সহিংসতায় শেষ দ্বিতীয় দফার ইউপি নির্বাচন, নিহত ৬
প্রকাশিতঃ 5:50 pm | November 11, 2021

কালের আলো সংবাদদাতা:
দেশের বিভিন্ন জায়গায় হানাহানি, সংঘাত ও সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে শেষ হলো ইউপি নিার্বচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ। এরই মধ্যে কেন্দ্র দখল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রায়পুরা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে প্রতিপক্ষের হামলায় ৩ জন, কক্সবাজারে একজন, চট্টগ্রামে একজন ও কুমিল্লায় একজন নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে দেশের ৮৩৫টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তবে ভোট চলাকালীন ভোটকেন্দ্রে ঢুকে জোর করে ব্যালট পেপারে সিল মারা, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়াসহ ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
সকাল থেকে ভোটকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় চার জেলায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদীতে বেশি তিনজনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন কয়েকজন। এছাড়া কক্সবাজারে সহিংসতায় একজন, কুমিল্লায় সংঘর্ষের সময় গুলিতে একজন এবং চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে লেলাং ইউনিয়নে দুই মেম্বার পদপ্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন।
জানা গেছে, ৮৪৮টি ইউপির তফসিল ঘোষণা হয় ৮৩৮ ইউপিতে। চারটি ইউপির ভোট স্থগিত করা হয়েছে। একটির ভোট বাতিল করা হয়েছে। আর পাঁচটিতে সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের তেতৈয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। ওই ওয়ার্ডের দুই মেম্বার প্রার্থী শেখ কামাল ও আবু বক্কর ছিদ্দিকের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুতু নামে শেখ কামালের এক কর্মী মারা যান। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৬-৭ জন।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে দুই ইউপি মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে মোহাম্মদ শফি (৫৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
কুমিল্লার মেঘনায় ভোটকেন্দ্রে বহিরাগতদের হামলায় শাওন আহমেদ (২৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন আরও চারজন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে উপজেলার মানিকারচর ইউনিয়নের আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
দেশের দশম ইউপি নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮টি ইউপির তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু পরে তালিকা থেকে একটি ইউপি বাদ দেওয়া হয়। স্থগিত করা হয় সাতটি ইউপির ভোট। এছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাঁচটি ইউপির সবাই নির্বাচিত হন।
দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৮১ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৭৩ জন ও সাধারণ সদস্য (মেম্বার) পদে ২০৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ইসির যুগ্ম-সচিব এসএম আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
বিনা ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। ১৮টি জেলার ২৮টি উপজেলায় এসব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এই উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে কোনো ভোটগ্রহণ হচ্ছে না।
এর আগে প্রথম ধাপে ৩৬৯ ইউপির ৬৯ জন চেয়ারম্যান ভোটের আগে নির্বাচিত হন। ফলে প্রথম দুই ধাপের নির্বাচনে ১৫০ জন চেয়ারম্যান বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। মূলত দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি এই নির্বাচনসহ সব নির্বাচন বর্জন করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
প্রথম ধাপে দেশের ৩৬৪ ইউপির ভোট হয়েছে। তৃতীয় ধাপে এক হাজার ৩ ইউপির ভোট হবে আগামী ২৮ নভেম্বর। চতুর্থ ধাপে ৮৪০ ইউপিতে আগামী ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
কালের আলো/টিআরকে/এসআইএল