‘মাঝে মধ্যে সৈয়দ আশরাফের স্মৃতিশক্তি থাকে না’ বললেন ছোট ভাই শাফায়েতুল

প্রকাশিতঃ 10:40 am | November 05, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ফুসফুস ক্যান্সারে ভুগছেন বলে জানিয়েছেন তার ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ শাফায়াত ইসলাম। তিনি বলেছেন, সৈয়দ আশরাফ গুরুতর অসুস্থ। তার ফুসফুসের ক্যান্সার বর্তমানে চতুর্থ স্টেজে আছে। তিনি কাউকেই চিনতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে তার পক্ষে রাজনীতিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। আমরা এখন রাজনীতি নয়, তার চিকিৎসার দিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।

রোববার বিকেলে কিশোরগঞ্জে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জেলহত্যা দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি এসব কথা জানান।

পরে কালের আলো’র সাথে আলাপকালে  সৈয়দ শাফায়াত ইসলাম বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সম্পূর্ণ সুস্থ। তিন বা সাত দিনের মধ্যে তিনি রাজনীতিতে ফিরছেন’- এ ধরনের কথা পুরোপুরি ‘অপপ্রচার’।

দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার হাল জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে নিয়ে ফেসবুকে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে। আমরা চাই তার অসুস্থতা নিয়ে আর কোনো রাজনীতি না হোক। আপাতত তার রাজনীতিতে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। আমরা তার জন্য দোয়া চাই।’

শাফায়াত ইসলাম আরও বলেন, ভাইকে নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার ও স্বার্থসিদ্ধির চক্রান্ত হচ্ছে। তাকে নিয়ে অহেতুক গুজব ছড়াবেন না। সবার প্রতি এই অনুরোধ জানাই।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ছোট ভাই। সৈয়দ আশরাফ বর্তমানে ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কী ‘স্মৃতিশক্তি’ হারিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তার ছোট ভাই সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি পুরোপুরি স্মৃতিশক্তি হারাননি। তিনি মাঝে মধ্যে সবাইকে চিনতে পারেন, আবার কখনো পারেন না। চিকিৎসকরা তাকে সুস্থ করে তুলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। তারা এখনো আশা ছাড়েননি।’

সৈয়দ আশরাফের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানিয়ে তিনি বলেন, ৬ থেকে ৭ মাস ধরে তিনি (সৈয়দ আশরাফ) ক্যান্সারে আক্রান্ত। ক্যান্সারটা এখন ফোর্থ স্টেজে ডরমেন্ট (ঘুমন্ত) অবস্থায় রয়েছে। এটা ৪ থেকে ৫ বছরও থাকতে পারে। তবে ক্যান্সার সারা শরীরে ছড়ায়নি। বলা চলে, তার শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপও নয়, আবার ভালোও না।’

কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

ওয়ান ইলেভেনে দলের কঠিন দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রেখে শেখ হাসিনার প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

পরবর্তীতে সৈয়দ আশরাফ টানা দুইবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়ে তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর স্ত্রী শিলা ইসলামের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। মূলত ওই সময় থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে এবং দেশের নামী হাসপাতালেও তার চিকিৎসা করানো হয়।

তবে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। পরবর্তীতে গত কয়েক মাস ধরে তিনি ব্যাংককে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কিন্তু বরাবরই তার শারীরিক অবস্থার অবনতির বিষয়টি লুকানো হয় এবং গুজব হিসেবে চালিয়ে দেন কেউ কেউ।

কিন্তু সৈয়দ আশরাফ সম্পূর্ণ সুস্থ, এমন তথ্যকে প্রতারণার নামান্তর বলেই মনে করেন সৈয়দ শাফায়েতুল। গত সপ্তাহে তিনি ব্যাংককে চিকিৎসাধীন সৈয়দ আশরাফের শয্যাপাশ থেকে দেশে ফিরেন।

ওই সময়ের অবস্থার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আশরাফ ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে কানের কাছে গিয়ে আমার নাম বলেছি। আমার নাম শুনে বললেন ‘বস’। মাঝে মধ্যে তার স্মৃতিশক্তি থাকে আবার কখনো থাকে না। আমার ছেলে রাইয়ানের নাম ধরে ধরে ডাকেন।’

তিনি বলেন, আমাদের পরিবার পালাক্রমে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দেখভাল করছে। এখন তার শয্যাপাশে রয়েছে নিজের মেয়ে রিমা ইসলাম। সোমবার (০৫ নভেম্বর) আমার ছেলে রাইয়ান ব্যাংকক যাচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের রক্তের এই উত্তরাধিকার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফের প্রতিদিনের খবর রাখেন। কখনো আমার মাধ্যমে আবার কখনো অ্যাম্বাসেডরের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছেন।

তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এ ব্যাপারে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। তিনি বলেছেন, টাকা নিয়ে কোন চিন্তা-ভাবনা করতে হবে না। আশরাফের সুচিকিৎসা হবে। আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ।’

পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির এ জাতীয় রাজনীতিক বড় ভাইয়ের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়াও চান শাফায়েতুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সবাই আমার ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন।

তিনি যেন সুস্থ হয়ে আবারো আমাদের মাঝে ফিরে আসতে পারেন’ এমন কথা বলতে বলতেই ভারী হয়ে ওঠে তার কণ্ঠস্বর। নিজেকে স্বাভাবিক করে আবারো দোয়া চেয়েই ফোন রাখেন তিনি।