মিয়ানমারের মিথ্যাচার
প্রকাশিতঃ 12:46 am | October 05, 2017
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সোমবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মিয়ানমারের ইউনিয়নমন্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়ে দেশটি মিথ্যাচার করেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, মঙ্গলবার মিয়ানমার যে বিবৃতি দিয়েছে, তার এক জায়গায় বলা হয়েছে, দেশটির ইউনিয়নমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নেপিদো সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও তা গ্রহণ করেছেন। আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, যারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে চায়, তাদের ১৯৯২ সালের যৌথ ঘোষণা অনুযায়ী ভেরিফিকেশন করার বিষয়ে বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে। অথচ ওই বৈঠকে ওই ঘোষণার কিছু অংশ সংযোজন-বিয়োজন করে নতুন একটি চুক্তির খসড়া মিয়ানমারের মন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা ইস্যুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী ও মিয়ানমারের মন্ত্রী টিন্ট সোয়ের মধ্যে সোমবার (২ অক্টোবর) ঢাকায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক বিষয়ে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির অফিস থেকে মঙ্গলবার বিবৃতি দেয়।
বাংলাদেশ ১৯৯২ সালের যৌথ ঘোষণা মেনে নিয়েছে বলে দেওয়া মিয়ানমারের বিবৃতি বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, ১৯৯২ সালের চুক্তি বর্তমানে প্রযোজ্য নয়। এর পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করে নতুন একটি চুক্তির খসড়া মিয়ানমারের মন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।’
এদিকে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্য একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির প্রস্তাব করেছি। আমরা খসড়া দিয়েছি।’ এ প্রসঙ্গে সরকারের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ যদি ১৯৯২ সালের যৌথ ঘোষণা মেনেই নেবে, তাহলে নতুন চুক্তির প্রস্তাব কেন করবে?’
জানতে চাইলে সোমবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, “মিটিংয়ে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ক্যাজুয়ালি ও মৌখিকভাবে মিয়ানমার সফরের কথা বলেছেন দেশটির ইউনিয়নমন্ত্রী। জবাবে তিনিও ‘হ্যাঁ’ বলেছেন। কারণ কূটনীতিতে এটি একটি সৌজন্য। এ ধরনের মৌখিক দাওয়াতে কূটনৈতিকভাবে না বলা যায় না। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দ্বিপাক্ষিক সফরে মিয়ানমার যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দাওয়াত দেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের বক্তব্যকে অর্ধসত্য উল্লেখ করে সরকারের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা মৌখিকভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে কিন্তু কূটনীতিতে এটি গ্রহণযোগ্য নয়। কারও মুখের কথায় কোনও মন্ত্রী কোনও দেশ সফরে যান না। এ জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পাঠাতে হয়।’
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির ১৯ সেপ্টেম্বরে দেওয়া ভাষণ প্রসঙ্গে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, “সু চি তার ভাষণে অন্তত পাঁচটি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। সু চি বলেছেন, ‘সেপ্টেম্বর ৫ থেকে সামরিক বাহিনীর অভিযান বন্ধ আছে।’ যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এমনকি বর্তমানেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রতিদিন মিয়ানমারে সহিংসতার রিপোর্ট করছে।” তিনি আরও বলেন, “অন্য এক জায়গায় সু চি বলেছেন, ‘রাখাইনে সবার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সুযোগ ও সুবিধা আছে। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ওপর বিধিনিষেধ আছে।” তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘৫০ শতাংশ রোহিঙ্গা পালিয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে চার লাখ রোহিঙ্গা গত তিন সপ্তাহে পালিয়ে এসেছে। আগে থেকে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছিল। অর্থাৎ আট লাখ রোহিঙ্গা শুধু বাংলাদেশেই আছে। সু চির বক্তব্য যদি ঠিক হয়, তবে রোহিঙ্গার মোট সংখ্যা হওয়া উচিত ১৬ লাখ। কিন্তু তারা নিজেরাই বলে থাকে রোহিঙ্গা আছে ১১ লাখ।”
রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসা প্রসঙ্গে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সু চি বলেন, মুসলমানরা মিয়ানমার থেকে কেন দলে দলে পালিয়ে যাচ্ছে, এটি তার কাছে রহস্য। তিনি এর কারণ জানতে চান। তিন সপ্তাহ পর যদি তিনি দলে দলে পালিয়ে যাওয়ার কারণ খুঁজতে চান, তবে এতদিন তার সরকার রাখাইন নিয়ে এই বিবৃতি কিভাবে দেয়?’