সেনা প্রধানের অনন্য রেকর্ড, ছাড়িয়ে গেলেন পূর্বসূরীদের
প্রকাশিতঃ 10:47 am | November 06, 2018
বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:
অনন্য এক রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। সেনা প্রধান হিসেবে তিনিই প্রথম পৃথক চারটি রেজিমেন্ট/কোরের ‘কর্ণেল অব দি রেজিমেন্ট’ নির্বাচিত হয়েছেন। অবশ্য অতীতে সেনা প্রধানরা সাধারণত দুই থেকে তিনটি রেজিমেন্ট/কোরের ‘কর্ণেল অব দি রেজিমেন্ট’ নির্বাচিত হয়েছেন সর্বোচ্চ।
কিন্তু দেশপ্রেমিক বাহিনীটির বর্তমানের এই সর্বোচ্চ কর্মকর্তা নিজের পূর্বসূরীদেরও ছাড়িয়ে গেলেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে অন্যতম সেরা এই সেনা প্রধানের সাফল্যের মুকুটে তাই এবার যুক্ত হয়েছে নতুন পালক। অসাধারণ এই রেকর্ড তাকে নিয়ে গেছে অন্য রকম উচ্চতায়, এমনটিও ভাবছেন কেউ কেউ।
আবার জেনারেল আজিজ আহমেদের এমন রেকর্ডকে ‘মাইলফলক’ও মনে করছেন অনেকেই। সব মিলিয়ে সেনা প্রধানের এমন অর্জন গোটা বাহিনীতে এসেছে খুশির খবর হয়ে। নিজের নেতৃত্বের দৃঢ়তা, সততা, দেশপ্রেম, সাহসিকতা, আদর্শের প্রতি একনিষ্ঠতা ও অঙ্গীকার সেনাবাহিনীতেও যেন তাকে করেছে পূর্ণিমার চাঁদের মতো মহিমাময়!
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেনাবাহিনীতে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেলের (কিউএমজি) দায়িত্বে থাকার সময়েই আর্টিলারী ‘কর্ণেল কমান্ড্যান্ট’ হিসেবে অভিষিক্ত হন আজিজ আহমেদ। এরপর আর্মার্ড, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও বাংলাদেশ ইনফ্র্যান্টি রেজিমেন্টের ‘৫ম কর্ণেল অব দি রেজিমেন্ট’ হিসেবে অভিষিক্ত হন এই সেনা প্রধান।
দেশপ্রেমিক ও মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনায় বিশ্বাসী সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ নিজেও বলেছেন, ‘সরকারকে জাতীয় উন্নয়নের সব পর্যায়ে ধারাবাহিক সহযোগিতার জন্য এখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত এবং বিশ্বাসযোগ্য ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।
জাতির যে কোনো দুর্যোগে সাড়া দিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ক্ষিপ্র এবং কর্মনিষ্ঠই এমন মতও দেন তিনি। মাস কয়েক আগে সেনাবাহিনীর আয়োজনে ৫ দিনব্যাপী এক প্রশিক্ষণে এমন বক্তব্যের পর মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) রাজশাহী সেনানিবাসে এক অনুষ্ঠানে সেনা প্রধান দেশপ্রেমিক এই বাহিনীর উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আকুন্ঠ চিত্তে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
দেশের যে কোন সঙ্কটময় মুহুর্তে সেনাবাহিনী পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে এমন ইঙ্গিতও মিলে বাহিনীটির প্রধানের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সেনাবাহিনী সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এই বাহিনীর সদস্যরা প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বর্তমানে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেও রয়েছে তাদের অভূতপূর্ব অবদান। এছাড়া আগামীতেও সেনাবাহিনী জাতীয় যেকোনো প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত।’
সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের এমন বলিষ্ঠ উচ্চারণে আশান্বিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দেশের সাধারণ মানুষ। গণতন্ত্র ও সংবিধান বিরোধী সকল কর্মকান্ড প্রতিহত করার মনোভাব রয়েছে তাঁর ‘আশা জাগানিয়া’ বক্তব্যে। একটি সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী দেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।
১৯৬১ সালে জন্ম নেওয়া আজিজ আহমেদের পৈতৃক ভিটা চাঁদপুরে। তার বাবা ওয়াদুদ আহমেদ বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন। জেনারেল আজিজ আহমেদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক একজন যোগ্য নেতা হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহসহ বাহিনীর সদর দফতর পিলখানায় ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের পর নিজের দক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও দেশের প্রতি কমিটমেন্ট থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দিয়ে একটি আধুনিক ও গতিশীল বাহিনীতে রূপ দেওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন আজিজ আহমেদ।
একই সঙ্গে ঠাঁই করে নিয়েছেন ইতিহাসেও। ওই সময় তিনি ছিলেন বিজিবি’র মহাপরিচালক। তাঁর হাত ধরেই একটি আস্থার বাহিনী হিসেবে গড়ে ওঠে বিজিবি। এজন্য আজো তাঁর নাম উচ্চারিত হলেই চলে অবারিত প্রশংসা।
কালের আলো/ওএইচ