কী বার্তা দিলেন তিন মন্ত্রী?
প্রকাশিতঃ 10:36 pm | March 19, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
একজনের গন্তব্য ভিন্ন, দু’জনের অভিন্ন। কিন্তু একই ফ্লাইটে রাজধানী থেকে তাঁরা পৌঁছলেন বরিশাল বিমানবন্দরে। দীর্ঘ সময় পর শনিবার (১৯ মার্চ) বিকেলে একসঙ্গে তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে পেয়ে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরাও। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ডা: দীপু মনি, কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক এবং মো. মাহবুব আলী কী বার্তা দেন এ নিয়েই নিজেদের মাঝেই হিসাব-নিকাশ কষছিলেন গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা।
আরও পড়ুনঃ সত্যকে সহজভাবেই নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা
সরকারের দায়িত্বশীল তিন মন্ত্রীও মোটেও নিরাশ করেননি গণমাধ্যমকে। তাঁরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের কর্মপ্রবাহ, গতি প্রকৃতি এবং উন্নয়ন-সফলতা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরাও এক চিলতে সময় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন তাদের সারকথা উপস্থাপনে।
তাদের সঙ্গী হয়েছিলেন সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার মিরা-এমপি, সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন বরিশালের জেলা প্রশাসক (ডিসি) জসীম উদ্দীন হায়দারসহ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুনঃ কবি সুকান্তের পৈতৃক ভিটা ঘুরে আবেগমথিত শিক্ষামন্ত্রী
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন এই প্রতিবেদককে জানান, ঢাকা থেকে একই ফ্লাইটে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী শনিবার (১৯ মার্চ) বিকেলে বরিশাল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।
পরে তাঁরা গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রীর গন্তব্য টুঙ্গিপাড়ায় এবং পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী যোগ দেবেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে নির্মিত ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। আগামী সোমবার (২১ মার্চ) আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
‘এক শিক্ষাবর্ষে পুরো ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে না’
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘করোনার প্রাদুর্ভাবকালে অনলাইন ও টেলিভিশনের মাধ্যমে আমরা ৬০-৬৫ ভাগের বেশি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে পারিনি। অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে ৯৩ ভাগের মতো শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে পেরেছিলাম। কাজেই কিছু ঘাটতি তো আমাদের শিক্ষার্থীদের হয়েছে। একটি শিক্ষাবর্ষে হয়তো সেই ক্ষতি পুরোটা কাটিয়ে ওঠা যাবে না।’

গোপালগঞ্জ যাওয়ার পথে শনিবার (১৯ মার্চ) সকালে বরিশাল বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পুরোদমে কাজ শুরু করেছি। অ্যাসাইনমেন্টগুলোর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারছি কোথায় কী ঘাটতি আছে। আর শিক্ষকরাও অ্যাসেস করছেন। সারাবিশ্বেই ক্ষতি হয়েছে, আশা করি শিক্ষক-অভিভাবকসহ সবার সহযোগিতায় নিশ্চয়ই আমরা ঘাটতি পুষিয়ে উঠতে পারবো।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকের বিষয়টি আমি বলতে পারছি না, তবে মাধ্যমিক স্তরে সবাই বই পেয়েছে। আমাকে সুনির্দিষ্ট বলতে হবে, কারণ সব উপজেলায় যথাসময়ে বই পৌঁছে গিয়েছিল। যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে কোনো কারণে বই না গিয়ে না থাকে তাহলে সেটা স্থানীয় পর্যায়ের কারণ হতে পারে। আমাকে সুনির্দিষ্ট করে বলা হলে অবশ্যই খতিয়ে দেখব। তবে এখন পর্যন্ত বই না যাওয়ার কোনো কারণ নেই।’
‘দক্ষিণাঞ্চলের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজর’
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক বলেছেন, ‘বরিশালে ফ্লাইট চালু হওয়ার পরে যাত্রী না থাকায় তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিকভাবে আমরা সাবলম্বী হয়েছি। দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বেগবান হচ্ছে। পায়রা বন্দরসহ দক্ষিণাঞ্চলে অনেক উন্নয়ন হয়েছে; এখন বিভিন্ন ধরণের মানুষের আসা যাওয়া বেড়েছে। এখন যে সকল এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করছে তারা ফুল লোডেড হয়ে যাওয়া-আসা করছে। দক্ষিণাঞ্চলের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজর রয়েছে।’
