গণমাধ্যমের মুখোমুখি জেনারেল শফিউদ্দিন, যুগোপযোগী চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগোতে চান বিওকে

প্রকাশিতঃ 5:48 am | December 28, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

দলগত কাজে বিশ্বাস করেন বলেই কীনা সমন্বিত দক্ষতাকে কাজে লাগাতে চান। আগের চেয়ে ভালো করতে চান। উপহার দিতে চান দৃশ্যমান কিছু। হুটহাট নয়, নির্বাহী কমিটির সভা করেই নির্ধারণ করতে চান ‘অ্যাকশন প্ল্যান’। নিজের ভাবনা-চিন্তার অগ্রভাগেই রাখতে চান অলিম্পিককে। পদক জয়ের সুযোগ আছে এমন ইভেন্টগুলো বাছাই করে দিতে চান বাড়তি গুরুত্ব।

আরও পড়ুনঃ স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অপার দেশপ্রেমের প্রতি শ্রদ্ধা-কৃতজ্ঞতা সেনাপ্রধানের

কেবলই তাই নয়, ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ অলিম্পিকের মতো বড় প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেতে কী কী করা প্রয়োজন এসবও যেন গেঁথে নিয়েছেন নিজের হৃদয়-মস্তিষ্কে। এই বিশ্ব আসরে পদক জয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন গেমসে বাড়াতে চান পদকের সংখ্যা। গ্রহণ করতে চান যুগোপযোগী চ্যালেঞ্জ।

আরও পড়ুনঃ ‘ক্রীড়াবীদ’ সেনাপ্রধানের ‘সোনালী অধ্যায়’, অলিম্পিকের নেতৃত্বেও কাজে লাগাতে চান ‘অভিজ্ঞতা’

বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের (বিওএ) ১৬ তম সভাপতি হিসেবে আনুষ্ঠানিক দায়িত্বভার গ্রহণ করে সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েই যেন নিজের বাস্তবিক স্বপ্ন, পরিকল্পনা ও লক্ষ্যই মোটা দাগে নিজের জবানীতে তুলে আনলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড. এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। নিজ নেতৃত্বাধীন এসোসিয়েশনের বর্ণাঢ্য পথযাত্রায় তিনি সংযোজন করতে চান নতুন প্রাণাবেগের।

এদিন নতুন কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হওয়ার পর বিওএ সভাপতি হিসেবে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। লক্ষ্যপূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘আশীর্বাদ’ এবং নিজেদের ‘ইচ্ছা’কে এক সুতোয় গেঁথে বিশ্ব পরিমন্ডলে লাল-সবুজের পতাকা গর্বের সঙ্গে উড়ানোর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে চান অলিম্পিক এসোসিয়েশনের চির স্বপ্নবাজ এই সভাপতি।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই সব সময় নতুন নতুন কনসেপ্টে বিশ্বাসী জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বরাবরই নিজেকে একজন ‘চেঞ্জ মেকার’ হিসেবে প্রমাণ করেছেন। ফলে শতবর্ষীর পুরনো মন্ত্র ‘হার জিত বড় নয়, অংশগ্রহণই বড় কথা’ এর বদলে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় দীর্ঘমেয়াদি ছকে খুলে দিতে চান সাফল্যের দরজা। যারপরেনাই তার হাত ধরেই জ্বলতে শুরু করেছে আশার প্রদীপ।

এই পরিচিতি সভায় বিওএ’র নতুন সভাপতিকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা ও সহ-সভাপতি মাহবুব আরা বেগম গিনি এমপি।

ভাগ্যবান মনে করেন নিজেকে, কৃতজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি
মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আর শতাব্দীর মহানায়ক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আনন্দ উচ্ছ্বাসের অবগাহনে জেনারেল শফিউদ্দিন দায়িত্ব নিয়েছেন বিওএ’র সভাপতি হিসেবে। এ কারণেই নিজেকে ‘ভাগ্যবান’ মনে করেন।

সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার ওপরে আস্থা রাখার জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি যে আস্থা আমার ওপর রেখেছেন আমি তার প্রতিদান দেয়ার চেষ্টা করবো।’

