আশা জাগিয়েছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল

প্রকাশিতঃ 10:39 am | April 04, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

অতিমারি করোনার ভয়ানক থাবা পেরিয়ে রীতিমতো আশার আলো জাগিয়েছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ। নির্মাণ শুরুর দুই বছরে কাজ হওয়ার কথা ছিল ৩০ ভাগ। কিন্তু হয়েছে ৩৩ ভাগের বেশি। ফলে আকাশপথে দেশের প্রবেশদ্বার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের (তৃতীয় টার্মিনাল) নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যেতে পারে নির্ধারিত সময়ের আগেই।

করোনার মধ্যেও প্রকল্পটির কাজ একদন্ডও থেমে না থাকায় আশাতীত সাফল্য মিলেছে। অব্যাহত রয়েছে কাজটি। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই ২০২৩ সালের জুনের আগেই নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার বড় সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনালের যাত্রী ধারণক্ষমতা বছরে ৭০ লাখ থেকে ২ কোটির মাইলফলক স্পর্শ করবে।অ্যাপ্রন বা পার্কিং এলাকায় একসঙ্গে রাখা যাবে ৩৭টি উড়োজাহাজ। ভেতরে যুক্ত হবে নতুন ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১টি বডি স্ক্যানার আর ১৬টি লাগেজ বেল্টসহ আরও কত কী! থাকবে স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনা। পার্কিংয়ে একসঙ্গে রাখা যাবে ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি! বিষয়গুলো অবিশ্বাস্য নয়, একেবারেই বাস্তব।

জানা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় শাহজালাল বিমানবন্দরের এই সম্প্রসারণ প্রকল্প। তারও আগে ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। সে সময় এর নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে আরও ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হলে প্রকল্পের আকার দাঁড়ায় প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকায়।

প্রকল্পটির নির্মাণব্যয়ের বড় অংশ আসছে জাপানের সহযোগিতা সংস্থা জাইকার কাছ থেকে। সংস্থাটি ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আর বাকি ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

প্রকল্পটির বিষয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, ‘এটা আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, সারা বিশ্ব যখন থমকে গেল, সব রকম যোগাযোগ ব্যবস্থাও একদম ডিসরাপ্টেড (বিঘ্নিত) ছিল, কোনো কাজ কোথাও হয়নি, তখনও আমাদের কাজ থমকে থাকেনি।

‘বিশেষ করে বিদেশি যারা এ দেশে ছিল, তাদের মধ্যেও কেউ খুব একটা তখন থাকেনি। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের থার্ড টার্মিনালের কাজে যেসব জাপানি ও কোরিয়ান প্রকৌশলী কাজ করছিলেন, তারাও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন চলে যাওয়ার। আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছিলাম সব সুবিধা তাদের প্রোভাইড করব। কোয়ারেন্টিন ফ্যাসিলিটি, তাদের নিরাপত্তা আমরা প্রোভাইড করব বলে আশ্বস্ত করেছিলাম। মিটিংয়ের পর মিটিংয়ে বসেছি, যাতে কাজটা চলমান থাকে।’

তিনি জানান, বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের কাজ এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। দুই বছরে ৩০ ভাগ কাজ হওয়ার লক্ষ্য থাকলেও এ পর্যন্ত হয়েছে ৩৩ ভাগ কাজ। অন্য মেগা প্রকল্পগুলোর তুলনায় এটা একটি অর্জন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, টার্মিনালের ৩ হাজারের বেশি পিলার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে গত বছরই। এখন এগুলোর ওপর তৈরি হচ্ছে টার্মিনালের অবকাঠামো। আর এ কারণে বিমানবন্দরসংলগ্ন সড়ক থেকেও দেখা যাচ্ছে প্রকল্পের অগ্রগতি।

তৃতীয় টার্মিনালের নকশা করেছেন প্রখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। নকশা অনুযায়ী, টার্মিনালের মূল ভবনের আয়তন হবে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। জাপানি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিমুজি আর কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান স্যামসাং যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

সূত্র জানায়, তৃতীয় টার্মিনালে নির্মাণ করা হবে আমদানি ও রপ্তানির জন্য আলাদা কার্গো কমপ্লেক্স। থাকবে ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার। এই টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত করা থাকবে মেট্রোরেলও। আর বর্তমান দুই টার্মিনালের সঙ্গে সুড়ঙ্গপথে যুক্ত হবে তৃতীয় টার্মিনাল।

টার্মিনালটি পুরোপুরি কার্যক্ষম হলে শাহজালাল বিমানবন্দর ব্যবহারকারীদের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কালের আলো/এসবি/এমএম