ভবিষ্যৎ সম্পর্কের অন্তরঙ্গ আলোচনায় বসছেন মোমেন-ব্লিনকেন

প্রকাশিতঃ 4:08 am | April 04, 2022

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর :

দেখতে দেখতে ঠিক ৫০ বছর। ১৯৭২ সালের ৪ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছিল শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এরপর বহুমুখী সম্পর্কে এগিয়েছে দু’দেশ। সামরিক সহযোগিতা থেকে শুরু করে শিক্ষা, বাণিজ্য, অর্থনৈতিকসহ নানা বিষয়ে কৌশলগত অংশীদারিত্বের মধ্যে দিয়েই অতিবাহিত হয়েছে। মাঝখানে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞায় সম্পর্কে খানিকটা তিক্ততা তৈরি হলেও সপ্তাহ কয়েক আগে দ্বিপক্ষীয় পার্টনারশিপ ডায়ালগের মধ্যে দিয়ে সম্পর্কের উন্নতি ঘটে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড র‌্যাবের মানবাধিকার বিষয়ে গত তিন মাসের কার্যক্রমে উন্নতি দেখছেন বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন। এমন আবহের মধ্যেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি ব্লিনকেনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। দু’দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেছেন।

মূলত কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে সোমবার (৪ এপ্রিল) ওয়াশিংটন সময় দুপুর ১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৯ টা) ভবিষ্যতের সম্পর্কের অগ্রগতি নিয়েই অন্তরঙ্গভাবেই আলোচনায় বসছেন মোমেন-ব্লিনকেন। এই বৈঠকটি বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে প্রথম এবং চলতি মাসে নির্ধারিত সংলাপের সিরিজের মধ্যেও প্রথম বলেও জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে সেই সময়কার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির ঢাকা সফর করেছিলেন। এরপর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সশরীরে কোন সাক্ষাৎ হয়নি। প্রায় ৬ বছর পর এই অপেক্ষারও অবসান ঘটতে যাচ্ছে। সোমবার (০৪ এপ্রিল) মোমেন-ব্লিনকেন বৈঠক হবে সোফাসেট ফরম্যাটে। এই বৈঠকের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফর কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট অথবা ভাইস প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের নিশ্চয়তা মিললে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করছে দু’টি দেশই। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ভূরাজনৈতিক সমীকরণ, বিশেষ করে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নের অগ্রাধিকারের কারণে বাংলাদেশ বরাবরই দেশটির কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত এক যুগে বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায়।

দেশ দু’টির বিরাজমান সুসম্পর্ক উপমহাদেশের ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও ব্যাপভাবে তরান্বিত করে। বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের নীতি এবং প্রচেষ্টা এক ও অভিন্ন।

সূত্রটি মনে করছে, বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দেশের অভ্যন্তরে যেমন জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সফল হয়েছে, ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধুকন্যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য একটি রোডম্যাপও তৈরি করে দিয়েছেন। শেখ হাসিনার মতো দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়কের ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে।

কিন্তু দেশের স্বার্থ বিরোধী একটি বিশেষ মহল দু’দেশের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে নানামুখী কূটকৌশল অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু মোমেন-বাইডেন বৈঠকের মধ্য দিয়ে দু’দেশের এই সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ এবং গভীর হবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এ কে আব্দুল মোমেন বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ‘মধুর’ বলে জানিয়েছেন।

ঢাকাকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতাও দিয়ে আসছে ওয়াশিংটন। কোভিড দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ৯০ মিলিয়ন ডলারের চিকিৎসা সরঞ্জামের পাশাপাশি তাঁরা ৬ কোটি ১০ লাখেরও বেশি টিকা উপহার দিয়েছে বাংলাদেশকে।

উচ্চ শিক্ষায় এখনও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় অগ্রভাগে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। প্রতিনিয়ত সেখানে বাড়ছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৮ হাজার ৫৯৮ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন।

গত ৫০ বছরে দু’দেশের বাণিজ্যিক সহযোগিতাও বহুগুণে বেড়েছে। দেশ দু’টির মধ্যে এখন বাণিজ্যের পরিমাণ ৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এছাড়া বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৭১৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছর দুই দেশের মধ্যে আরও বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বিজনেস কাউন্সিল চালু করেছে।

প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে নিরাপত্তা সংলাপ
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষে প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী বুধবার (৬ এপ্রিল) দিনভর ওই সংলাপে মোট চারটি বড় সেশনে অনেকগুলো সাব-টপিক নিয়ে আলোচনা হবে। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সহযোগিতা। এছাড়া আরও তিনটি সেশন হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ দমন ও বেসামরিক নিরাপত্তা সহযোগিতা, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং শান্তিরক্ষা।

দিনব্যাপী ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং মার্কিন পক্ষে ওই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আর্মস কন্ট্রোল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি আন্ডার সেক্রেটারি বনি ডেনিস জেনকিনস। এর আগে, দুই দেশের মধ্যে সাত বার নিরাপত্তা সংলাপ হলেও এবারেই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহে এই সংলাপ পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে হচ্ছে।

রবিবার (৩ এপ্রিল) নিরাপত্তা সংলাপে অংশগ্রহণের জন্য পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। ঢাকা ত্যাগের আগে একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘৬ এপ্রিল নিরাপত্তা সংলাপ অষ্টমবারের মতো হতে যাচ্ছে। এর আগের বৈঠকটি ঢাকায় হয়েছিল। তবে আগের বৈঠক মহাপরিচালক পর্যায়ে হতো কিন্তু এবারে মার্কিন পক্ষ থেকে বিশেষ অনুরোধ ছিল পররাষ্ট্র সচিব এবং আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার যেন এবারের সংলাপে অংশগ্রহণ করেন। এটি ভালো লক্ষণ।’

কালের আলো/ডিএসবি/এমএম