গণভবনে সাড়ে তিন ঘণ্টার সংলাপে যা হলো

প্রকাশিতঃ 10:07 am | November 02, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলোঃ

আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের বহুল প্রতিক্ষিত সংলাপ সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয় এই সংলাপ। যা শেষ হয় রাত ১০টা ৪০ মিনিটে।

এর আগে, সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিট থেকে গণভবনে প্রবেশ করতে থাকেন ঐক্যফ্রন্ট এবং আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ব্যাংকুয়েট হলে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সংলাপ শুরু হয় এবং তার সমাপনী বক্তব্য দিয়েই শেষ হয় সংলাপ প্রক্রিয়া।

এর মাঝে কিছুটা বিরতি নিয়ে নৈশভোজ সেরে নেন আওয়ামী লীগ, ১৪ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। নৈশভোজের আগে ও পরে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

পরে নিজ বাসভবনে ড. কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সবার কথা শোনার পর প্রধানমন্ত্রী লম্বা বক্তৃতা দেন। তবে বিশেষ সমাধান আমরা পাইনি। শুধু একটা ব্যাপারে, সভা-সমাবেশের ব্যাপারে উনি যেটা বললেন, একটা ভালো কথা বলেছেন।’

সংলাপ শেষে সংবাদ সম্মেলনে কামালের আহ্বানে গণফোরামের কার্যকরি সভাপতি সুব্রত চৌধুরী এসব বিষয়ে তাদের আলোচনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘সংলাপের শুরুতে ড. কামাল হোসেন সূচনা বক্তব্য রেখেছেন। এরপর বিএনপি মহাসচিব ৭ দফা দাবি তুলে ধরেছেন।’

সভা-সমাবেশে বাধা অপসারণের আশ্বাস পাওয়ার কথা জানিয়ে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ঢাকাসহ সারাদেশে সভা-সমাবেশে কোনো বাধা থাকবে না। এ ব্যাপারে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।’

রাজনৈতিক মামলা থাকলে তার তালিকা প্রধানমন্ত্রী চেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উনি বলেছেন, তালিকা আপনারা দেন। আমি অবশ্যই বিবেচনা করব যাতে হয়রানি না হয়।’

উত্থাপিত দাবি-দাওয়া নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনার দ্বার খোলা রাখার প্রতিশ্রুতিও প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন বলে জানান সুব্রত।

খালেদা জিয়ার মুক্তির যে বিষয়টি বিএনপির সবার আগে আনছে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন- সাংবাদিকরা জানতে চান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে। বিমর্ষ মুখে থাকা বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সুনির্দিষ্ট কিছু বলেননি। তিনি বলেছেন, এ নিয়ে পরবর্তীতে আরও আলোচনা হতে পারে।

বিরোধ সমাধানের আগে নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা হবে কি না- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা তফসিলের বিষয়ে বলেছি। উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, তফসিল দেওয়ার এখতিয়ার নাই। সেটা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।

এর মধ্যে কামাল বলেন, আমরা সংলাপের সুযোগ পেয়েছি। আমরা আমাদের কথা বলে এসেছি উনাকে। উনি জানতে পেরেছেন। উনি উনার কথাগুলো বলেছেন। উনার মনের কথাও আমরা কিছুটা জানতে পেরেছি।

বিএনপি কি এতে আশাবাদী- প্রশ্ন করা হলে ফখরুল বলেন, আমি তো বলেছি যে ভাই আমি খুব সন্তুষ্ট নই। সেক্ষেত্রে সংলাপে কী অর্জন হয়েছে- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব কিছুটা বিরক্ত ভঙ্গিতে বলেন, সব সময় কি সব অর্জন হয় না কি?

এসময় পাশে থাকা জেএসডি সভাপতি ও ফ্রন্টের মুখপাত্র আ স ম আবদুর রবও বলে ওঠেন, একদিনে সব অর্জন হয় না। আমরা ৭ দফা দিয়েছি, মানা না মানার দায়িত্ব সরকারের। আমাদের আন্দোলন চলবে, বলেই সংবাদ সম্মেলনের ইতি টানেন রব।

অন্যদিকে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সংলাপে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। ড. কামাল হোসেনসহ অন্যান্য নেতারা যে যা বলতে চেয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অখণ্ড মনোবলে সবার কথা শুনেছেন। একেকজন দুই বার, তিন বার বক্তব্য রেখেছেন, কেউ বাধা দেয়নি। আমাদের নেতারাও বক্তব্য রেখেছেন। তারা কিছু অভিযোগ করেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদেরও বলার ছিল; আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি।’

তিনি বলেন, ‘অনেক বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, সভা-সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু রাস্তা বন্ধ না করে, কোনো একটা মাঠে- তাদের বলা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের জন্য একটি কর্নার করে দেওয়া হবে।’

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষক আসবে, সে ক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমাদের সমর্থন থাকবে। স্বল্প পরিসরে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহারেও আমাদের আপত্তি নেই।’

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কেয়ারটেকার সরকারের সময় এই মামলাগুলো দেওয়া হয়েছিল। কেয়ারটেকার সরকারে যারা ছিল, তারা তো বিএনপির লোক ছিল। এ বিষয়ে আমাদের বলার বা করার কী আছে? এই মামলাগুলোর বিষয়ে আদালতেই ভালো বুঝবে।’

সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আলোচনা হয়েছে। সংবিধানের মধ্যেই আমরা কথা বলেছি। সংবিধানের আলোকে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা গঠনমূলক হয়েছে।’

আলোচনা কি আজই শেষ? না আরও হবে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোয়ায়েল আহমেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় আলোচনা হতে পারে। আমরা তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বলেছি।’