বিচারককে হত্যার হুমকি দিয়ে ‘জঙ্গি সংগঠনের’ চিঠি
প্রকাশিতঃ 7:07 pm | August 27, 2021

কালের আলো সংবাদদাতা:
টাঙ্গাইল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিনকে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি দিয়েছে একটি ‘জঙ্গি সংগঠন’।
শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিচারক খালেদা ইয়াসমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার একটি খাকি খামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিনের কাছে একটি চিঠি আসে। সেখানে প্রেরকের স্থানে জুবায়ের রহমান লেখা রয়েছে। পরে শুক্রবার বিষয়টি জানাজানি হয়। এ নিয়ে পুরো বিচারকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এতে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বিচারক খালেদা ইয়াসমিনসহ তার পরিবারের লোকজন।
বিচারককে হত্যার হুমকি দিয়ে পাঠানো চিঠিতে লেখা হুবুহু তুলে ধরা হলো-
‘ম্যাডাম, আপনাকে উদ্দেশ্য করে চিঠি দিলাম। বিস্তারিত পড়ে দেখুন। আমরা জঙ্গি সংগঠনের লোক। তাই জীবনে চলার পথে অনেক অন্যায় কাজ করেছি। এমনকি এখনও করি। আমরা যখন যাকে ট্রার্গেট করি তখন তাকে ছলে বলে কৌশলে হত্যা করি। এটাই আমাদের পেশা। এবার আপনাকে হত্যা করার পালা। কারণ আপনি নারী ও শিশু কোর্টে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত অনেকটি বড় ধরনের মামলার রায় দিয়েছেন। তাতে আমাদের লোকজনের খুব বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। তাই আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলছি, যদি নিজের জীবনের প্রতি মায়া থাকে তাহলে টাঙ্গাইল থেকে বদলি হয়ে চলে যান। যদি কথা না শুনেন তাহলে আমরা আপনাকে হত্যা করতে বাধ্য হবো। আর আমাদেরকে যারা সহযোগিতা করতেছে তারা কয়েকজন আইনজীবী এমনকি জজ কোর্ট ও ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের স্টাফদের সমন্বয়ে।
আপনাকে যেভাবে হত্যা করা হবে তার দুইটি নমুনা- ‘টার্গেট-১। অফিস হতে বাসা-এর মধ্যে আসা-যাওয়ার পথে আপনার গাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করা হবে।
টার্গেট-২। অফিস চলাকালীন সময়ে লোকজনের ভীরের মধ্যে গিয়ে আপনার এজলাশ বা খাসকামড়া এর মধ্যে বোমা নিক্ষেপ করা হবে।’ তবে একটা কথা মনে রাখবেন, আপনাকে পুলিশ যতই নিরাপত্তার মধ্যে রাখুক না কেন আপনাকে আমাদের বোমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। তাই প্রাণ বাঁচাতে চাইলে টাঙ্গাইল হতে তাড়াতাড়ি বদলি হয়ে চলে যান।’
চিঠিতে বলা হয়, ‘যদি আপনাকে হত্যা করতে ব্যর্থ হই। তাহলে আমাদের হিংস্রতার টার্গেট রয়েছে আরেকটি। সেটা হলো-আপনার নারী ও শিশু কোর্টে আউট সোর্সিং’ হিসেবে প্রসেস সার্ভার পদে যে ছেলেটি চাকরি করে সে নাকি আপনার খুব ঘনিষ্ট আত্মীয়। তাই আমাদের লক্ষ্য ছেলেটাকে অফিসে আসা-যাওয়ার পথে বা কোর্ট থেকে বাইরে যাওয়া মাত্রই আমরা ছেলেটাকে অপহরণ করব। পরে গহীন জায়গায় নিয়ে আটকিয়ে রেখে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করব। আর যদি টাকা না দিতে পারেন তাহলে ছেলেটাকে জবাই করে হত্যা করা হবে। পরে লাশ যমুনা নদীতে ফেলে দেয়া হবে। কথাটা মনে রাখবেন।
ইতি- জঙ্গি সংগঠন।
টাঙ্গাইল র্যাবের কমান্ডার কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বিচারকের পক্ষ থেকে বিষয়টি আমদের জানানো হয়েছে। জঙ্গী সংগঠনের দেওয়া চিঠিটি আমরা পেয়েছি। র্যাব বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, বিচারক খালেদা ইয়াসমিন হত্যার হুমকির ঘটনাটি আমাদেরকে জানিয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। বিচারক ও তার পরিবারের লোকজনদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া তার আসা যাওয়ার পথে এবং আদালতের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
কালের আলো/আরএস/এমএইচএস