বরিশাল বিমানবন্দর ও বিমানবন্দর সংলগ্ন সুগন্ধা নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী জাহিদ বলেন, বরিশাল বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেই সাথে মিডিয়ার ভাইরা লক্ষ্য রাখবেন যাতে এখানকার কাজে কোন দুর্নীতি না হয় এবং কাজের মান ভালো হয়। বরিশাল বিমানবন্দর দেশে আভ্যন্তরীণ যতগুলো বিমানবন্দর রয়েছে তার মধ্যে সব থেকে ভালো হবে।’

এখন আমরা সেটিকে বাড়িয়ে আরো ৬ শত মিটারসহ মোট ১১ শত মিটার জায়গা রক্ষা করতে চাচ্ছি। প্রকৌশলীরা বলছেন এটা করলে পরে নদীতীর আসন্ন বর্ষায় আর ভাঙ্গবে না। অপরদিকে বড় প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি চলমান রয়েছে, সেটা হলে পরে আমরা প্রকল্পটা নিয়ে আগামী (পরবর্তী বছর) বর্ষা মৌসুমের আগে ভাঙ্গনরোধে স্থায়ী কাজ করতে পারবো।
‘বরিশাল বিমানবন্দর হবে সবথেকে আধুনিক’
পরিদর্শনকালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী বলেছেন, বরিশাল বিমানবন্দর হবে সবথেকে আধুনিক ও যুগোপযোগী। আর বাংলাদেশের সব থেকে সুন্দর বিমানবন্দর। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আমরা প্রকল্প নিচ্ছি বরিশালের রানওয়ে অনেক বড় হবে এবং টার্মিনাল হবে সবথেকে অত্যাধুনিক। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে অর্থ বরাদ্দের জন্য অনুরোধ জানাবো।
বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সবগুলো বিমানবন্দরেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এবং নির্দেশনায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। বরিশাল বিমানবন্দরে বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক আন্তরিক। ওনার নির্দেশনায় বরিশাল বিমানবন্দরের রানওয়ে ওভার-লে করণ কাজে খুব শীঘ্রই হাত দিচ্ছি। যাতে বিমানের স্মুথ ল্যান্ডিং হয়। একই সাথে বড় বিমান যাতে নামতে পারে সেজন্য রানওয়েকে আরো সাড়ে ৭ শত ফিট বাড়ানোর প্রকল্প আমরা হাতে নিবো। পাশাপাশি এখানে অত্যাধুনিক একটি নুতুন টার্মিনাল করার কাজ খুব দ্রুত হাতে নিবো। সবমিলিয়ে বরিশাল বিমানবন্দর নিয়ে আমাদের একটি মেজর প্রজেক্টর রয়েছে।’
দেশের এভিয়েশন সেক্টর নিয়ে বঙ্গবন্ধুর অনেক স্বপ্ন ছিলো। আজ তার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে সারাদেশের প্রতিটি বিমানবন্দরে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সর্বাধুনিক করা হচ্ছে। চাঙ্গি, হিদ্রো, জেএফকে বিমানবন্দর দেখে আমরা প্লান করেছি। তাই যুগের থেকেও আধুনিক একটি বিমানবন্দর আমরা হয়তো সেপ্টেম্বর ২০২৩ এ উদ্বোধন করতে পারবো’ যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
মাহবুব আলী আরো বলেন, ‘চট্টগ্রাম ও সিলেট এর বিমানবন্দকের আন্তর্জাতিক করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক এবং আভ্যন্তরীণ সবকিছুতে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। আর বরিশাল যেহেতু বড় অবস্থানে রয়েছে, তাই এই বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপ দেয়ার জন্য সমস্ত পরিকল্পনাই হাতে নেওয়া হবে। এ বিমানবন্দরসহ দেশের প্রতিটি বিমানবন্দরে যাতে বড় বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে পর্যায়ক্রমে। রাত দিন ২৪ ঘন্টা বিমান নামতে-উঠতে পারে সেই লক্ষেও সবগুলো বিমানবন্দরে পর্যায়ক্রমে কাজ করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাংলাদেশের প্রতিটি বিমানবন্দরে যাতে ২৪ ঘন্টা বিমান ওঠানামা করতে পারে সেধরণের ব্যবস্থা নেয়া। আমরা অনেকগুলোতে এ ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। তবে কোভিডের কারনে বিদেশ থেকে স্পেশালাইজড লোক আসতে না পারায় আমরা অনেকগুলো কাজ সমাপ্ত করেও চালু করতে পারিনি। বরিশালেও যাতে ২৪ ঘন্টা ফ্লাইট ওঠানামা করতে পারে সে কাজ একই সাথে করবো। শেষ ভালো যার সব ভালো তার। বরিশাল বিমানবন্দরের উন্নয়ন যেহেতু শেষে হচ্ছে, তাই অন্যান্য বিমানবন্দরের থেকে আরো আধুনিক এবং যুগের থেকেও আধুনিক বিমানবন্দর বরিশালে হবে।’
কালের আলো/বিএসবি/এনএন