ভোটকেন্দ্রে বিজিবি সদস্য নিহতের ঘটনায় সাবেক চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

প্রকাশিতঃ 6:32 pm | December 14, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলোঃ

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের গড়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী ও তার সমর্থকদের হামলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক সদস্যের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত সাবেক এক চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তার নাম মারুফ হোসেন অন্তিক।

র‌্যাব জানায়, মারুফ কিশোরগঞ্জ থানাধীন গড়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদে জাতীয় পার্টি থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মারুফের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটের তুলনায় সামান্য পিছিয়ে থাকায় ফলাফল পরিবর্তনের জন্য (সম্পূর্ণ ভোট তার পক্ষে দেওয়ার জন্য) প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে আটকে রেখে চাপ দিতে থাকেন।

প্রিজাইডিং কর্মকর্তা অপারগতা প্রকাশ করলে গ্রেফতার মারুফসহ তার প্রায় শতাধিক সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, অন্যান্য নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি, কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা করে।

এ সময় নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত সরকারি যানবাহন ও নির্বাচন কেন্দ্রে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। এরপরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিজিবি টহল দল উপস্থিত হলে মারুফ হোসেন ও তার সমর্থকরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিজিবি সদস্যদের ওপর চড়াও হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে গুরুতর জখমের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নায়েক রুবেল ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন।

মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা জানান।

তিনি বলেন, গ্রেফতার মো. মারুফ হোসেন কিশোরগঞ্জ উপজেলায় গড়াগ্রাম ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। তার বাবা মোসাদ্দেক হোসেন একই ইউনিয়নে ১৯ বছর ধরে চেয়ারম্যান ছিলেন। তার বাবা ২০১৭ সালে মৃত্যুবরণ করলে তিনি উপ-নির্বাচনে জয়ী হন।

নির্বাচনের দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, মারুফ পরিসংখ্যান ও তথ্য নিয়ে দেখেন নির্বাচনে জয়ী হতে হলে নিজ কেন্দ্র পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সব ভোট তার প্রয়োজন। তাই ওই কেন্দ্রের সব ভোট নিজের দখলে নেওয়ার জন্য পেশীশক্তি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। মারুফ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে থেকেই কেন্দ্র দখল এবং প্রয়োজনে হামলা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ভোট চলাকালে বিকেল ৩টায় মারুফের ২০/৩০ জন সমর্থক জাল ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে প্রবেশ করে। তখন দায়িত্বরত পুলিশ ও নির্বাচনী কর্মকর্তারা তাদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা করলে মারুফের সমর্থকরা সংশ্লিষ্টদের গালাগালসহ লাঞ্ছিত করে। পরে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার বিষয়টি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে জানালে তিনি ভোট বন্ধ করার নির্দেশ দেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, পরে বিকেল সাড়ে ৪টায় ভোট গণনা শুরু হয়। ইতোমধ্যে অন্য আটটি কেন্দ্রের ফলাফল বিশ্লেষণে মারুফ নিকটতম প্রার্থীর ভোটের তুলনায় সামান্য পিছিয়ে রয়েছে বলে জানতে পারেন। তাই তিনি নিজ এলাকার কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেওয়ার জন্য প্রিজাইডিং অফিসারকে আটকে রেখে চাপ দিতে থাকেন। প্রিজাইডিং অফিসার অপারগতা প্রকাশ করলে তিনিসহ তার প্রায় শতাধিক সমর্থকসহ বিভিন্ন ধারাল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ, কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা করে।

এ হামলার ঘটনার কেন্দ্রটিতে বিজিবির একটি দল টহল দিতে আসে। পরে আবার রাত সাড়ে ৮টায় মারুফ হোসেন ও তার সমর্থকরা ধারাল অস্ত্র নিয়ে বিজিবি সদস্যদের ওপর চড়াও হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে গুরুত্বর জখমের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নায়েক রুবেল ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ইউপি নির্বাচন বেশ কয়েকটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে র‍্যাবও দায়িত্ব পালন করেছে। নির্বাচনী কেন্দ্রের বাইরে এলিট ফোর্স হিসেবে কাজ করেছে। উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে আমরা নির্বাচনী নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করি। ইউপি নির্বাচনে গ্রাম পর্যায়ে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সেগুলো নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা সেভাবে ফোর্স মোতায়েন করেছি। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় কোনো প্রার্থী তার নিজের কেন্দ্রে জয়ী হওয়ার জন্য গ্রামের লোকজন জড়ো করে সহিংসতার চেষ্টার করে বা করে। সেক্ষেত্রে অনেক সময় এ ধরনের নির্বাচনী সহিংসতা জন্ম নেয়। এসব ঘটনায় আমরা সহিষ্ণুতার পরিচয় দেয়। অপচেষ্টাকারী উত্তেজিত জনতাকে আমরা সহিংসতা না করার জন্য বোঝানোর চেষ্টার করি।

কালের আলো/টিআরকে/এসআইএল