যে কারণে সভা বর্জন করেন মাহবুব তালুকদার
প্রকাশিতঃ 4:24 pm | October 15, 2018
বিশেষ প্রতিনিধি, কালের আলো:
নিবার্চন কমিশনের ৩৬তম সভা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে সভা বর্জন করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। সভার শুরুর ৭ মিনিটের মাথায় তিনি সভাকক্ষ ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন।
তবে তখন সভা বর্জনের কারন জানা না গেলেও, পরবর্তীতে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ এ তিনি সভা বর্জনের চারটি কারণ উল্লেখ করেছেন।
প্রথম অংশে তিনি লিখেছেন, ‘বিগত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে আমি ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ অংশীদারমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে কতিপয় প্রস্তাবনা’ শিরোনামে আমার বক্তব্য অদ্যকার নির্বাচন কমিশন সভায় উপস্থাপন করার জন্য সিইসি বরাবরে একটি ইউওনোট পাঠাই। পরবর্তীতে এর একটি সংশোধনীও প্রেরণ করা হয়। গত ৮ অক্টোবর কমিশন সচিবালয় থেকে ইউওনোটের মাধ্যমে আমাকে জানানো হয়, আমার প্রস্তাবনাগুলি ১৫ অক্টোবর ৩৬তম কমিশন সভায় উত্থাপন করার জন্য সিইসি আমাকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
দ্বিতীয় অংশে তিনি লিখেন, উল্লেখ্য যে, গত ৩১ জুলাই ২০১৭ থেকে ২৪ অক্টোবর ২০১৭ পর্যন্ত প্রায় ৩ মাসব্যাপী নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে। এতে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অংশীজন ছাড়াও ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। সবার সংলাপ একত্রিত করে তা গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা হয়।
তবে উক্ত সংলাপের বিষয়ে আজ পর্যন্ত কমিশন সভায় কোনো আলোচনা না হওয়ায় এবং সংলাপের কোনো কার্যকারিতা পরিলক্ষিত না হওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে আমি এটির পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এবং অংশীজনের সংলাপের আলোকে উপরোক্ত শিরোনামে প্রস্তাবনাসমূহ লিপিবদ্ধ করে কমিশন সভায় পেশ করার নিমিত্তে কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানাই।
তৃতীয় অংশে তিনি লিখেছেন, আমার প্রস্তাবনাসমুহ যাতে কমিশন সভায় উপস্থাপনা করতে না দেয়া হয়, এজন্য তিনজন মাননীয় নির্বাচন কমিশনার এক এবং অভিন্ন চিঠি লিখে পৃথক পৃথক ইউওনোটরে মাধ্যমে মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাদের সঙ্গে একমত হওয়ায় আমাকে প্রস্তাবনাসমূহ করতে দেয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন সভায় আমার বক্তব্য উপস্থাপন করতে না দেয়ায় তাদের অভিন্ন অবস্থান আমাকে বিস্মিত ও মর্মাহত করেছে।
চতুর্থ অংশে তিনি লিখেছেনে, বাক প্রকাশের স্বাধীনতা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধান প্রদত্ত আমার মৌলিক অধিকার। নির্বাচন কমিশন কেনোভাবেই আমার এই অধিকার খর্ব করতে পারে না। এমতাবস্থায় উপায় না পেয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের এরূপ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট প্রদান করছি এবং প্রতিবাদস্বরূপ নির্বাচন কমিশন সভা বর্জন করছি।
এরআগে গত ৮ অক্টোবর কমিশনে দেওয়া এক আনঅফিশিয়াল নোটে ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে’ পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন মাহবুব তালুকদার।
সেখানে নির্বাচনী দায়িত্বে সেনাবাহিনীর কার্যপরিধি নির্ধারণ, সবার জন্য সমান সুযোগ রেখে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন, ভোটে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, ইসির সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সরকারের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে নিজের মতামত সেখানে তিনি তুলে ধরেন।
সোমবার কমিশন সভায় ওই বিষয়গুলো নিয়েই বক্তব্য দিতে চেয়েছিলেন কমিশন সদস্য মাহবুব তালুকদার। সভার শুরুতেই তার প্রস্তাবনাগুলো কমিশন সভার কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করারও অনুরোধ জানান এই নির্বাচন কমিশনার।
এ বিষয়ে মাহবুব তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখন অামি এ বিষয়ে কোন মন্তব্যই করব না।
এর আগে গত ৩০ আগস্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিপক্ষে মত দিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) সংশোধন নিয়ে কমিশন সভা চলাকালে বৈঠক বর্জন করেছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
কালের আলো/এনএম