ভোজ্যতেলের সিন্ডিকেট ভাঙার জোরদার অভিযান

প্রকাশিতঃ 9:56 pm | March 07, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

মধ্যস্বত্বভোগী পর্যায়ে ভোজ্যতেল অবৈধ মজুত করার কথা জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ঘোষণা দিয়েছিলেন জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে সঙ্কটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ইতোমধ্যেই বাজারে বাজারে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে সরকারের ১৪টি সংস্থার তদারকি টিম। 

সংস্থাগুলো তেলের সরবরাহ, মজুত, পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোতে সঙ্কটের কারণ খতিয়ে দেখছেন। অবৈধ মজুতের বিরুদ্ধে কঠোর অ্যাকশন গ্রহণ করেছেন। জরিমানার পাশাপাশি সিলগালা করে দেওয়া হচ্ছে তাদের প্রতিষ্ঠান। বাজার মনিটরিং কাজেও জোর দিয়েছেন ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকরা। 

সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ভোজ্যতেল নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।  মধ্যস্বত্বভোগীরা কোন কোন পর্যায়ে গোপনে ভোজ্যতেল মজুত করছেন সেই বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনটিতে। বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে শীর্ষভোজ্যতেল রিফাইনারি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

সূত্র জানায়, ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা নিরসনে গত ১০ দিন যাবত সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে পুরোমাত্রায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। অবৈধ মজুতধারীদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

গত শনিবার (০৫ মার্চ) যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক রোডে অবস্থিত আবুল খায়ের ট্রেডিংয়ের অবৈধ ভোজ্যতেল মজুতের ২২ হাজার লিটার উদ্ধার করেছে তারা। নগদ ২ লক্ষ টাকা জরিমানার পাশাপাশি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। একইভাবে অভিযান পরিচালিত হয়েছে কারওয়ান বাজারেও। 

ওই দোকানে সিলগালা করে শুনানির জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরর ডেকে আনা হয়েছে। সোমবার (০৭ মার্চ) ঢাকা মহানগরীর মিরপুর শাহ আলী বাজার ও বেইলি রোড এলাকায় ৩ জন তেল ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকাসহ মোট ৬টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। 

তেল কেনার কোন কাগজপত্র দেখাতে না পারা, বিক্রি না করে মজুদ করে রাখাসহ বিভিন্ন অপরাধে গত রোববার (০৬ মার্চ) রাজধানীর মৌলভীবাজারে  ৪ জন (ডিস্ট্রিবিউটর) ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীকে  ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করে অধিদপ্তর। এর মধ্যে মুসলিম এন্ড ব্রাদার্স ১০ হাজার, মেসার্স জব্বার স্টোরকে ৫০ হাজার, মুসলিম স্টোরকে হাজার ও ঢাকা স্টোরকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক মঞ্জুর মো. শাহরিয়ার’র নেতৃত্বে পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার গুলবদন সুপার মার্কেটে পরিচালিত হয়েছে অভিযান। অভিযানের খবর পেয়েই স্থানীয় মুসলিম স্টোরের মালিক পালিয়ে গেছেন। 

পেঁয়াজ, ভোজ্য তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানও পুনরুত্থিত করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য উইং প্রধান ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান। তিনি বারবারই বলেছেন, ‘রোজাকে সামনে রেখে সরবরাহ চেইনে যেসব অসাধু ব্যবসায়ীরা অস্থিরতা তৈরি করেছে তাদের নূন্যতম ছাড় দেওয়া হবে না। এদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। বাজার স্বাভাবিক করতে আমরা সব রকমের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অভিযানকালে অনিয়ম পেলে জরিমানা, প্রতিষ্ঠান সিলগালাসহ অসাধুদের জেলে পাঠানো হবে।’ 

সূত্র জানায়, বাজারে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চারটি ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ৬টি বিশেষ টিম নিবিড়ভাবে কাজ করছে। 

এসব টিমের পাশাপাশি মাঠে রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিমসহ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ, র‌্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। সক্রিয় রয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ মোট ১৪ টি টিম। 

ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসছে ভোক্তা অধিকার
ঢাকা মহানগরীর পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের  সাথে ভোজ্যতেলের বর্তমান মূল্য ও সরবরাহ পরিস্থিতি বিষয়ে একটি বিশেষ সভার আয়োজন করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। মঙ্গলবার (০৮ মার্চ) বেলা ১১ টায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে (১ কারওয়ান বাজার, টিসিবি ভবন-৮ম তলা, ঢাকা) এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। বিশেষ এই সভায় সভাপতিত্ব করবেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান।

কালের আলো/এসবি/এমএইচএ