ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে অতি গোপনীয়তা ব্যবস্থা বন্ধে লড়াই

প্রকাশিতঃ 7:21 pm | January 22, 2022

টেক ডেস্ক, কালের আলো:

ম্যাসেঞ্জার সেবায় এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন (ইটুইই) ব্যবস্থা চালু না করতে ব্রিটিশ জনসাধারনকে ফেসবুকের ওপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের সরকার এবং বিভিন্ন দাতব্যসংস্থার একটি জোট। ইটুইই ব্যবস্থায় মূলত সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগরত ব্যক্তিই ম্যাসেজ বা বার্তা পড়তে পারে। ফেসবুক যদি এই অতি-সুরক্ষিত ম্যাসেজিং ব্যবস্থা বাতিল না করে তাহলে আরো অনেক শিশু অনলাইন শিকারিদের খপ্পরে পড়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হবে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ম্যাসেঞ্জারে এই সুরক্ষিত ব্যবস্থা থাকবে না কি থাকবে না তা বেশ জোরেশোরেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। কারণ প্রাইভেসি ক্যাম্পেইনার এবং প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো মনে করছে ব্যক্তি গোপনীয়তা ও তথ্যের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য এই ব্যবস্থা প্রয়োজন। অনেক দেশের সরকারও এই এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবস্থা বন্ধে আগ্রহী। এ অবস্থায় ইটুইই নিয়ে লড়াই পুরো বিশ্বই নিবিঢ়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।অনেক বছর ধরেই যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং জাপানসহ ইন্টারপোল ও যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির (এনসিএ) মতো আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এই প্রযুক্তির সমালোচনা করে আসছে।

অন্যদিকে হোয়াটসঅ্যাপ, আইম্যাসেজ এবং সিগনালের মতো সেবা ব্যবহার করে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এই এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের সঙ্গে রয়েছে।

এনক্রিপশন কি?
কোন ম্যাসেজ বা বার্তা অপাঠ্য করে তুলার পদ্ধতিই এনক্রিপশন নামে পরিচিত। আমরা প্রতিদিনই না জেনেই অনলাইনে কিছু এনক্রিপশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকি। এটি মূলত আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজারে একটি ছোট্ট তালা ঝুলিয়ে দেয়ার মতো। উদাহারন হিসেবে বলা হয়, বিবিসি ওয়েবসাইট থেকে আপনি যে তথ্য পাঠাচ্ছেন ও পাচ্ছেন তা এনক্রাপ্ট করা হয়েছে। এর অর্থ কেউ এই তথ্য পড়তে পারবে না।

ইন্টারনেট ব্যাংকিং অথবা ইমেইলের মতো অনলাইন সেবার জন্য এই ব্যবস্থা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আমাদের ডিভাইস এবং ওয়েবসাইট অথবা অ্যাপের মধ্যে একটি গোপন কোড থাকে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওয়েব সার্ভিসে কোন তথ্য পাঠানোর আগে তা এনক্রিপ্ট করা হয়।

দুইশত কোটি ব্যবহারকারী নিয়ে হোয়াটস অ্যাপ সবচেয়ে জনপ্রিয় ইটুইই অ্যাপ। বর্তমানে এন্ড-টু-এন্ড ব্যবস্থা আরো এগিয়েছে। তথ্য প্রেরক ও গ্রহনকারীর মধ্যে সম্মত হওয়া কোডটি এতোটাই গোপন রাখা হয় যে তা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিও জানে না। শুধুমাত্র এন্ড ব্যবহারকারীই এই বার্তা, ছবি অথবা ফোনকলটি ডিক্রিপ্ট করতে পারে।

অতি-গোপনীয়তা পছন্দ করে এমন ব্যাক্তিদের কাছে এই ব্যবস্থা খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু বিভিন্ন দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে তা পছন্দসই হচ্ছে না কারন এক্ষেত্রে ম্যাসেজ পড়া যাচ্ছে না, ছবি দেখা যাচ্ছে না , ফোনের কথা শুনতে পাচ্ছে না তারা। এমনকি সন্দেহভাজন অপরাধমূলক কার্যক্রমের ক্ষেত্রেও এগুলো তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে। শিশুদের জন্য বিষয়টি খুব মারাত্মক হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নো প্লেস টু হাইড নামের একটি ক্যাম্পেইন দলের মুখপাত্র এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এন্ড-টু-এন্ড এনক্রাপশন অনলাইনে শিশু যৌণ নির্যাতনকারীরেদের শনাক্তকরার ক্ষমতা কমে আসবে।’ক্যাম্পেইনাররা বলছেন শিশুদের রক্ষা ও গোপনীয়তা সুরক্ষার জন্য তারা প্রযুক্তিকোম্পানিগুলোর সঙ্গে কাজ করতে চায়। শিশু নিরাপত্তা গ্রুপগুলোর চাপের মুখে গত নভেম্বরে প্যারেন্ট কোম্পানি মেটা ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার এবং ইনস্টাগ্রামের ডিরেক্ট ম্যাসেজে ইটুইই চালু করার পরিকল্পনা ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিলম্বিত করে

সূত্র:বিবিসি/আরএপি