নতুন মাত্রায় উপস্থাপন প্রধানমন্ত্রীর ক্রীড়ানুরাগকে
প্রধানমন্ত্রীর ক্রীড়ানুরাগকে নতুন মাত্রায় উপস্থাপন করে সেনাপ্রধান বলেন, আমি ও শাহেদ (বিওএ মহাসচিব) ভাই দীর্ঘক্ষণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি ক্রীড়াকে খুবই ভালোবাসেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বলেছেন, তোমাদের কি কি লাগবে? তিনি সেগুলো আমাদের দেবেন। যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদ আছে, আমাদের ইচ্ছাও আছে। ইনশাআল্লাহ কিছু করতে পারবো বলে আমাদের বিশ্বাস রয়েছে।’

নিজ সহকর্মীদের দক্ষতার প্রশংসা
দায়িত্ব নিয়েই নির্বাহী কমিটির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ পরিচিতি সভায় মিলিত হন বিওএ সভাপতি। এই কমিটির সবার দক্ষতার প্রশংসা করেন। এগিয়েও যেতে চান এই দক্ষতাকেই কাজে লাগিয়ে।

বলছিলেন এমন ‘যে কমিটি আমরা গঠন করেছি, সবাই যার যার জায়গায় একজন করে বিশেষজ্ঞ। তাদের সমন্বিত দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে একটি সাধারণ লক্ষ্য রেখেছি। যা আগের চেয়ে ভালো করার তাগিদ। ইনশাআল্লাহ আপনাদের সবার সহযোগিতা পেলে আগের চেয়ে আমরা ভালো করতে পারবো। আমাদের উদ্দেশ্য থাকবে যে দৃশ্যমান কিছু দেওয়া। এই কমিটি আগের চেয়ে ভালো করেছে, তাই বিভিন্ন ক্রীড়া ক্ষেত্রে ভালো ফল এসেছে।’

নিজের দায়িত্ব গ্রহণ সম্পর্কে বলেন ‘আমি তো কেবল মাত্র দায়িত্ব নিলাম। আমাদের প্রথম পরিচিত সভায় আমরা একমত হয়েছি যে, শিগগিরিই আমরা এক্সিকিউটিভ কমিটির সভা করবো। সেখানেই অ্যাকশন প্ল্যান হবে। তখন আমি আপনাদের একটি পরিষ্কার ধারণা দিতে পারবো কিভাবে আমরা পূর্বের চেয়ে ভালো অর্জন করতে সক্ষম হবো।’

অলিম্পিক ভিলেজ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফিজিক্যাল একটি প্রজেক্ট হয়ে থাকলে তা হবে।

লক্ষ্য বহুদূর, বিশ্বাস করেন অর্জনে
দেশের খেলাধুলাতে যেখানে সম্ভাবনা আছে, সেখানে বেশি জোর দেওয়ার কথা বললেন বিওএ সভাপতি জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। তার ভাষ্য হচ্ছে – ‘আমাদের যেসব সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র আছে, সেসব জায়গায় বেশি করে বিনিয়োগ করবো। বিভিন্ন গেমসে লক্ষ্য রাখছি যেন পদকের সংখ্যা বাড়াতে পারি। এটাই হবে আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জন। অন্যথায় আপনি কাজ কেমন করেছেন, তা বিচার করতে পারবেন না। আমরা ফোকাস করছি কোন কোন জায়গায় পদক বাড়ানো যায়।’

অলিম্পিকে পদক সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। স্বভাবতই আমি অলিম্পিক নিয়েই ভাববো। সেটা না ভেবে আমার কোনও উপায় নেই। আমরা এচিভেবল গোলে বিশ্বাস করি। আমাদের লক্ষ্য থাকতে হবে অনেক দূর। আজকে যদি আমি চাঁদে যাওয়ার চিন্তা করি, আজ হয়তো পারবো না। কিন্তু লক্ষ্য থাকা ভাল। টার্গেট হবে যেটা মডারেটলি চ্যালেঞ্জিং। হতাশা এসে যায় এমন চ্যালেঞ্জ নেওয়া ঠিক হবে না।

তিনি বলেন, ‘কালকেই আমি অলিম্পিকে ১০০ মিটারে স্বর্ণ জিতবো, সেটা আবার বেশি হয়ে যাবে। আমরা পারবো না। অলিম্পিকে ভাল করার জন্য সাফ গেমস ও এশিয়ান গেমসে ভাল করতে হবে। এগুলো বড় জায়গায় যাওয়ার একটা স্টেপ মাত্র।’

কালের আলো/এমএএএমকে