সশস্ত্র বাহিনী দিবস গৌরব ও অনুপ্রেরণার চিরন্তন উৎস : সেনাপ্রধান

প্রকাশিতঃ 10:30 am | November 21, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলোঃ

সশস্ত্র বাহিনী দিবসকে গৌরব ও অনুপ্রেরণার চিরন্তন উৎস উল্লেখ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘একুশে নভেম্বর’ সশস্ত্র বাহিনীর ইতিহাসে ঐক্য আর ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন ।

তিনি বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় বীর সেনানীরা মুক্তিকামী আপামর জনতার সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে দেশমাতৃকাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে জল, স্থল ও আকাশপথে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে অপ্রতিরোধ্য আক্রমণের সূচনা করেছিল। যার ফলে ত্বরান্বিত হয় আমাদের চূড়ান্ত বিজয় এবং বিশ্ব মানচিত্র স্বাধীন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ । এ কারণেই একুশে নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে আমাদের গৌরব ও অনুপ্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে ।

রবিবার (২১ নভেম্বর) ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে সেনাপ্রধান এসব কথা বলেন।

দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্যকে প্রাণচালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০২১ সাল বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায় । এ বছরে করোনা মহামারীর শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে আমরা একই সাথে উদযাপন করছি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে স্থাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন করতে পেরে সত্যিই আমরা আনন্দিত।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর ৫০ বছরের পথ পেরিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের “সোনার বাংলা” আজ স্বপ্ন নয়, বরং একটি বাস্তবতা । বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ আজ গর্বিত দেশ হিসেবে মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে। পরাধীনতার গ্লানি ও শৃঙ্খল থেকে মুক্তি, অর্থনৈতিক উন্নতি এবং গণমানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে শুরু হয়েছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম । সেই চেতনাকে ধারণ করে বাংলাদেশের আজকের এই অর্জন নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য গর্বের এবং মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল চেতনার বাস্তব প্রতিফলন।

সেনাপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় আমাদের স্বাধীনতা যুন্ধ। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত লাল-সবুজের এই পতাকা আমাদের গর্বের প্রতীক।

তিনি বলেন, আমাদের প্রাণধিয় সশস্ত্র বাহিনীকে একটি আধুনিক ও দক্ষ বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃতক ও সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি; দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি ২১ শতকের যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এখন অধিকতর দক্ষ ও যুগোপযোগী ।

ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি-২০১৮’ এবং ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০” বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি আধুনিক ও সক্ষম বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে অত্যাধুনিক অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সরঞ্জাম সংযোজন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

‘এরই ধারাবাহিকতায় সাজোয়া বাহিনীতে ট্যাংক এমবিটি-২০০০, ট্যাংক ভিটি-৫, গোলন্দাজ বাহিনীতে অত্যাধুনিক অরলিকন রাডার কন্ট্রোল গান সিস্টেম, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, পদাতিক বাহিনীতে অটোমেটিক এবং রকেট চালিত গ্রেনেড লঞ্চার, ট্যাংক বিধ্বংসী কমিউনিকেশন সিস্টেমসহ নতুন প্রজন্মের নানাবিধ সরঞ্জাম সংযোজিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, সেনাবাহিনীতে আধুনিক ও নিরাপদ বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক রাডার রিলে স্টেশন, রাডার রিলে রিপিটার স্টেশন, দূরপাল্লার ওয়ারলেস সেট এবং প্রথমবারের মত অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম সংযোজিত হয়েছে। আর্মি এভিয়েশনে সংযোজিত হয়েছে অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার এবং বিমান যা এককভাবে জনবল, রশদ ও সরঞ্জামাদি স্থানান্তরের পাশাপাশি জরুরি রোগী স্থানান্তরের জন্যও ব্যবহৃত হচ্ছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সরকার কর্তৃক গৃহীত দেশ গঠনমূলক কার্যক্রম যেমনঃ ছবিযুক্ত ভোটার আইডি কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র, ই-পাসপোর্ট প্রস্তুত, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, রাস্তা নির্মাণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ/মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার মাধ্যমে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

‘শান্তিচুক্তি পরবর্তী পার্বত্য চষ্টখামে শান্তিরক্ষা এবং আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া, বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ ছোট আয়তনের দেশ হয়েও জাতিসংঘ মিশনে সর্বোচ্চ সংখ্যক শাস্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশের সম্মান অর্জনসহ বিশ্ব শাস্তি স্থাপনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছে।’

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তির এই মাহেন্দ্রক্ষণে দেশের জনগণের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার নিমিত্তে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্থীকারের জন্য সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মত সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আর্তমানবতার সেবা প্রদানসহ বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মকান্ডে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে অনন্য ভূমিকা রাখতে বন্ধপরিকর ।

শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অনুপ্রাণিত সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য আগামীতেও দেশ ও জাতির প্রয়োজনে যে কেনো ধরনের ত্যাগ স্থীকার করে দেশের স্থাধীনতা ও সার্বভৌমতৃ রক্ষার্থে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

কালের আলো/বিএস/এমএম