মুখ্য সচিবের কাছে ‘হার’ টিআইবির!

প্রকাশিতঃ 11:34 pm | April 25, 2022

কালের আলো রিপোর্ট :

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির অর্থায়নে অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি বিএইচপির নাম জড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউস। বলেছিলেন, ‘টিআইবিতে বেশি অর্থায়ন করে পরিবেশ দূষণের দায়ে বিভিন্ন দেশে কালো তালিকাভুক্ত অষ্ট্রেলিয়ান খনন কোম্পানি বিএইচপি। প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশের ক্ষতি করার জন্য বার বার জরিমানার সম্মুখীন হয়েছে।’

কিন্তু মুখ্য সচিবের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন টিআইবি। তাদের দাবি ছিল, মুখ্য সচিবের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর ও ভুল ধারণাভিত্তিক। গত রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেছিলেন, ‘বিএইচপির সাথে টিআইবির কখনও কোনোভাবেই পরিচিতি বা যোগাযোগও হয়নি।

টিআইবিকে মূলত অর্থায়ন করে আসছে ব্রিটিশ ফরেইন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও), সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন এজেন্সি (সিডা) এবং সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপারেশন (এসডিসি)।’

কিন্তু গোল বেঁধেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের অর্থনৈতিক নথিতে। তাঁরা কোথা থেকে অর্থ পায় এবং কোন কোন খাতে ব্যয় করে এমন একটি নথিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, পরিবেশ বিনাশী বিএইচপি ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে ১.৩ মিলিয়ন ডলার গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশী টাকায় এই অর্থের পরিমাণ ১১ কোটি ২০ লক্ষ ৯৩ হাজার ৩৩ টাকা।

ফলশ্রুতিতে মুখ্য সচিবের বক্তব্যের পরপর টিআইবি বেমালুম সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও এই যাত্রায় তাদের নৈতিক পরাজয় ঘটেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের অর্থনৈতিক নথি অন্তত এই বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে। যদিও সামাজিক মাধ্যমে ঘুরপাক খাওয়া এই নথি সম্পর্কে এখনও কোন মন্তব্য জানা যায়নি টিআইবির। তবে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড.কায়কাউস যে বিভ্রান্তিকর নয় বরং সঠিক তথ্যই উপস্থাপন করেছেন সেটিও দিবালোকের মতোই পরিস্কার হয়ে গেছে।

এর আগে গত শনিবার (১৭ এপ্রিল) ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড.আহমদ কায়কাউস প্রতি ডোজ করোনার টিকা কেনায় ৬৯ টাকা ঘুষ দেওয়া হয়েছে বলে টিআইবির অভিযোগকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘একটি কালো তালিকাভুক্ত কোম্পানির অর্থায়নে পরিচালিত টিআইবি আমাদের দুর্নীতিবাজ বলে যাবে, ফাজলামি নাকি? আমরা কি চুরি করে বসে আছি? ইমানের সঙ্গে কাজ করার পর ইমান ধরে টান দিলে বুকে ব্যথা পাই। দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারি-বেসরকারি উভয় পক্ষকেই একে অপরের কাছে স্বচ্ছ হতে হবে’ সেদিন যোগ করেন মুখ্য সচিব।

সোমবার (২৫ এপ্রিল) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও টিআইবির মনগড়া ও অসত্য বানোয়াট রিপোর্টকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘টিআইবি করোনার টিকাদানে দুর্নীতির কথা বলেছে। কোনও কোনও জায়গায় না কী ৬৬-৬৭ টাকা করে ঘুষ দিয়ে টিকা নিতে হয়েছে। ৬৬-৬৭ টাকা আজকাল কাউকে এমনি এমনি দিলেও নিতে চায় না। অথচ এটি প্রচার করা হলো দুর্নীতি হিসেবে।’

নৈতিক দৃঢ়তায় অনড় মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউস সব সময়ই স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পালস বুঝেন। তিনি মনে করেন, এক জীবনে বঙ্গবন্ধু কন্যার সঙ্গে মুখ্য সচিব হিসেবে কাজ করেছেন, এটিই তাঁর জীবনের অনেক বড় এক অর্জন।

করোকালীন সময়ে মুখ্য সচিবের দায়িত্বভার গ্রহণ করে ড.কায়কাউস প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেন। অনেক ক্ষেত্রে বহমান অস্বচ্ছতা তিনি দূর করতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। অনেক সমস্যার সমাধান করেছেন। তিনি ঈমানী জোরের কথা তুলে ধরেছিলেন।

সেদিন কেউ কেউ বিষয়টিকে আমলে না নিলেও টিআইবির বিএইচপি ফাউন্ডেশনের কাছ বিপুল পরিমাণ অর্থ গ্রহণের বিষয়টি কাগজে-কলমে সামনে চলে আসায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই মুখ্য সচিবের বক্তব্যের সত্যতার প্রশংসা করেছেন।

আবার কেউ কেউ টিআইবির সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন। টিআইবি বিভিন্ন সময়ে যেসব তথ্য প্রকাশ করে সেসবও এখন প্রশ্নবোধক এক অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। এক ধাপ এগিয়ে সোশ্যাল হ্যান্ডেলে বলাবলি হচ্ছে-ঈমানী জোরে মুখ্য সচিব জিতেছেন, টিআইবি হেরেছে। এখন দেখা যাক, টিআইবি কী করে?

কালের আলো/এসবি/এমএম