দীপু মনিকে ঘিরে ‘অপপ্রচার’, রাজপথ-ফেসবুকে ঘৃণা-ক্ষোভ-প্রতিবাদ

প্রকাশিতঃ 10:03 am | January 30, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণ রহস্যময় কারণেই ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। বিশেষ করে জমির মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও তার সহোদর চিকিৎসক বড় ভাই জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন, দুর্নীতি করেছেন এমন ‘অপপ্রচার’র জেরেই মেঘনা পাড়ের বিষয়টি ফুলেফেঁপে ছড়িয়ে পড়ে। তালি বাজাতে শুরু করে সুযোগ-সন্ধানীরা, যারা বেশিরভাগই দল ও জনমতে একেবারেই কোণঠাসা, অচ্ছুত।

আরও পড়ুনঃ হঠাৎ শিক্ষামন্ত্রীর ‘ইমেজ’ নষ্টের ‘অপতৎপরতা’ কেন?

খোদ নিজ দলীয় একাংশের এমন অপকৌশলকে ঘৃণাভরেই প্রত্যাখ্যান করেছেন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রাজপথে, দলটির মাঠের নেতা-কর্মীরা। সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতির পক্ষের আলোর পথের মানুষেরা। বরাবরই তাদের কাছে প্রাত:স্মরণীয় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদের কন্যা ডা. দীপু মনি।

ক্ষোভ প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে এসব মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী ও তার পরিবারের পক্ষে তাই কোমরবেঁধেই নেমেছেন তাঁরা। স্থানীয়রা জানিয়ে দিয়েছেন, বুঝিয়ে দিয়েছেন চাঁদপুরে সুশাসন, টেকসই অগ্রগতি আর জীবনমান উন্নয়নের প্রশ্নে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি অতুলনীয়।

দল বা জননেত্রীর ঘোর দু:সময়ে সাহসী নেতৃত্ব দিয়ে নিজেকে শিখরে নিয়ে আসা, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবেও অনবদ্য পারফরম্যান্স, ক্রাইসিস জয় করা, দেশপ্রেম-মানবিকতা-এসব বিষয়াদিই ছবিসহ ঘুরছে ফেসবুকের ওয়ালে ওয়ালে, বিক্ষোভ প্রতিবাদে উচ্চারিত হচ্ছে তরুণ-যুবার শাণিত কন্ঠে।

অপরাজনীতির থিওরি প্রয়োগের মাধ্যমে দীপু মনি বা তার বড় ভাই চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. টিপুকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টাকারীরা গত দু’দিনে খড়কুটোর মতো ভেসে গেছেন উত্তাল মানবস্রোতের গর্জনে। প্রশংসিত হচ্ছে বিরুদ্ধবাদীদের বিষয়ে মন্ত্রীর ভদ্র, মার্জিত ও রুচিসম্মত আচরণ। জনবান্ধব রাজনীতিক হিসেবেও পরিচিত ডা.টিপুর বিনয়াবনত লিখিত বক্তব্য অনেক সত্যকে সামনে এনেছে। তাকে নির্দোষ প্রমাণ করেছে। ভাই-বোনের সৎ সাহস ও নৈতিক দৃঢ়তাই চলমান ষড়যন্ত্রের যবনিকাপাত ঘটিয়েছে।

আবার অনেকেই বলছেন, উদ্ধত আচরণের পরিবর্তে অমায়িক আচরণ প্রদর্শনে দীপু মনির নৈতিক পারিবারিক শিক্ষাও মন্ত্রীর বক্তব্যে মোটাদাগে উপস্থাপিত হয়েছে, যা মুগ্ধ করেছে নেটিজেনদেরও। গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে চাঁদপুরের নিজ দলীয় সভাপতি ও সংসদ সদস্যের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ না করে উল্টো তাদের সম্মান দিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করার ঘোষণা শিক্ষামন্ত্রী নিজেকে আরও উঁচুতে নিয়ে গেছেন।

