৭ বছরেই উঠবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের বিনিয়োগ করা অর্থ!
প্রকাশিতঃ 12:28 am | November 24, 2018
বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:
এক সময় কল্পনা ছিল বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট মহাকালে ঘুরে বেড়াবে। সেই কল্পনা ২০১৮ সালে সত্যি হয়েছে, মহাকাশে পৌছে গেছে বাংলাদেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। মাত্র ছ’মাসের ব্যবধানে স্যাটেলাইটের সুফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ।
রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানার টিভি চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সম্প্রচার কাজ পরিচালনা করছে।
গত ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ফ্যালকন-৯ রকেটযোগে মহাকাশে পাঠানো হয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। মহাকাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথ ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান হয় স্যাটেলাইটটির। এরপরেও নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এর নিয়ন্ত্রণ রকেটটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থ্যালেস অ্যালেনিয়ার কাছেই ছিল। পুরো প্রকল্পের জন্য খরচ হয় দুই হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা।
প্রায় ছয় মাস পর গত ৯ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে স্যাটেলাইটটির যাবতীয় কাগজপত্র ও নিয়ন্ত্রণ বুঝে নেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি। পরে সেদিনই সংস্থাটির কাছ থেকে এর নিয়ন্ত্রণ বুঝে নেয় বিসিএসসিএল।
বর্তমানে গাজীপুরের জয়দেবপুরে অবস্থিত সজীব ওয়াজেদ জয় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে স্যাটেলাইটটি। বিদেশ থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১৮ জন প্রকৌশলী পালা করে ২৪ ঘণ্টা তত্ত্বাবধানে রেখেছে এটিকে। এছাড়াও আরও ১২ জন প্রশিক্ষিত প্রকৌশলী বিটিআরসিতে ‘স্ট্যান্ডবাই’ অবস্থায় আছেন। কোনো কারণে গাজীপুরের ভূ-উপগ্রহকেন্দ্রে কোনো ধরনের ত্রুটি দেখা দিলে বেতবুনিয়ার ভূ-উপগ্রহ থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে এটির পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক কার্যক্রম।
এ বিষয়ে বিসিএসসিএল এর চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, থ্যালেস অ্যালেনিয়ার কাছে থাকার সময়েও আমরা বন্ধবন্ধু স্যাটেলাইটটি থেকে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালিয়েছি। তখন সীমিত পরিসরে সাফ ফুটবল গেমের সরাসরি সম্প্রচার করেছিলাম আমরা। তবে এখন আর কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। এখন আমাদের স্যাটেলাইট সবার জন্য উন্মুক্ত।
‘সবকিছু পরিকল্পনা মতো এগোলে স্যাটেলাইটটির কার্যকালের (কমপক্ষে ১৫ বছর) অর্ধেক সময়ের মধ্যেই বিনিয়োগের পুরো টাকা উঠে আসবে। বাকি সময়টুকু থেকে আমরা যা আয় করবো তা আমাদের লাভ।’
প্রতিষ্ঠানটির সূত্রে জানা যায়, চলতি নভেম্বর মাসের মধ্যেই পাঁচ থেকে ছয়টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল সম্প্রচারিত হবে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। আর আগামী ডিসেম্বর মাস নাগাদ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করবে দেশের প্রায় অর্ধেক সংখ্যক টিভি চ্যানেল। তবে বিসিএসসিলের কাছ থেকে প্রতি মেগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি কত দামে কেনা হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশের চ্যানেলগুলো বাইরে থেকে প্রতি মেগাহার্টজ প্রতি মাসের জন্য চার হাজার ডলার দামে কিনছে। চ্যানেলগুলো সাধারণত মাসে চার মেগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি কেনে। যারা হাই ডেফিনিশনে সম্প্রচার করে তারা ছয় মেগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি কেনে। আমরা আশা করছি আমাদের দেশের চ্যানেলগুলোও আমাদের থেকে এই দামেই ফ্রিকোয়েন্সি কিনবে। তবে আমরাও অন্যদের থেকে শর্ত সহজ ও শিথিল রাখবো। সেই হিসেবে ২০টি চ্যানেলও যদি আমাদের থেকে প্রতি মাসে চার মেগাহার্টজ করে ফ্রিকোয়েন্সি কেনে তাহলে আমাদের এখান থেকেই মাসে আয় হবে প্রায় তিন কোটি টাকা। আয়ের আরও খাত তো রয়েছেই।
শাহজাহান মাহমুদ আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশের চ্যানেলগুলো ফ্রিকোয়েন্সির জন্য বিদেশে প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার অর্থ পরিশোধ করে। এতে আমাদের দেশীয় মুদ্রা বিদেশে চলে যায়। চ্যানেলগুলো যদি আমাদের স্যাটেলাইট ব্যবহার করে তাহলে জাতীয় স্বার্থে উপকার হবে দু’দিক থেকে। একদিকে দেশীয় মুদ্রার সাশ্রয় হবে, অপরদিক থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানই মুনাফা অর্জন করবে।
কালের আলো/টিএম/এমএইচএ