রাঙ্গা-চুন্নু বিরোধ এবার প্রকাশ্যে

প্রকাশিতঃ 11:33 pm | April 03, 2022

রাজনৈতিক প্রতিবেদক, কালের আলো:

এরশাদের মৃত্যুর পর জি এম কাদের দল পরিচালনায় তাঁর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন জিয়াউদ্দিন বাবলুকে। তাঁর মৃত্যুর পর তিনি দলীয় মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব দেন মুজিবুল হক চুন্নুকে। স্বভাবতই সিদ্ধান্ত মনমতো হয়নি মসিউর রহমান রাঙ্গার। ভেতরে ভেতরে নিজেদের বিরোধের কথা শোনা গেলেও কখনও সেটি প্রকাশ্যে আসেনি। কিন্তু এবার রাজধানীতে গণপরিবহনের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সংসদে আলোচনায় রীতিমতো তর্কে জড়িয়েছেন দলটির বর্তমান ও সাবেক মহাসচিব। মুজিবুল হক চুন্নু গঠনমূলক সমালোচনা করলেও যেন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন রাঙ্গা। চুন্নুর আগে তিনি মহাসচিব ছিলেন এই ক্ষোভে চুন্নু সমালোচনা করেছেন বলেও বুলি আওড়ান মসিউর রহমান রাঙ্গা। দু’নেতার এমন বাহাসের মধ্যে দিয়েই মূলত প্রকাশ্যে এসেছে রাঙ্গা-চুন্নু বিরোধ।

বিরোধ যেভাবে প্রকাশ্যে এলো
রবিবার (৩ এপ্রিল) সংসদ অধিবেশনের অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে মুজিবুল হক দুর্ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীসহ রাজধানীতে সাম্প্রতিক তিনটি দুর্ঘটনায় প্রসঙ্গ টেনে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার অনেক উন্নয়নের দাবিদার। হ্যাঁ, উন্নয়ন অনেক করেছে। কিন্তু রাজধানী শহর ঢাকায় ট্রান্সপোর্টের একটি নীতিমালা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা চোখে দেখিনি। ঢাকা শহরে ঘর থেকে বের হওয়া কোনও উপায় নেই। ঢাকা শহরে যেসব বাস চলে তার বেশিরভাগই পুরনো ও লক্করঝক্কক। লাইসেন্স নেই, কোনও আইন মানে না। রাস্তায় যেখানে-সেখানে পার্ক করে রাখে।’

এ সময় সংসদে পাশের সিটে বসা মশিউর রহমান রাঙ্গার প্রতি ইঙ্গিত করে চুন্নু বলেন, ‘আমার পাশে বসে আছেন বাংলাদেশ বাস ওনার্স সমিতির সভাপতি। ওনাদের বলবো, আপনারা মানুষের প্রতি দরদী হন। যে সমস্ত গাড়ি ব্রেক নেই, পুরনো ইঞ্জিন, রঙ নেই…। এগুলো সরকার… কেউ দেখে না। আপনারা সরকারের সাথে যোগসাজশে জনগণকে কষ্ট দিচ্ছেন?’

সড়ক পরিবহনমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনি পদ্মা ব্রিজসহ অনেক উন্নয়ন করেন… কিন্তু আপনি টোটালি ফেইল ট্রান্সপোর্টেশনের বিষয়ে। ২৪ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স আজ আটকা, ঢাকা শহরে আজ গাড়ি চলে না। ভালো বাস নেই। ঢাকায় সরকারের কি নতুন পাঁচশো- ১ হাজার বাস নামানোর সক্ষমতা নেই? মানুষ নিজের টাকা দিয়ে টিকিট কিনে গাড়িতে যাবে। কিন্তু লাইনের পর লাইন, টিকেট কিনে ওঠারও কোনও বাস নেই। এত অপ্রতুল পরিবহন। এ বিষয়টি দৃষ্টি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করবো।’

পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে মুজিবুল হকের বক্তব্যের জবাব দেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেন, ‘(মুজিবুল হক চুন্নু) আমার কলিগ, আমি ওনার আগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ছিলাম দুই বছর। তারপর উনি মহাসচিব হয়েছেন। সেই ক্ষোভে কিনা বা আমি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি সেই ক্ষোভে কিনা কিংবা জনগণের দুর্দশা দেখেই কিনা- কীভাবে উনি বলেছেন, আমি বুঝতে পারলাম না। পরিবহনের এই বিষয়টি আমাকে বললেনও না, হঠাৎ করে বললেন- আমার সভাপতি পাশে রয়েছেন।’

রাঙ্গা বলেন, ঢাকায় আগে পরিবহনগুলো ৮-৯টি ট্রিপ দিতো। যানজটের কারণে এখন একটি বাস তিনটির বেশি ট্রিপ দিতে পারে না। আয় আগের তুলনায় কমে গেছে। উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড হোক, আর যে কোনও কারণে হোক গতিসীমা কমে গেছে।

গাড়ির ফিটনেস না থাকা এবং লক্কর-ঝক্কর বাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ফিটনেস আছে কিনা তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিআরটিএ দেখবে। গাড়ি একেবারেই অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে চলে না, তা আমি বলবো না। এটা বিভিন্ন সময় হয়ে থাকে। চালকরা করে থাকে। আমরা বাসের মালিক, আমরা তো চালক না, আমরা গাড়ি চালাই না, এজন্য এ বিষয়টি বলতে পারবোনা। তবে ফিটনেসের বিষয়টি আমাদের পরিবহন মালিকদের। ফিটনেস না থাকলে জরিমানা করা হয়। ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে মাঝ বরাবর গাড়িগুলো কেটে ফেলা হয়, যাতে করে আর চালাতে না পারে।’

তিনি বলেন, উন্নয়নের প্রসববেদনার জন্য আমাদের এই সমস্যা হচ্ছে, আমাদের এটা মেনে নিতে হবে।

নির্দিষ্ট কোনও গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে এবং সে বিষয় মুজিবুল হক চুন্নু তাকে জানাতে পারলে সংসদে বসেই জরুরি ব্যবস্থা নিতে পারতেন বলেও জানান মসিউর রহমান রাঙ্গা।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার তাকে নিয়ে সংসদে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের দেওয়া বক্তব্যেরও জবাব দেন চুন্নু। তিনি বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী আমাকে বললেন, আমি নাকি অসত্য কথা বলেছি। আমার অসত্য কথা বলার কোনও প্রয়োজন নেই, আমি ব্যবসা করি না। আমি বাজারে যাই, এক সপ্তাহ আগে যে বেগুনের দাম ছিলো ৪০ টাকা পরশু দিন বাজারে গিয়ে দেখি ৭০ টাকা। ৩০ টাকার শসা ১০০ টাকা কেজি। ৩০ টাকার পেঁয়াজের কেজি ৩৫ টাকা। চিনির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। ৬৩০ টাকার গরুর গোশত ৬৫০ টাকা। শুধু সয়াবিন তেলের দাম কমেছে বৃদ্ধি পায়নি। তথ্যমন্ত্রীকে বলবো, কথা বলতে পয়সা লাগে না কিন্তু… (আমি) অসত্য কথা বলেছি… ‘অসত্য কথা’ শব্দটি কখন ব্যবহার করবেন ওনার শেখা প্রয়োজন।’

কালের আলো/এনএল/এএ