মোবাইলে মগ্নতাই অমৃতসর দুর্ঘটনার কারণ
প্রকাশিতঃ 9:46 am | October 20, 2018
কালের আলো ডেস্কঃ
রক্তে ভেসে গেল পাঞ্জাবের অমৃতসর। উৎসবের দিনে এমন রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে শহরে, সেটা ঘটনার কয়েক সেকেন্ড আগেও কেউ ভাবেননি। কয়েক মিটার দূরে প্রতিবছরের মতোই চলছি দশেরা। এবারেও অমৃতসরে রেল লাইনের ধারে হাজির হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু স্রেফ প্রশাসনিক গাফিলতির কারণে এক ধাক্কায় মৃত্যু হল প্রায় ৬০ জন মানুষের। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, মৃতের সংখ্যা দুশো ছাড়িয়ে যেতে পারে। আহত অসংখ্য মানুষ। চোখের সামনে রেল লাইনের উপর দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকশো মানুষের উপর ট্রেন তীব্র গতীতে চলে যাওয়া যারা চোখে দেখলেন, তাঁরাও যেন ভয়াবহতা বিশ্বাস করতে পারছেন না।
দশেরা উৎসবের কোনও মুহূর্ত ছাড়া যাবে না। সমস্ত রেকর্ড করে রাখতে হবে মোবাইলে। তাই কোনওদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। হাতের মোবাইলে চলছে রেকর্ডিং। কেউ আবার প্রিয়জনকে নিয়ে আসতে পারেননি এই দশেরার উৎসবে। তাই মোবাইলে ভিডিও কল করে দশেরার জ্বলন্ত রাবণ দেখাচ্ছেন তাঁরা। কেউ আবার অনেকটাই এগিয়ে। সরাসরি ফেসবুকের অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভ করে দেখাচ্ছেন আগুনে পোড়া রাবন।
সেই উৎসবের ঘোরে কারোর খেয়াল নেই যে অজান্তেই তাঁরা এসে দাঁড়িয়েছেন দুরপাল্লার ট্রেন চলে এমন ট্র্যাকের উপর। ট্রেন আসার আগে তাই চালক বহুবার হর্ন দিলেও তাঁরা শুনতে পেলেন না মোটে। এমনই মগ্ন হয়ে রইলেন মোবাইলে। দুদিক দিয়ে এল দুটি ট্রেন, তাও তাঁরা খেয়াল করলেন না। ফল যা হওয়ার তাই হল, মুহূর্তে উৎসবে বেজে উঠলো বিষাদের সূর। দুটি ট্রেনের মাঝে, তলায় পড়ে মৃত্যু হল অসংখ্য মানুষের।
কিন্তু কেন এমন হয় ? অনেকেই বলছেন মোবাইলের অত্যাধিক ব্যবহার নানা সময় একাধিক দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায়সই খবর পাওয়া যায়, সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনে, নদীতে ডুবে বা রাস্তায় অনেকের মৃত্যু হয়। কিন্তু এই গণহিস্টিরিয়ার মতো মোবাইলে উৎসবের মুহূর্ত ধরে রাখার হিড়িক এই প্রথম। আর সেই কারণেই অমৃতসরে এতবড় কাণ্ড ঘটে গেল। মোবাইলে এমন মগ্ন ছিলের দর্শকরা যে খেয়াল ছিল না কখন রেল লাইনের উপর তাঁরা উঠে এসেছেন। আর যখন ঘাড়ের কাছে ট্রেন এসে পড়েছে, তখন আর উপায় কোনও উপায় নেই বাঁচার।
অমৃতসরে রেললাইনের উপর দাঁড়িয়ে রাবণ বধ দেখছিলেন উৎসুক জনতা৷ সেসময় চলন্ত ট্রেন এসে পিষে দিল তাঁদের৷ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্রেনের চাকার তলায় পিষ্ট হলেন অসংখ্য মানুষ৷ কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে অমৃতসরের চৌরা বাজারের যোধা ফটক এলাকা পাল্টে গেল মৃত্যুপুরীতে৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, রেললাইনের পাশে দাঁড়িয়ে রাবণ বধ দেখছিলেন প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ জন মানুষ৷ এর মধ্যে মহিলা এবং শিশুরাও ছিলেন৷
এমন সময় রাবনের গায়ে লাগানো বাজিগুলিও ফাটতে শুরু করে৷ কিছু রকেট এবং বাজি ছিটকে আসে ভিড়ের দিকে৷ ভয়ে অনেকেই পাশের রেললাইনের উপর উঠে আসেন৷ ঠিক সেই সময় দুদিকের রেল লাইন ধরেই ছুটে আসছিল দ্রুতগতির দুটি ট্রেন৷ একটি পাঠানকোট থেকে, অন্যটি হাওড়া মেল। চালক হর্ন দিলেও অনেকেই তা শুনতে পাননি৷ বাজি আর বাজনার শব্দে ঢেকে গিয়েছিল চারিদিক। অনেকেই সেসময় ফোনে রাবণ বধের ছবি ভিডিও তুলতেই ব্যস্ত ছিলেন৷ তাই ট্রেন আসার দিকে কারোর খেয়াল ছিল না৷ মুহূর্তে মৃত্যু হল অসংখ্য মানুষের। প্রসঙ্গত, গত বছর এমনই পুজোর একদিনে মুম্বইয়ে ভেঙে গিয়েছিল একটি রেলের ওভারব্রিজ।
ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে উদ্ধারকার্য৷ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে বিশাল পুলিসবাহিনীও৷ পাঞ্জাব পুলিসের বক্তব্য, ‘ঘটনায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ আমরা উদ্ধারকার্য চালাচ্ছি৷ আহতদের ইতিমধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে৷’ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং আগামীকাল সকালেই ঘটনাস্থলে যাবেন বলে জানা গিয়েছে৷
কালের আলো/ওএম