অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নষ্ট ৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির ধান
প্রকাশিতঃ 1:48 pm | April 24, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে, যেটি মোট আবাদের এক শতাংশ। দেশের মোট খাদ্যের চাহিদা ও যোগানের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ ধানের ক্ষতি কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব। চলতি বছর ভালো ফলন মিলেছে। এছাড়াও হাওরেও ৬০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। ফলে বেশ নির্ভার রয়েছে দু’মন্ত্রণালয়ই।
হাওরে ধানের ক্ষতির ফলে চালের দামে কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও মনে করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তাঁরা বলছে, বাজারে কোথাও চালের কোন সঙ্কট নেই। হাজার হাজার টন চাল রয়েছে বাজার ও মিলারদের কাছে। বর্তমানে গুদামে মজুদ রয়েছে ১৪ লাখ টনের বেশি খাদ্যশস্য। ফলে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রায় কোনো ঘাটতি হবে না। অবশ্য কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রণোদনাসহ অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
জানতে চাইলে খাদ্য সচিব ড. নাজমানারা খানুম বলেন, চলতি বছর ৭ জেলার হাওরে ৪ লাখ ৫২ হাজার ১৩৮ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন করা হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য ছিল ১৩ লাখ টন চাল পাবে। আগাম প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। তবে ক্ষতির পরিমাণ এতো বেশি না।
তিনি জানান, দেশে ২ কোটি ৫৮ লাখ টন বোরো চাল উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল। হাওরে তলিয়ে গেছে ৭ হাজার হেক্টর জমি। বাকিগুলো ডুবে গেলেও ধান কাটতে পেরেছে কৃষক। এখন আবহাওয়া ভালোর দিকে রয়েছে। হাওরের ৬০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে।
খাদ্য সচিব আরও বলেন, ‘এই বছর আমাদের ভালো ফলন হয়েছে। আমরা যদি আরও ১০টা দিন ভালো আবহাওয়া পাই। আর যদি কোনো বিপর্যয় না আসে তাহলে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা পূরণ করতে পারবো। হাওরে যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা নিয়ে আমরা কিছু মনে করছি না।’
দ্রব্যমূল্য নিয়ে খাদ্য সচিব বলেন, চালের বাজারে কঠোর মনিটরিং করা হচ্ছে। আমাদের উৎপাদন ভালো, এখন সংগ্রহটা করতে পারলে অস্থিরতার কোনো কারণ নেই। বাজারে কোথাও চালের সংকট নেই। ১৩ লাখ টন চাল ও প্রায় দেড় লাখ টন গম গুদামে মজুদ রয়েছে। এছাড়া আরও আড়াই লাখ টন গম পাইপলাইনে রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, চলতি বছর দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জের হাওরে বোরো ধান আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫২ হাজার ১৩৮ হেক্টর জমিতে। আর নন-হাওরে আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে। মোট (হাওর ও নন-হাওর মিলে) আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৫০ হাজার ৩১৮ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির ধান অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আক্রান্ত হয়েছে, যা মোট আবাদের শতকরা এক শতাংশ।
কৃষি মন্ত্রণালয়ন সূত্রে জানা গেছে, অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল এবং বৈরী আবহাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ৮০ শতাংশ পাকলেই হাওরের ধান কাটার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, পাকা ধান দ্রুততার সাথে কাটার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য জেলা থেকেও নিয়ে আসা হয়েছে। এই মুহূর্তে হাওরে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার ধান কাটছে।
হাওরের উৎপাদন দেশের মোট উৎপাদনের ৬ শতাংশ বলে মনে করেন কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পুরো হাওর অঞ্চলে মাত্র ১ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি আমাদের দেশের মোট খাদ্যের চাহিদা ও যোগানের সাথে তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। যদি পুরো হাওর নষ্ট হতো তাহলে দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতো।
প্রতি বছরই কিছু বাঁধ ভেঙে যায় উল্লেখ করে কৃষি সচিব বলেন, বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণ হলো, পানির সাথে পলি পড়ে। সেই পলি জমে একদিক উঁচু অন্যদিক নিচু থাকে। এর ফলে বাঁধে চাপ পড়ে ভেঙে যায়। এজন্য খালগুলো পুনঃখনন করতে হয়। যান চলাচলের জন্য যে ড্রেজিং করা হয়, সেটা আরো নিবিড়ভাবে করতে বলা হয়েছে। এই দুটি সমস্যার সমাধান হলে বাঁধের ভাঙন কিছুটা রোধ করা যাবে। এছাড়া হাওর অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সেখানে আমাদের বলার কিছু থাকে না। বৃষ্টি যদি আগাম চলে আসে তাহলে আমাদের সমস্যা হয়।
তিনি বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় বিজ্ঞানীদের নিয়ে কাজ করছে, যাতে এমন জাত আবিষ্কার করা, যা মার্চের মধ্যেই ধান পেকে যাবে। তাহলে দুর্যোগের আগেই কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে পারবেন। এপ্রিল মাসেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি হয়। আমাদের এক শতাংশ ক্ষতি হয়েছে, এটাই যদি থাকে তাহলে মনে হয় না খুব বেশি প্রভাব পড়বে। যদি পুরোটা নষ্ট হয়, ২০১৭ সালে যেটা হয়েছিল। সেরকম কিছু হলে তাহলে বাজারে প্রভাব পড়ে। আমরা আউশের উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছি। হাওরের ক্ষতি যাতে পুষিয়ে নেওয়া যায়।
হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনের জন্য সহায়তা দেওয়া হবে জানিয়ে কৃষি সচিব বলেন, কৃষকদের আমরা বীজ, সারসহ ফসল উৎপাদনে যেসব প্রণোদনা দেওয়া হয়, সেগুলো দেওয়া হবে। এছাড়াও আমারা কৃষকদের ঋণের ব্যবস্থা করে থাকি। তবে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হবে। সেটা আগামী ফসলের আগে দেওয়া হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে অন্যান্য মন্ত্রণালয় থেকে যা দেওয়া হয়, সেটা অব্যাহত থাকবে।
কালের আলো/এসবি/এমএম