‘বিএনপির ভাঙন রাজনীতির সবচেয়ে বড় নোট অব ডিসেন্ট’ মন্তব্য মাহির

প্রকাশিতঃ 6:40 pm | October 21, 2018

কালের আলো ডেস্ক:

২০০১ সাল থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে তিনবার বিএনপির ভাঙনকে রাজনীতির সবচেয়ে বড় নোট অব ডিসেন্ট বলে মন্তব্য করেছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও যুক্তফ্রন্ট নেতা মাহি বি চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে বিএনপির মত একটি দল তিনবার ভেঙে গেল। এর চেয়ে বড় নোট অব ডিসেন্ট রাজনীতিতে হতে পারে না।’

রবিবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের নিয়মিত টকশো ‘তৃতীয় মাত্রা’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও যুক্তফ্রন্ট নেতা মাহি বি চৌধুরী।

চ্যানেল আইয়ের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় টকশোতে আরো যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল।

মাহি বলেন, ‘১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী সরকার এরশাদের পতনের সময়ও বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল ছিল। বিএনপির কিছু নেতা অন্য দলে যোগ দিলেও দল ভেঙে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটেনি। দল থেকে বের হয়ে নতুন দল গঠনের মত ঘটনাও তখন দেখা যায়নি। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে জোট করার পর ছয় বছরে বিএনপি তিনবার ভেঙেছে।’

তবে জামায়াতের সঙ্গে জোট করায় বিএনপিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে- এতে একমত নন আসিফ নজরুল। তার দৃষ্টিতে বিএনপি এর আগেও ভেঙেছে। বিএনপি থেকে নেতাদের বের হয়ে যাওয়ার সঙ্গে জামায়াত জড়িত নয়। জামায়াতের কারণে নয়, বরং দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে অনেকে দল থেকে বের হয়ে গেছেন।

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যুক্তফ্রন্টের হয়ে বিকল্পধারা যে নির্বাচনী ফর্মুলা দিয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগ জিতে আসবে বলেও মনে করেন তিনি।

‘১৫০ আসনে বিএনপির প্রার্থী এবং বাকি ১৫০ আসনে জোটের অন্য দলগুলোর প্রার্থী নিয়ে যদি জোটের পক্ষ থেকে নির্বাচনে যাওয়া হত, তাহলে ৩০০ আসনের মধ্যে জোট আসন পেত ১১০-১২০টি। ফলে নির্বাচনে জয়লাভ করত আওয়ামী লীগ।’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘জোটে গিয়ে বিএনপি যদি খুবই ভালো করে, তাহলেও ১১০-১২০টি আসন পাবে। তার মানে এই ফর্মুলাটা দেয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে। এই ফর্মুলা দিয়ে নির্বাচন করলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ জিতে আসবে।’

২০০৪ সালে মূলধারার রাজনীতির বাইরে রাজনীতি গড়তে বিকল্প ধারা গড়া হয়েছিল- এমনটাই দাবি মাহির। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এমকি কিছু সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে, বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে পরিচালনা করেন মাহি বি চৌধুরী। এ বিষয়ে মাহি বলেন, ‘আমার কোনো কনসেপ্ট ধরে বদরুদ্দোজা চৌধুরী অনড় অবস্থান নেননি। বদরুদ্দোজা চৌধুরীর কনসেপ্ট ধরে আমি অনড় ভূমিকা পালন করছি।’

মাহি বি চৌধুরীকে নিয়মিত রাজনীতির মাঠে দেখা যায় না, বিশেষ বিশেষ সময়ে তিনি সরব হয়ে উঠেন। এমন অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে মাহি বলেন, ‘মিডিয়াগুলো আমাদের সব সময় তুলে আনে না। গত ১৪ বছরে আমি আমার অফিসে অনেক বর্ধিত সভা করেছি, তখন মিডিয়া ছিল না। এখন আমি আমার অফিসে একটা বর্ধিত সভা করলেই দেখি, কত মিডিয়া দাঁড়িয়ে আছে। আর আগে আমি কত বর্ধিত সভা করলামরে ভাই, ডেকেও আপনাদের কোনোদিন পাইনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘কোটা আন্দোলন, নিরাপদ আন্দোলনের সময় আমি ছিলাম। কিন্তু আন্দোলনকারীদের ভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল। তারা সে সময় কোনো রাজনৈতিক নেতাকে তাদের পাশে চাননি। তারা তাদের আন্দোলনকে রাজনীতির মধ্যে নিয়ে আসতে চাননি। তাই শুধু আমি না কোনো রাজনৈতিক নেতাই সে সময় প্রকাশ্যে আন্দোলনে ছিলেন না। হ্যাঁ, আমি টকশো করেছি, এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি। সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি করেছি। আমি সব সময়ই সরব ছিলাম।’

মাহির বিরুদ্ধে সরকারের সঙ্গে ব্যবসার অভিযোগ আছে। বিএনপির সংসদ সদস্য থাকাকালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের চাঙ নিয়ে লাখ লাখ টাকার ব্যবসাও করেছেন তিনি। এসব অভিযোগের জবাবে মাহি বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনে তিনি সপ্তাহে এক ঘণ্টার একটি অনুষ্ঠান চালাতেন। যা দিয়ে লাখ টাকা নয়, হাজার টাকা আয় হত।

তিনি বলেন, ‘শুধু এই সরকার নয়, গত ৪৭ বছরে কোনো সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনো ব্যবসা ছিল না। সরকারের সঙ্গে কখনোই কোনো ব্যবসা আমরা করিনি। এটি মিথ্যা, যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে আমি তার জবাব দিতে রাজি আছি। এই মিথ্যাচারগুলো গত এক দেড়মাস ধরে করা হচ্ছে।’

চরিত্র হনন করে আলাদা আলোচনাকে সামনে নিয়ে আসতে, মূল আলোচনা থেকে দূরে থাকতেই এসব বিষয় সামনে নিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।

কালের আলো/সিএম