‘অপ্রতিরোধ্য’ পক্ষাঘাতগ্রস্ত কানিজ পদোন্নতি পেলেন মেজর পদে

প্রকাশিতঃ 10:39 pm | June 04, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

কানিজ ফাতেমা। দেশ আর মানবতার সেবায় যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। সময়টা ২০১১ সাল। কিন্তু শুরুতে ভাগ্য বিপর্যয়। ২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) প্রশিক্ষণের সময় মেরুদণ্ডের কর্ড ভেঙে যায় তাঁর। বিশাল এক ধাক্কা, ভেঙে যায় স্বপ্ন। দু’চোখে যেন ধূ ধূ মরুভূমি।

কিন্তু হার না মানার এক সংগ্রামেই নিজেকে নিবেদিত করলেন। ভাগ্যের এই কঠিন আঘাতের মুখেও অপ্রতিরোধ্য কানিজ ফাতেমা! নিয়মিত সেনা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া যেখানে অসম্ভব সেখানেই নির্ভীক, দুরন্ত কানিজ। হাল ছাড়তেই যতো আপত্তি তাঁর।

দেশমাতৃকা সুরক্ষিত করতে অবিচল থাকলেন। শত প্রতিকূলতাকে পায়ে মাড়িয়ে এগিয়ে গেলেন। কোন সিনেমাটিক গল্প-উপাখ্যান নয়, একেবারেই বাস্তব। তাঁর এই অদম্য উদ্যম ও দৃঢ়তার পুরস্কার হিসেবে তিনি ২০১৩ সালে বিশেষ বিবেচনায় পদোন্নতি পেয়েছিলেন।

হুইলচেয়ারে থাকা কানিজ নিজের দৃঢ়তা, নিখুঁত মানসিক শক্তি এবং সহকর্মীদের সাহায্যে স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে তার সেনাবাহিনীর রুটিন পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

কানিজ ফাতেমার অসাধারণ ও অনুকরণীয় সেবার স্বীকৃতি হিসেবে এবার তাঁর মুকুটে যুক্ত হলো সাফল্যের নতুন পালক। শনিবার (৪ জুন) তাকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ মেজর পদে পদোন্নতি দিলেন।

শনিবার (৪ জুন) ঢাকা সেনানিবাসের সেনা সদরের মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে কানিজের অদম্য চেতনা ও আবেগকে সম্মান জানাতে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করলো সেনা সদর দপ্তর।

সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ কানিজ ফাতেমাকে মেজর র‍্যাঙ্ক ব্যাজ পরিয়ে দিলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সেনাবাহিনীর সিজিএস লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, কিউএমজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাইফুল আলম, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, আর্টডকের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম মতিউর রহমান ও নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. শাহীনুল হক। বাহিনীটির সকল ফরমেশন কমান্ডাররাও উপস্থিত ছিলেন তখন।

সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, কানিজের গল্প, তার অর্জন, সমস্ত প্রতিকূলতা ও বাধা সত্ত্বেও প্রতিটি নারীকে আশা এবং সাহসের উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে অনুপ্রাণিত করবে।এটি শুধু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নয় দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সকল নারী সমাজের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীতে ২০০০ সালে নিয়মিত বাহিনীতে সর্বপ্রথম নারী অফিসার নিয়োগ প্রদান শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সাল হতে নারী সৈনিকের সংযোজন, নারী অফিসারদের ইউনিট কমান্ড প্রদান, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে গুরুত্বপূর্ণ পদে নারী অফিসারদের নিয়োগসহ বিভিন্ন পদক্ষেপে দেশে নারী উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের প্রতি কানিজের কৃতজ্ঞতা
পক্ষাঘাতগ্রস্ত কানিজ ফাতেমা ক্যাপ্টেন থেকে মেজর পদে পদোন্নতি পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেনাপ্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ’র প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। নিজের আনন্দানুভূতি জানিয়ে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সন্মানিত সেনাবাহিনী প্রধানের ঐকান্তিক চেষ্টা ও ইচ্ছার ফলশ্রুতিতে আমি আজকে র‍্যাঙ্ক পড়তে সমর্থ হয়েছি। আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চেষ্টা করবো, দেশ ও জনগণের প্রতি আমার সর্বাত্মক দায়িত্ব পালন করে যেতে।

কালের আলো/এনএল/এএএমকে