মাদক ব্যবসার নেপথ্যে কারা, জানালেন র‍্যাব ডিজি

প্রকাশিতঃ 8:14 pm | October 27, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

মাদকের দু-একজন গড ফাদার নিয়ে মাতামাতি চললেও মাদকবিরোধী অভিযানে পরিচালনা করতে গিয়ে এর বাইরেও মাদকের ভিন্ন জগত আবিষ্কৃত হয়েছে। মাদকের মূল ব্যবসায় অন্য লোকের সন্ধান পাওয়া গেছে। এখন কাটঅফ পদ্ধতিতে মাদকের ব্যবসা চলছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ।

শনিবার (২৭ অক্টোবর) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (এফডিসি) মিলনায়তনে ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সদিচ্ছা’ শীর্ষক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানে নেমে আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। ২/১ জনজন গডফাদার নিয়ে মিডিয়াতে মাতামাতি চলে। কিন্তু মাদকের একটা ভিন্ন জগৎ আবিষ্কার করলাম। মূল বিজনেসে দেখি অন্য লোক। অনেক আননোন লোকজন এ ব্যবসা করছে। অভিনব সব কায়দায় তারা ইয়াবা পাচার করছে।

এ অভিযান শুরুর পর মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে র‌্যাব ১৭ হাজার জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথমে আমরা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে গেছি, তারপর ডিলারদের কাছে। এরপর ক্যারিয়ারের কাছে গেছি, এরপর যারা ইনভেস্ট করছে, যারা আমদানি করছে এখন তাদের দিকে যাচ্ছি। তারা কাট অফ পদ্ধতিতে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে, তারপরও আমরা ওই জায়গায় পৌঁছেছি।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় মিডিয়াতে গডফাদার হিসেবে ২-১ জনকে ইন্ডিকেট করে আসছে। তার পকেটে কী ইয়াবা আছে, তার বাড়িতে কী ইয়াবা আছে, সে কী ইয়াবার চালান নিয়ে আসে? তার আশ-পাশের লোকজন হয়তো এর সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ওই আশ-পাশের ২-১ জন কিন্তু নাই।

মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে তদবিরের জন্য গত ৫ মাসে কোনো ফোন পাইনি। যেখানে জনগণের সহযোগিতা চেয়েছি সেখানেই পেয়েছি। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া মাদক নির্মূল সম্ভব না। রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি জনগণের সদিচ্ছা থাকলে এ যুদ্ধে অবশ্যই জয়ী হব- যোগ করেন তিনি।

কক্সবাজারে ২৩ লাখ মানুষের বসবাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওখানকার ২৩ লাখ মানুষ কী ইয়াবার ব্যবসা করে? নাকি এক লাখ মানুষ ব্যবসা করে? মাত্র গুটিকয়েক লোক এ ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাদের সামাজিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। কক্সবাজারের ৪-৫ শ’ বা হাজারখানেক লোক যদি বাংলাদেশের সঙ্গে না থাকে তাহলে কী খুব সমস্যা হবে?

ভারত থেকে ফেনসিডিল আসতো, সে দেশে ফেনসিডিলের কারখানা কিন্তু সেখানকার যুব সমাজ তো ফেনসিডিল খায় না। শুধুমাত্র মিয়ানমার থেকে এখন ইয়াবা আসছে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু যেসব রোহিঙ্গারা এ দেশে ইয়াবা পাচার করে তাদের তাড়ায়নি। মিয়ানমারের লোকতো ইয়াবা খায় না, আমরা কেন খাই? আমরা কেন ১ লাখ কোটি টাকা ধ্বংস করে দিচ্ছি?

তরুণ সমাজের কাছে আমার প্রশ্ন, আমরা কেন ওদের ভিকটিম হবো? যারা ব্রিটিশ আমলে জন্মগ্রহণ করেছে তাদের মনে ব্রিটিশ পাকিস্তান প্রীতি থাকতে পারে। যারা পাকিস্তান আমলে জন্ম নিয়েছে, তাদের কারো মনেও পাকিস্তান প্রীতি থাকতে পারে। কিন্তু তোমাদের জন্ম তো বাংলাদেশে, তোমার দেশ তো একটাই।

অপরাধীরা অপরাধ করে মানে তারা শক্তিশালী নয়। শক্তিশালী মেজরিটি, কিন্তু তারা সাইলেন্ট থাকে। মাদকের ১ লাখ কোটি টাকার ইকোনোমিতে শিক্ষক, পুলিশ থেকে শুরু করে এমন কোনো পেশা নেই, যে সেই পেশার লোক জড়িত নেই। কিন্তু এ সমাজ থেকেই তো বিভিন্ন পেশাতে রিক্রুট করা হয়, তাদের তো ফ্যাক্টরিতে তৈরি করা হয় না। তারা কেন মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে গেল? সেজন্য প্রথমে আমাদের নিজেদের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে।

সামনে নির্বাচনের কারণে একটু অন্যদিকে নজর দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের পর মাদকবিরোধী এ অভিযানকে আরো গতিশীল করা হবে। সরকারের সদিচ্ছার সঙ্গে জনগণের সদিচ্ছার মেলবন্ধন করতে পারলে আমরা সব পারব। আমরা প্রত্যাশা করছি, এ যুদ্ধে সবার সমর্থন পাব, ব্যক্তিগত এবং সাংগঠনিকভাবে কেউ বাঁধা হয়ে দাঁড়াবেন না।

মাদকের জন্য প্রতি জেলায় আলাদা করে বিশেষ আদালত স্থাপনের প্রস্তাব জানিয়ে তিনি বলেন, এখন যেসব মামলা হচ্ছে দেখা যাবে এই গতিতে চললে বিচার শেষ হতে ২০২৮ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে। অনেক বিচারক অবসরে রয়েছে। একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ এবং একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে একটি আদালত তৈরি করা হোক। বিচারে আসামি খালাস পাক কিন্তু তবুও বিচারটা হোক।

ছায়া সংসদে সরকারি দল মাদক নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সদিচ্ছাই যথেষ্ট বলে মত দেন এবং এ সংক্রান্ত একটি বিল সংসদে উত্থাপন করেন। তবে বিরোধীদল এর বিরোধীতা করে শুধুমাত্র রাজনৈতিক সদিচ্ছাতেই মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন।

দুই দলের যুক্তি উত্থাপন শেষে বিচারকরা সরকারি দল অর্থাৎ বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাসন অ্যান্ড টেকনোলজিকে বিজয়ী ঘোষণা করে।

কালের আলো/এনএম