স্বল্প পুঁজিতেও দুপুটে জয় বাংলাদেশের

প্রকাশিতঃ 7:58 pm | January 23, 2018

কালের আলো ডেস্ক: হুড়মুড়িয়ে ব্যাটিং অর্ডার ভেঙে পড়ায় তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসানের হাফ সেঞ্চুরির কথা ততক্ষণে ভুলে গেছে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দর্শকরা। তামিম-সাকিবের হাফ সেঞ্চুরি যে উন্মাদনা দিতে পারেনি, সেটা একটা ছক্কা হাঁকিয়েই দিয়ে দিলেন রুবেল হোসেন। বাতাসে ভাসিয়ে বল সীমানা ছাড়া করে ব্যাট তাক করে রাখলেন ডানহাতি এই পেসার। সাথে সানজামুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমানের দায়িত্বশীল ব্যাটিং। তাতে বাংলাদেশ পৌঁছায় ২১৬ রানে। আর এই পুঁজিতেই হেসে খেলে জয়।

ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে মঙ্গলবার জিম্বাবুয়েকে ৯১ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে পুরো ইনিংসেই নড়বড়ে ছিলো মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। তামিম ও সাকিবের হাফ সেঞ্চুরির পর দিক হারানো বাংলাদেশ তিন বোলারের ব্যাটে চড়ে ২১৬ রানে পৌঁছায়। জবাবে এই রানই দূরের লক্ষ্য বানিয়ে ফেলে জিম্বাবুয়ে। মাশরাফি, সাকিব, সানজামুল, মুস্তাফিজদের বোলিংয়ে ৩৬.৩ ওভারে ১২৫ রানেই অলআউট হয়ে যায় গ্রায়েম ক্রেমারের দল। ত্রিদেশীয় সিরিজে এটা বাংলাদেশের টানা তৃতীয় জয়।

ব্যাট হাতে ধুঁকতে থাকার শোধটা বল হাতে শুরুতেই নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। শুরুটা করে দেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। জিম্বাবুয়ের ওপেনার হ্যামিলটন মাসাকাদজাকে স্লিপে ক্যাচ দিতে বাধ্যই করিয়েছেন মাশরাফি। অধিনায়কের সাথে যোগ দেন সাকিব আল হাসান। দুটি করে উইকেট নিয়ে মুহূর্তেই জিম্বাবুয়ের ইনিংস লণ্ডভণ্ড করে দেন মাশরাফি-সাকিব। ৩৪ রানের মধ্যেই চার উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ে তখনই হারের শঙ্কায়।

এমন সময় কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ক্রেইগ আরভিন ও সিকান্দার রাজা। যদিও তাদের জুটি ৪০ ছাড়াতে পারেনি। ২৩ তম ওভারে দুই বলে পরপর ক্রেইগ আরভিন ও ম্যালকম ওয়ালারকে ফিরিয়ে দেন বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল ইসলাম। এরপর সিকান্দার রাজার সঙ্গে যোগ দিয়ে হারের ব্যবধান কমিয়েছেন অধিনায়ক গ্রায়েম ক্রেমার। তার ব্যাট থেকে আসে ২৪ রান। রাজা ৫৯ বলে চারটি চার ও একটি ছয়ে সর্বোচ্চ ৩৯ রান করেন। জিম্বাবুয়ের ইনিংস থামে ১২৫ রানেই। সাকিব সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন। মাশরাফি, সানজামুল ও মুস্তাফিজ দুটি করে উইকেট পান। রুবেলের শিকার এক উইকেট।

এরআগে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ যেন কয়েক বছর পেছনে ফিরে গিয়েছিলো। যখন জিম্বাবুয়ের বোলারদের বিপক্ষেও রান তুলতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হতো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। ২১৬ রান তোলার ধরণ সেটাই বলে। এদিন গ্রায়েম ক্রেমার, কাইল জারভিসরা বল হাতে ছড়ি ঘুরিয়েছেন। দলের স্কোর বাড়াতে ১০৬ রানের জুটি গড়া তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসানকে দিতে হয়েছে কঠিন পরীক্ষা। বোলার হয়েও ব্যাট চালানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে সানজামুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেনদের।

ইনিংসের শেষ অংশে ব্যাট হাতে বিনোদনই দিয়েছেন এই তিন বোলার। ১৭০ রানে আট উইকেট হারানো দলকে ২১৬ রানে পৌঁছে দিয়েছেন এই তিনজনই। সানজামুল ১৯ রান করে ফিরেছেন। তবে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছেন মুস্তাফিজ ও রুবেল হোসেন। রুবেল চার বলে এক ছয়ে আট রান করেন। মুস্তাফিজ খেলেন তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। আগের ২৪ ওয়ানডের ১০ ইনিংসে ব্যাট করে ৯ রান করা বাংলাদেশের বাঁহাতি এই পেসার ২২ বলে দুই চারে ১৮ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।

বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুর এবং মাঝের গল্পটা ভালো ছিলো না। আগের দুই ম্যাচে তেড়েফুরে শুরু করা বিজয় এদিন অনেকটাই ঠান্ডা মেজাজে খেলতে চাইলেন। এতেও সাফল্য ধরা দেয়নি। প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৯ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৫ রান করা বিজয় সাত বলে এক রান তুলে ফেরেন সাজঘরে। আবারো দায়িত্ব তামিম-সাকিবের কাঁধে। আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯৯ রানের জুটি গড়া এই দুই ব্যাটসম্যান জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও দলকে পথ দেখিয়েছেন। এদিন আরো সাত রান বেশি করেছেন তামিম-সাকিব। গড়েন ১০৬ রানের জুটি। এসময় দুজনই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি।

৫০ পেরিয়ে সাকিব আর এগোতে পারেননি। ৮০ বলে ছয় চারে ৫১ রান করে বিদায় নেন তিনি। প্রথম দুই ম্যাচে ৮৪ রান করে করা তামিম সেঞ্চুরির পথেই হাঁটছিলেন। কিন্তু এদিনও তাকে হতাশায় পুড়তে হয়। ১০৫ বলে ছয় চারে ৭৬ রান করে সাকিবের মতো তামিমও স্টাম্পিংয়ের শিকার হন। এরআগেই অবশ্য দুটি রেকর্ড গড়ে ফেলেন ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা বাঁহাতি এই ওপেনার। এই ইনিংস দিয়েই এক ভেন্যুতে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের মালিক ও বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ছয় হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তামিম।

কিন্তু তামিমের বিদায়ের পরই ছত্রখান হয়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। ২৩ রানের ব্যবধানে ছয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। একে একে ফিরে যান মুশফিকুর রহিম (১৮), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (২), সাব্বির রহমান (৬), নাসির হোসেন (২) ও অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা (০)। তখন দুই শ’র আগেই অলআউট হওয়ার শঙ্কা। কিন্তু সানজামুল, মুস্তাফিজ ও রুবেলের ব্যাটিংয়ে ২১৬ রানে পৌঁছায় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক গ্রায়েম ক্রেমার সর্বোচ্চ চারটি এবং কাইল জারভিস পান তিন উইকেট। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন তেন্ডাই চাতারা ও সিকান্দার রাজা।