মাঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের কী ‘গাইডলাইন’ দিলেন আইজিপি?
প্রকাশিতঃ 6:40 am | November 08, 2018
বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলন পরিকল্পনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে রাজনীতির মাঠ। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে নজিরবিহীন নাশকতার ইতিহাস মাথায় রেখেই সর্ব্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে পুলিশের ভূমিকা কী হতে পারে সে বিষয়ে একটি ‘গাইডলাইন’ দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার)।
বুধবার (০৭ নভেম্বর) পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে আইজিপির দফতরের পাশে অবস্থিত কনফারেন্স রুম থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সে আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের সার্বিক দিকনির্দেশনা প্রদান করেন তিনি।
কনফারেন্সে পুলিশ প্রধান সারাদেশের ৯ মেট্টোপলিটনের পুলিশ কমিশনার এবং ৮ রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শকদের (ডিআইজি) সঙ্গে কথা বলেন।
কনফারেন্স সূত্রে জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে পুলিশের ভূমিকা কী হতে পারে সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিতেই এক ঘণ্টার বেশি সময় এই ভিডিও কনফারেন্স করেন ড.জাবেদ পাটোয়ারী।
নাশকতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো কিছু কাউকে করতে দেয়া যাবে না, এমনটি জানিয়ে আইজিপি বলেন, এই ব্যাপারে পুলিশের অবস্থান জিরো টলারেন্স।
কনফারেন্স তিনি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চান। তাৎক্ষণিক কোন প্রয়োজন হলে পুলিশ সদর দফতরকে জানানোর নির্দেশ দেন আইজিপি।
পুলিশ প্রধান স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেভাবে ‘আগুন সন্ত্রাস’ চালানো হয়েছিল, সে ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই ঘটতে দেয়া হবে না। এ জন্য পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
আরো পড়ুন:
‘পেশাদারিত্ব’ দিয়েই নির্বাচনী ‘চ্যালেঞ্জ’ জিতবেন আইজিপি
কনফারেন্সে আইজিপি’র সঙ্গে ডিআইজি (অপারেশন্স) আনোয়ার হোসেন এবং অতিরিক্ত ডিআইজি (স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মনিরুজ্জামানসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ কমিশনার ও ডিআইজি অফিসের কনফারেন্স কক্ষগুলোতে পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি), সহকারী উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) এবং পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত সুপাররা উপস্থিত থেকে আইজিপির নির্দেশনা শুনেন।
কনফারেন্সে অংশ নেয়া একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা কালের আলোকে জানিয়েছেন, যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশকে অধিকতর সতর্ক ও কৌশলী হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশের সবকটি ইউনিটের মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন বাহিনীর প্রধান।
সবধরনের গোয়েন্দা তথ্য গুরুত্ব দিয়ে দেখে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের ব্যাগ ও দেহ তল্লাশির সময় যাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে।
রাস্তা বা যানবাহনে যে কেউ কোনো ধরনের হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ বা চোরাগুপ্তা হামলার চেষ্টা করলে শুরুতেই কৌশলে তা মোকাবেলা করা এবং যত দ্রুত সম্ভব পদস্থ কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করতে বলেছেন ড.জাবেদ।
বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনার পাশপাশি পুলিশ কমিশনার এবং ডিআইজিদের কাছ থেকে আইজিপি মাঠের খবর জানেন। অতি উৎসাহী ও বিচলিত না হয়ে সর্বোচ্চ ধৈর্য্যধারণ করে তিনি পুলিশকে সবধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার নির্দেশ দেন।
এর আগে চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছিলেন আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
এর ঠিক দু’দিনের মাথায় ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা হয়।
ওই রায়কে ঘিরে দেশের কোথাও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে সে বিষয়ে কার্যকর দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি।
ওই রায়কে ঘিরে পুলিশ দেশের কোথাও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দেয়নি। মূলত পুলিশের সর্ব্বোচ্চ কর্মকর্তার সময়োপযোগী সেই নির্দেশনা পুলিশের এমন সফলতার পেছনে ‘টনিক’ হিসেবে কাজ করে।
কালের আলো/এএম