প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গোপন বৈঠকের অভিযোগ বিএনপির

প্রকাশিতঃ 5:14 pm | November 24, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ী করতে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত গোপন বৈঠক করছেন। প্রশাসন এবং পুলিশের বিতর্কিত ও দলবাজ কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগকে ফের ক্ষমতায় বসাতে নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।

শনিবার সকালে নয়াপল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলেন তিনি।

রিজভী অভিযোগ করেন, গত ২০ নভেম্বর মঙ্গলবার রাতে ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের চার তলার পিছনের কনফারেন্স রুমে এক গোপন মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সচিব সাজ্জাদুল হাসান, জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহমদ, নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালউদ্দীন আহমদ, পানিসম্পদ সচিব (শেখ হাসিনার অফিসের প্রাক্তন ডিজি) কবির বিন আনোয়ার, বেসামরিক বিমান পরিবহন সচিব মহিবুল হক, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও মহানগরী রিটার্নিং অফিসার) সদস্য সচিব আলী আজম, প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-১ (বিচারক কাজী গোলাম রসুলের মেয়ে) কাজী নিশাত রসুল। এছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব, ডিএমপি ও কাউন্টার টেররিজমের কর্মকর্তারা।

তিনি বলেন, রাত সাড়ে ৭টা থেকে আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এ মিটিংয়ে সারাদেশের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং সেট-আপ ও প্ল্যান রিভিউ করা হয়। ডিআইজি হাবিব জানায়, পুলিশ সূত্রের খবর অনুযায়ী ৩৩টি সিট নৌকার কনফার্ম আছে এবং ৬০-৬৫ টিতে কনটেস্ট হবে, বাকি আর কোনো সম্ভাবনা নেই। কাজেই সাংঘাতিক কিছু করা ছাড়া এটি উৎরানো যাবে না। বিস্তারিত আলোচনা শেষে মূল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, নির্বাচন কমিশন থেকে বিএনপি-ফ্রন্টকে চরম অসহযোগিতা করা হবে, যতই চাপ দেয়া হোক প্রশাসনে হাত দেয়া যাবে না, ধরপাকড় বাড়ানো হবে, প্রার্থী গুম খুন করে এমন অবস্থা তৈরি করা হবে যাতে তারা নির্বাচন থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়। সেটির আলামত ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে যশোর জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি ও বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী আবু বকর আবুকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে।

রিজভী জানান ওই বৈঠকে আরও বলা হয়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যদি শেষ পর্যন্ত ভোটে থেকে যায় তাহলে ভোটের দিন পর্যন্ত ধরপাকড়ের তাণ্ডব চালানো হবে নির্দয়ভাবে, যেনো ভোট কেন্দ্রে কেউ হাজির হতে সাহস না করে। আর যদি ধানের শীষের অনুকুলে ভোটের হাওয়া ঠেকানো না যায়, তবে মিডিয়া ক্যু করে নৌকাকে জেতানো হবে, বিটিভির মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণা করে সব মিডিয়াতে তা রিলে করার ব্যবস্থা করা হবে। একবার ফল ঘোষণা করতে পারলে তারপরে নির্মমভাবে সব ঠান্ডা করা হবে।

রিজভী বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় এরপর থেকে এ ধরনের সভা খুব বেশি করা যাবে না, তবে কনসালটেশন করে কাজ করা হবে। এছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্প তদারকির নামে আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে ৮ জন আওয়ামী দলীয় কর্মকর্তা দিয়ে মনিটরিং সেল গঠন করে পুলিশ সদর দফতর। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান ৪৫ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ৬৪ জেলার উপদেষ্টা (মেনটর) নিয়োগ করে একটি নজিরবিহীন সরকারী আদেশ জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ নিয়ে বিএনপির লিখিত আপত্তির প্রেক্ষিতে তা বাতিল করতে বাধ্য হয়। কিন্তু গোপনে ঐসব কর্মকর্তারা জেলায় জেলায় মনিটরিংয়ের কাজ এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। এর বাইরে সারাদেশের ভোট ইঞ্জিনিয়ারিং করার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা প্রথম তালিকার ৬ জন সচিবকে নিয়ে একটি গুপ্ত কমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে। মুলত এখানে সব ধরনের অফিসাররা আসেন, তাই বিরোধী পক্ষের চোখ এড়ানো সহজ হবে মনে করে অফিসার্স ক্লাবে গুরুত্বপূর্ণ এই সভাটি বসে।

রিজভীর অভিযোগ, ক্ষমতাসীনরা আসন্ন ভোট নিয়ে কি ভয়ংকর পরিকল্পনায় মেতে উঠেছে। উপরিউক্ত দলবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও কর্মকাণ্ড সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচন কমিশনকে লিখিত আকারে জানানো হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে সরকারের এজেন্ডা নির্বাচন কমিশন কখনো প্রকাশ্যে কখনো নীরবে-নিভৃতে বাস্তবায়ন করছে-এই অভিযোগ এখন সর্বত্র। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিরসন করতে সক্ষম হয়নি। তফসিল ঘোষণার পরও আওয়ামী প্রশাসনিক দাপটের ছবিটা মোটেও বদলায়নি। কিন্তু কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে কতিপয় কমিশনার তাদের স্বপদে বহাল রাখতে তৎপর। নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে কাজ করছে বলেই এই অভিযোগগুলো থেকে ছিটকে আসা কাদা তারা ঠেকাতে পারে না। বিতর্কিত নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেকে সরাতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে তাদের প্রত্যাহার করতে হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস কাদের চৌধুরীর প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, গিয়াস কাদের চৌধুরী সাবেক সংসদ সদস্য। এ জন্য তিনি কারাগারে কারাবিধি অনুযায়ী ডিভিশন পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু তাকে আটক করার পর প্রথমে ডিভিশন দেওয়া হলেও গতকাল তা বাতিল করে সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে আমদানিওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।

কালের আলো/এনপি/এমএইচএ