প্রমাণ করেছেন, দোষারোপের রাজনীতির সংস্কৃতিতে জড়িয়ে পড়া মানেই বিরোধী শক্তির পারপাস সার্ভ করা। নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে অপপ্রচারকারীদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে দলীয় গুটিকয়েক বিরুদ্ধবাদীরা আদর্শের রাজনীতিতে একজন দীপু মনি ও তার পরিবারের কাছে শোচনীয়ভাবে ধরাশায়ী হয়েছেন। উল্টো এসব নেতাদের আমলনামা ঘাটলে ‘কেঁচো খুড়তে সাপ’ বেরিয়ে আসার উপক্রম হবে বলেই মনে করছেন কেউ কেউ।

তবে ডা.দীপু মনি দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেছেন, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাঁবিপ্রবি) জন্য যে জমি চিহ্নিত আছে, সেখানে আমার বা আমার পরিবারের কারও কোনো জমি নেই। গত ১৩ বছরে আমার নির্বাচনী এলাকায় অনেক অবকাঠামো হয়েছে, হচ্ছে। আজ পর্যন্ত অধিগ্রহণকৃত জায়গায় আমার বা আমার পরিবারের কারও এক ছটাক জমিও ছিল না। বাস্তবিক অর্থে চাঁদপুরে আমার কোনো জমিই নেই।’

মন্ত্রী নিজেও অভিযোগ করে বলেছেন, এর আগে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের জায়গার অধিগ্রহণ নিয়ে এই রকম একটা মহল প্রশ্ন তুলেছে। যখনই কোনো বড় উন্নয়নমূলক কাজের কথা হয়, তখনই এই জমি ভেঙে যাবে, এটা নষ্ট হবে, এরকম নানান কিছু বলা হয়। এই বলে মেডিকেল কলেজের জমি অধিগ্রহণের কাজটাও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। হাইমচরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হওয়ার কথা, সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। সেটার জমি অধিগ্রহণ কাজও হচ্ছে ধীরে। তার কারণ একটা মহল কিছুতেই চাইছে না—ওইখানে (চাঁদপুর-৩) আমার মাধ্যমে এই বড় বড় কাজ হোক। সব জায়গায়ই রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকে। রাজনৈতিক নানান রকম দ্বন্দ্ব-কলহ থাকে। আমার ওখানেও হয়তো কম-বেশি কিছু আছে। সেটা একটা ভিন্ন দিক।’

স্থানীয় একাধিক সূত্র কালের আলোকে নিশ্চিত করেছে, রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে জীবনের প্রত্যুষেই মানবিক রাজনীতির শিক্ষা পেয়েছেন দীপু মনি ও তার বড় ভাই ডা.টিপু। দলের যে কোন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আপদে বিপদে নিয়ম করেই পাশে থাকেন। তেড়েফুঁড়ে চলার চিরায়ত রাজনীতির উল্টো পথে চলে নিজেদের শ্রম-ঘামে চাঁদপুরে আওয়ামী লীগের দুর্গকে সুরক্ষিত করেছেন। নিশ্চিত করেছেন অবকাঠামোসহ নানাবিধ উন্নয়ন। এতেই গাত্রদাহ তৈরি হয়েছে দলে ও বাইরে।

টু পাইস ফরমুলায় সিদ্ধহস্ত চক্রটি সুবিধা কর‍তে না পেরে জমি অধিগ্রহণ দুর্নীতির ফিল্মি স্ক্রিপ্ট সাজিয়ে পোড় খাওয়া এই আওয়ামী পরিবারের উজ্জ্বল ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। তালি বাজিয়ে মাঠ গরম করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের অপকর্মে ‘না’ জানিয়ে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যার বেসাতি করে বেড়ানো মতলববাজদের ‘লাল কার্ড’ দেখিয়ে দিয়েছে চাঁদপুরের সর্বস্তরের মানুষ অনলাইনে-অফলাইনে। ভবিষ্যতের জন্য এটি চক্রটির জন্য একটি বড় রকমের সতর্ক সংকেত হয়েই থাকবে।

কালের আলো/এমএএএমকে