিজেদের কর্মযজ্ঞের বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন সময়োপযোগী পদক্ষেপের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। কেবল তাই-ই নয়, বাস্তবভিত্তিক ও বহুমাত্রিক কার্যক্রমের ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানিও একক সংখ্যায় নেমে এসেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন এজন্য কৃতিত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে।

মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর পর্যটন কর্পোরেশন প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ’ বিষয়ক সেমিনারে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যেকোনও দুর্যোগ মোকাবিলা ও ঝুঁকি কমানোর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের সক্ষমতারই বার্তা দিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিব।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা: মো.এনামুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল। অনুষ্ঠানে কি-নোট পেপার উপস্থাপন করেন ব্রাক ইউনিভার্সিটির এমেরিটাস প্রফেসর ড.আইনুন নিশাত।

সমন্বয়ে যোগসূত্র সৃষ্টি করবে ডেল্টা প্ল্যান
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা: মো.এনামুর রহমান বলেন, ‘জলবায়ুর ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে কাঙ্খিত উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য দুর্যোগ ঝুকি-হ্রাস বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করে সরকার ১০০ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা(ডেল্টা প্ল্যান) -২১০০ প্রণয়ন করেছে। ২১০০ সাল নাগাদ স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাসমূহের সমন্বয়ে যোগসূত্র সৃষ্টি করবে এই ডেল্টা প্ল্যান।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা থেকে মানুষের জানমাল রক্ষার্থে মাটির কিল্লা নির্মাণ করা হয়, যা সর্ব সাধারণের কাছে ‘মুজিব কিল্লা’ নামে পরিচিত। তারই আধুনিক রূপে উপকূলীয় ও বন্যা উপদ্রুত ১৪৮টি উপজেলায় ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান। উপকূলীয় দুর্গত জনগণ যেমন সেখানে আশ্রয় নিতে পারবে তেমনি তাদের প্রাণিসম্পদকে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারবে। এছাড়া জনসাধারণের খেলার মাঠ, সামাজিক অনুষ্ঠান ও হাট-বাজার হিসেবেও এটি ব্যবহার করা যাবে।’

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বনেতাদের জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪টি বিষয়ের উপর গুরুত্ব প্রদান করেন। বিষয়সমূহ হচ্ছে (১) বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড কমিয়ে আনা, (২) বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ১০০ বিলিয়ন ডলার ৫০:৫০ অনুপাতে অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ভাগ করে দেয়া এবং লস অ্যান্ড ড্যামেজ এর ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া, (৩) উন্নত দেশ, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিখাতের এগিয়ে আসা, (৪) কার্বন নিউট্রাল প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও টেকনোলজি ট্রান্সফার।

প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বেই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি একক সংখ্যায়
সভাপতির বক্তৃতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে সিপিপি’র যাত্রা শুরু করেছিলেন যারা আগাম সতর্কসংকেত প্রচার এবং সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের জানমাল রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে।

বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনায় সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক সংখ্যা ৭৬ হাজারে উন্নীত হয়েছে। উপকূলে ৫ হাজারের বেশি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।’

দুর্যোগে প্রাণহানির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব বলেন, ‘১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ১০ লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বে সাম্প্রতিক কালে একই মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি একক সংখ্যায় নেমে এসেছে।’

কালের আলো/জিকেএম/এমকে