খুদে ফেন্সারদের সঙ্গে অন্যরকম সন্ধ্যা স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের

প্রকাশিতঃ 11:14 pm | November 08, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

মুহুর্ত কয়েকের জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলাম এমপি নিজেও যেন হয়ে উঠলেন আপাদমস্তক এক ফেন্সার। অনুষ্ঠান মঞ্চেই ফেন্সিং খেলার মূল হাতিয়ার ফয়েল বা হালকা তরবারি নিয়ে পৃথকভাবে চার ফেন্সার শ্যামা-সুবর্ণা ও হাসান-ফাইজুরের সঙ্গে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হলেন।

অবিকল তরবারি নিয়ে দ্বন্দ্ব যুদ্ধ! সোমবার (০৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মিরপুর শহিদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে অবাক বিস্ময়ভরা নয়নে এই লড়াই উপভোগ করছেন প্রায় দেড় শতাধিক খুদে ফেন্সার। আদতে এই যুদ্ধ প্রতীকী। মূলত শেখ রাসেল প্রথম জাতীয় জুনিয়র ও ক্যাডেট ফেন্সিং প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রথা মেনেই তলোয়ারের খেলায় মেতে উঠলেন স্বয়ং মন্ত্রী তাজুল ইসলাম!

উজ্জ্বল মঞ্চে তাঁর দু’পাশে তখন বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড.আতিউর রহমান ও পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি এস এম রুহুল আমিনসহ অন্যরা। এরপর নিজের বক্তব্যের মাধ্যমে উদ্বোধন ঘোষণা করলেন প্রতিযোগিতার। পরে মন্ত্রী মঞ্চ থেকে নেমে আলাপ-কুশল বিনিময়ের মাধ্যমেও উৎসাহিত করলেন খুদে ফেন্সারদের।

কথার ফাঁকেই দৃষ্টি কাড়লো ভবিষ্যতের ইতালিয়ান কিংবদন্তি তারকা ফেন্সার ভ্যালেন্তিনা ভেৎসালিদের উদ্দেশ্যে তাঁর গভীর যুক্তিবোধের শাণিত উচ্চারণ-‘জয় বাংলা বলো, বাংলাদেশকে ভালোবাসো।’ সঙ্গে সঙ্গেই কোমলমতি ফেন্সারদের হৃদয় থেকে উৎসারিত হলো ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। এ যেন অন্যরকম এক সন্ধ্যা।

প্রধান অতিথি হিসেবে নিজের বক্তব্যেও ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের মর্মকথাই মোটা দাগে উপস্থাপন করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। ১৯৭১ সালে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে মোকাবেলা করতো। এই স্লোগান জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে একত্রিত করেছিল সেই যুদ্ধে।

বাঙালির অনুভূতি, বিজয় আর মুক্তির এই স্লোগানকে নিজেদের কন্ঠে ধারণের জন্যও আহ্বান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তার পূর্বে আমি স্কুলের ছাত্র ছিলাম। আমি তখন নিজের কানে শোনেছি, দেখেছি। পাকিস্তানিরা জিন্দাবাদ বলতো, আমাদেরকে শোষণ করতো, আমাদের সম্পদ লুন্ঠন করতো; আমাদের উপর অত্যাচার করতো।

সেদিন সেজন্য আমরা বাঙালিরা বলেছিলাম, ‘জিন্দাবাদে লাথি মারো, জয় বাংলা কায়েম করো’। ‘জয় বাংলা’ আমাদের হৃদয়ের স্লোগান, স্বাধীনতার স্লোগান। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমরা ‘জয় বাংলা’ বলে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি। অতএব যারা নাকি জয় বাংলা বলতে লজ্জা পায়, তারা আমাদের দেশটাকে মানতেও লজ্জা পায়। তারা আমাদের দেশের নাগরিক হিসেবে স্বস্তিবোধ করে না।’

আয়োজক সূত্র জানায়, ১৫ দলের দেড়শ ফেন্সার নিয়ে এদিন শুরু হয়েছে শেখ রাসেল প্রথম জাতীয় জুনিয়র ও ক্যাডেট ফেন্সিং প্রতিযোগিতা। মিরপুর শহিদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে এই টুর্নামেন্টে ১২টি করে স্বর্ণ ও রুপা এবং ২৪টি ব্রোঞ্জের জন্য লড়বে খুদে ফেন্সাররা।

ফেন্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম শোয়েব চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সেলিম ওমরাও খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড.আতিউর রহমান, পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি এস এম রুহুল আমিন, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মো.শামস উল ইসলাম।

শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে বহুমুখী প্রতিভা নিয়ে কাজ করতেন
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলাম এমপি প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরও বলেন, ‘শেখ রাসেল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান। বঙ্গবন্ধু আমাদের হৃদয়ের মানুষ, যিনি আমাদের বাংলাদেশটাকে একটি উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন এবং স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। আমরা সবাই সোনার মানুষ হবো।

সারা পৃথিবীর মানচিত্রে আমাদের একটি গর্বিত অবস্থান থাকবে। শিল্প-সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, মেধা-বুদ্ধি, খেলাধুলাসহ সবকিছুতেই আমরা একটি শীর্ষস্থানীয় দেশ হিসেবে আমাদের স্থান করে নিবো। দুভার্গজনকভাবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনকের পরিবারের সকল সদস্যের সাথে শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয়। জাতির জনক তার আশা-স্বপ্ন পূরন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘শেখ রাসেল যদি বেঁচে থাকতো স্বাভাবিকভাবেই বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি হিসেবে দেশ-জাতি ও মানুষের জন্য বহুমূখী প্রতিভা নিয়ে কাজ করতেন এবং অবদান রাখতেন। আজকে হয়তো একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে দেশের জন্য অবদান রাখতেন।’

খুদে ফেন্সাররাই হবে সোনার বাংলার কারিগর
বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড.আতিউর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ১৯৭২ সালে মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেই অর্থনীতি এখন ৩৫৫ বিলিয়ন ডলার। ৭৫’র পর অর্থনীতি যতোটা বেড়েছে তাঁর ৭৩ শতাংশ বেড়েছে ২০০৯ সালের পর বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরে।

তিনি বলেন, ‘গত এক দশক ধরে সারা এশিয়ার মধ্যে মাথাপিছু আয়ে বাংলাদেশ এক নম্বরে আছে। আমরা একটি সম্ভাবনায় বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখছি। তোমরাই হবে এই সোনার বাংলার কারিগর। তোমরা উজ্জ্বল করবে স্বদেশের নাম। তোমরা এই স্বদেশকে ভালোবাসবে এবং স্বদেশের জন্য তোমরা জীবন দেওয়ার মতো মানসিকতা তৈরি করবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিজেদের নিবেদিত রাখবে।’

উন্নত দেশের উপযোগী নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে
পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি এস এম রুহুল আমিন বলেন, ফেন্সিং খেলাটি অনেক পুরনো। তিন হাজার বছর আগে থেকেই চলে আসছে খেলাটি। প্রাচীন গ্রিস, পার্সিয়া, বেবিলন ওখানেও ফেন্সিং হতো। কিন্তু তখন এটা হতো যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে।

যখন আমাদের আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি হয়নি, বন্দুক বা রাইফেলও সৃষ্টি হয়নি। তখন তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করতো এবং তার জন্য এই প্র্যাকটিস হতো। অষ্টদশ শতাব্দীতে ইতালিতে এটা খেলা হিসেবে প্রথম চালু হয় দীর্ঘ দুই হাজার বছরের বেশি সময়ের পরে। এরপর থেকে অলিম্পিকে মাত্র চারটি খেলা আছে যেটা শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্ত ছিল। তার ভেতর ফেন্সিং একটি।

খুদে ফেন্সারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘সার্বিকভাবে ভালো একজন ফেন্সার হওয়ার জন্য তোমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। তোমাদের সামনে এখনো অনেক সময় আছে। তোমরা এখন থেকে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারলে জাতীয় পর্যায়ে পদক পাবে। জাতীয় পরিসরের বাইরে গিয়েও পদক আনতে পারবে। দেশের জন্য সুনাম বইয়ে আনতে পারবে।

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। তিনি আমাদেরকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে। একটি উন্নত রাষ্ট্রের উপযোগী নাগরিক হিসেবে তোমাদেরকে গড়ে উঠতে হবে।’

সারা দেশে ফেন্সিংকে ছড়িয়ে দিতে হবে
সারা দেশে ফেন্সিংকে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মো.শামস উল ইসলাম বলেন, ‘ফেন্সিং অনেক পুরোনো একটা খেলা। বাংলাদেশে হয়তো প্রচলন কম। স্পেন থেকে উৎপত্তি হয়েছে এই খেলার। পরবর্তীতে সেটা অলিম্পিকে গিয়েছে। আমি আশা করবো ভবিষ্যতে এটি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়বে এবং কৃতিমান ফেন্সার তৈরি হবে। ফেন্সিং এসোসিয়েশনের প্রতিটি পদক্ষেপে অগ্রণী ব্যাংকের সার্বিক সহযোগিতারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

কালের আলো/জিকেএম/এমএএএমকে