মুক্তিযুদ্ধের ঘ্রাণ জুড়ানো নয়নাভিরাম স্থাপনা ‘জয় বাংলা চত্বর’
প্রকাশিতঃ 7:30 am | March 27, 2022

রাইসুল ইসলাম খান অনিক :
একজন সম্মোহনী ক্ষমতাসম্পন্ন জনতার নেতা। রক্তক্ষয়ী মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ঠিক আগে-পরের দিনগুলোতে বাংলাদেশের মানুষ তিনি যা বলতেন সেটাই অনুসরণ করতো হৃদয়গ্রোথিত আবেগ-উষ্ণতায়। কোন ব্যক্তি বা দলের নয়, বঙ্গবন্ধু ছিলেন সর্বজনীন। দেশ ও দশের কল্যাণই ছিল তার কাছে সবকিছুর উর্ধ্বে।
উজ্জ্বল ধ্রুবতারাসম সমুজ্জ্বল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ময়মনসিংহবাসীর মাঝে তাঁর চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি হৃদয়ে চির ভাস্বর করে রাখতে ‘জয় বাংলা চত্বর’ নির্মাণ করেছেন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো.ইকরামুল হক টিটু। জাগরণের প্রতীক এই চত্বরের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সুমহান স্মৃতিকেও সংরক্ষণ করেছেন। ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর তিনি এই চত্বরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধের ঘ্রাণ জড়ানো এই নয়নাভিরাম আলোকিত স্থাপনা মুগ্ধ করে নগরীর বাসিন্দাদের। রাতের আলোতে হয়ে উঠে অনিন্দ্য সুন্দর। কেবল মহান স্বাধীনতা বা বিজয় দিবস নয় বছরজুড়েই নগরীর পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ের এই স্থাপনায় মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনায় ডুবে থাকা যায়।
জানা যায়, জয় বাংলা চত্বরে ৩০ ফুট উঁচু অবকাঠামোর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। তার পেছনে রয়েছে সাতটি পাম গাছ। সেগুলো সাত বীরশ্রেষ্ঠর স্মৃতি বহন করে। আর ভাস্কর্যের সামনে নয় ইঞ্চি করে রয়েছে ১৬ টি পিলার। যা নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে বহন করে।
এছাড়াও নয় হাজার বর্গফুটের এই চত্বরে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করা আরও কিছু স্তম্ভ। যেগুলো বঙ্গবন্ধুর জীবনী এবং মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসও তুলে ধরা হয়েছে। এসব কারণে এর নাম দেয়া হয়েছে ‘জয় বাংলা চত্বর’। সিটি মেয়রের পরিকল্পনাতে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে এই চত্বরের কাজ শুরু হয়। যার ভাস্করশিল্পী ছিলেন অনুপম সরকার জনি।

অনুপম সরকার জানান, বেদীর দুই পাশে টেরাকোটার মাধ্যমে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ পর্যন্ত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে তুলে ধরার জন্য চত্বরে ফাইবার আর মার্বেল ডাস্ট দিয়ে ১৭টি শাপলা ফুল নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিকৃতির দুই পাশে টেরাকোটার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের দৃশ্যপট ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এই ভাস্কর শিল্পী আরও জানান, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির ৩০ ফুট অবকাঠামোটি ৩০ লাখ শহীদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। প্রতিকৃতির ডান প্রান্তে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্মরণীয় উক্তি আর বাম পাশে বর্ণাঢ্য জীবনী। চত্বরের বাম পাশে রয়েছে সাতটি সিঁড়ি। সিঁড়ি দিয়ে ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বোঝানো হয়েছে। আর ডান পাশের ছয়টি সিঁড়ি দিয়ে ছয় দফা আন্দোলনকে বোঝানো হয়েছে।
তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে এবং বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে ছড়িতে দিতেই চত্বরটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান ‘জয় বাংলা চত্বর’র পরিকল্পনাকারী ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো.ইকরামুল হক টিটু। তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেতনাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে এই চত্বরের মাধ্যমে।’
জানা যায়, ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র থাকাকালে ময়মনসিংহের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস স্মরণে একাধিক স্মারক স্থাপনা নির্মাণ করেন ইকরামুল হক টিটু। এসব স্থাপনা এক অনন্য মাইলফলক হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

কালের আলো/এসবি/এমএম