সেনাপ্রধানের জবানীতে চিরঞ্জীব-অবিনশ্বর বঙ্গবন্ধু

প্রকাশিতঃ 12:41 pm | March 26, 2022

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

তাঁর কন্ঠে সম্ভবত গুঞ্জরিত সেই অমর কবিতা- ‘আপনাকে তো নিয়েছে ওই ঘাসের নরম/কোল, জোৎস্নার কিছু শিশির প্রতি ভোরে/বাঁচিয়ে রাখে বাংলার রূপ, আপনি/অন্য মনে আছেন বলে আমরা/বলি, শেখ মুজিব ঘুমিয়ে আছেন/টুঙ্গিপাড়ায়;/বঙ্গবন্ধু, আপনার যখন সময় হবে/এসে ডাক দেবেন, সবাই আছে,/সোনার বাংলার স্বপ্নও আছে,/আছে কোটি কোটি জনতা,/‘ভায়েরা আমার’ বলে ডাকলেই/আমরা জয়ধ্বনি দিয়ে বলব,/জয় মুজিব, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা।’

একজন মানুষ মৃত্যুর পরেও কতটা শক্তিশালী, একটা জাতির কতটা জুড়ে থাকতে পারে তাঁর উদাহরণ বঙ্গবন্ধু। একজন বাঙালি, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ’র অস্থিমজ্জায় মিশে আছেন বাঙালির অবিসংবাদিত মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করেন মহান জাতির পিতা চিরঞ্জীব-তাঁর চেতনা অবিনশ্বর।

উচ্চারণ করেন-স্বাধীনতার ৫০ বছরের পথ পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আজ স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। নিজের প্রতিটি বক্তব্যে ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তিনি বাঙালির আবেগ-উদ্দীপনা ও সংগ্রামী চেতনার দ্যোতনায় অসাধারণভাবেই উপস্থাপন করেন। নিখাদ স্টাইলের মৌলিকত্ব, চিরকালীন ও সর্বজনীন নানা উপমা হয়ে উঠেছে মহান জাতির পিতাকে নিয়ে তাঁর প্রতিটি বক্তব্য।

গত বছরের ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে দেওয়া এক বাণীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড. এস এম শফিউদ্দিন বলেন, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় বীর সেনানীরা মুক্তিকামী আপামর জনতার সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে দেশমাতৃকাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে জল, স্থল ও আকাশপথে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে অপ্রতিরোধ্য আক্রমণের সূচনা করেছিল। যার ফলে ত্বরান্বিত হয় আমাদের চূড়ান্ত বিজয় এবং বিশ্ব মানচিত্র স্বাধীন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।’

‘বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত লাল-সবুজের এই পতাকা আমাদের গর্বের প্রতীক। স্বাধীনতার পর ৫০ বছরের পথ পেরিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ আজ স্বপ্ন নয়, বরং একটি বাস্তবতা ।

বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ আজ গর্বিত দেশ হিসেবে মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে। পরাধীনতার গ্লানি ও শৃঙ্খল থেকে মুক্তি, অর্থনৈতিক উন্নতি এবং গণমানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে শুরু হয়েছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম। সেই চেতনাকে ধারণ করে বাংলাদেশের আজকের এই অর্জন নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য গর্বের এবং মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল চেতনার বাস্তব প্রতিফলন।

২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর সেনা সদরে ‘খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্য এবং ২০২০/২০২১ সালে শান্তিকালীন পদকপ্রাপ্ত সেনাসদস্যগণকে সেনাবাহিনী প্রধান কর্তৃক সংবর্ধনা ও পদক প্রদান’ অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ মহান মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনিতে প্রজ্বলিত হয়ে শত্রু সেনাদের খতম করতে মৃত্যুকে স্বেচ্ছায় আলিঙ্গণ করা জাতির সূর্য সন্তানদের বীরত্বগাঁথা ইতিহাসের সার কথা তুলে ধরেন। উপস্থাপন করেন পাকিদের ২৩ বছরের শাসন-শোষণ আর পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে বাঙালি জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহসী, ঐতিহাসিক নেতৃত্ব ও দূরদর্শীতার কথা।

সেদিন জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসের এই শুভলগ্নে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ।’

জেনারেল শফিউদ্দিন কৃতজ্ঞচিত্তেই আন্তরিক ধন্যবাদ ও গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। তিনি বলেন, ‘আমি অসংখ্য ধন্যবাদ জানাতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, যিনি ইতিহাসের এই বিশেষ বছরে আমার উপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব আমার হাতে তুলে দিয়েছেন। আমি দ্বিধাহীনভাবে বলতে চাই যে, তাঁরই একান্ত আগ্রহ এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজ সশস্ত্র বাহিনীর অভূতপূর্ব আধুনিকায়ন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।’

গত বছরের শুক্রবার (০৩ ডিসেম্বর) বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বিপুল আয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫০ বছর পূর্তির বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান বলেন, ‘এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপকার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ-বাংলাদেশ।’

তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল সেনা শহীদদের গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেদিন আরও বলেন, ‘যাঁরা শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধেই নয়, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশে ও বিদেশে দেশের স্বার্থে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।’

বঙ্গবন্ধুর সমর দর্শনের আলোকে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি বাস্তবায়নের দৃঢ় ও শক্তিশালী পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী, দক্ষ, পেশাগত, সুশৃঙ্খল, আধুনিক ও যুগোপযোগী একটি বাহিনীতে রূপান্তরিত করার সর্বাত্মক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করায় তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদও জানান বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

কালের আলো/ডিএসবি/এমএম