প্রথম দলে ২২৬০ রোহিঙ্গা ফেরত যাবে ১৫ নভেম্বর

প্রকাশিতঃ 10:57 pm | November 03, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

আগামী ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের প্রথম দল ফিরে যাচ্ছে মিয়ানমারে। ওই দলে থাকছে ৪৮৫ পরিবারের ২ হাজার ২৬০ জন সদস্য। এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে।

শনিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। তিনি জানান, ঢাকায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার তৃতীয় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে এ বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে রাখাইনে ট্রানজিট ক্যাম্প এবং গ্রামগুলোতে রোহিঙ্গাদের জন্য বাড়িঘর নির্মাণের কাজও চলছে।

সচিব আরো জানান, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মাধ্যমে এ প্রত্যাবাসন কাজ শুরু হচ্ছে। তবে প্রত্যাবাসন শেষ হতে কত সময় লাগবে সে ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। তবে মিয়ানমারকে যাচাই-বাছাই-এর জন্য আরও ২২ হাজার রোহিঙ্গা সদস্যের তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় এসেছেন সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এদিন সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ বিষয়ক অনুবিভাগের মহাপরিচালক নাহিদা সোবহান ইউএনএইচসিআরের প্রধানসহ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দু’দিন আগে জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘকে বাদ রাখার চেষ্টার অভিযোগ তোলা হয়।

এ ব্যাপারে আলোচনার জন্যই মহাপরিচালক জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের ডেকে পাঠান। বৈঠকে ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তারা এ অভিযোগককে জাতিসংঘ দপ্তরের তথ্যগত ভুল বলে উল্লেখ করেছেন।

পররাষ্ট্র সচিব জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়াটা সবার আগে দরকার। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই উভয়পক্ষের সম্মতিতে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের তৃতীয় বৈঠকে ১৫ নভেম্বর থেকে প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে সময় নির্ধারণ করা হয়। এ দিন চূড়ান্তভাবে যাচাই-বাছাই করা ৪৮৫ পরিবার মিয়ানমারে যাবে। তাদের বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইউএনএইচসিআরের কর্তব্যরতদের কাছে দেওয়া হবে। তারা তাদের মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেবেন। এই রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে প্রথমে ট্রানজিট ক্যাম্পে নেওয়া হবে, সেখান থেকে তিন দিনের মধ্যে তাদের নিজেদের গ্রামে পুরনো ভিটায় নিয়ে যাওয়া হবে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দুটি পৃথক টাস্কফোর্স এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া মাঠে থেকে তদারক করবে। বাংলাদেশের টাস্কফোর্সে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্নিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের নয়জন কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে থাকবেন।

এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা কত দিনের মধ্যে ফিরে যাবে জানতে চাইলে শহীদুল হক বলেন, এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। তবে আরও ২২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা এরই মধ্যে মিয়ানমারকে দেওয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব তৃতীয় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে যোগ দেওয়ার পর কপবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় রোহিঙ্গাদের তিনি জানান, রাখাইনের গ্রামে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য ভারত ২৮৫টি ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে। এ ছাড়া চীন আরও প্রায় এক হাজার ঘর নির্মাণ করছে। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করার জন্য রাখাইনে দায়িত্ব পালন করা সে দেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

এ সময় মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব তাদের আরো বলেন, রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে গেলে তাদের নাগরিকত্বের বিষয়ে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় রোহিঙ্গাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও লক্ষ্য করা যায়। কিছু রোহিঙ্গা সদস্য এ উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও কেউ কেউ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতির প্রতি তাদের অনাস্থার বিষয়টি তুলে ধরেন।

এই কর্মকর্তা আরো জানান, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটির প্রত্যাবাসনের কয়েক দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল রাখাইন পরিদর্শন করে তাদের অবস্থা সরেজমিনে দেখবে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।

তিনি আরো জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে ভারত ও চীন মিয়ানমারের প্রতি চাপ বাড়িয়েছে। এর ফলেই যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের তৃতীয় বৈঠকে আগের বৈঠকের চেয়ে মিয়ানমারের ভূমিকাও ছিল ইতিবাচক।

এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘকে বাইরে রাখা হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে সে ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এই তথ্যটি সঠিক নয়। কারণ যেদিন প্রথম দলের প্রত্যাবাসনের জন্য চূড়ান্ত তালিকা মিয়ানমারকে দেওয়া হয়, সেদিনই ওই তালিকা ইউএনএইচসিআরকেও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রক্রিয়ার প্রতিটি পর্যায়ে ইউএনএইচআরকে সম্পৃক্ত রাখা হয়েছে। এ কারণে এ ধরনের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।

এদিকে, আসিয়ানের বর্তমান চেয়ার সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণ শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় এসেছেন। তিনি রোববার সকালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন। তার এ অভিজ্ঞতা পরবর্তী আসিয়ান সম্মেলনে তিনি তুলে ধরবেন।