দ্বাদশ ভোটে আওয়ামী লীগের ‘ফোকাস পয়েন্ট’ মেগাপ্রকল্প

প্রকাশিতঃ 4:35 pm | July 26, 2022

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর :

টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ভোটের প্রচারণায় নি:সন্দেহে দলটির এবারকার মূল ‘ফোকাস পয়েন্ট’ হবে স্পর্ধিত বাংলাদেশের বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি পদ্মা সেতু। ইতোমধ্যেই দেশের সর্ববৃহৎ এই স্থাপনা উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে স্বপ্নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

সক্ষমতা আর মর্যাদার এই প্রতীক এবারের ভোটের মাঠে ক্ষমতাসীনদের জন্য হবে ‘প্রাইম কার্ড’। পদ্মা সেতুর দৌলতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ টি জেলার ৬৭ টি আসনে ক্ষমতাসীনদের নিরঙ্কুশ জনপ্রিয়তা অর্জিত হয়েছে। সুসংহত হয়েছে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক। পাল্টে দিয়েছে দেশের ভোট রাজনীতির হিসাব-নিকাশকেও।

পাশাপাশি মেট্রোরেল, বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, বঙ্গবন্ধু টানেলসহ চলমান মেগাপ্রকল্পগুলোর সফল বাস্তবায়নের চিত্রপটও ভোটের হাওয়ায় যোগ করবে বাড়তি মাত্রা। উড়াবে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সমৃদ্ধির পতাকা। মেগা এসব প্রকল্পের উদ্বোধন ব্যালটের লড়াইয়ে অনেকটাই নিশ্চিত করবে চালকের আসন।

বিশ্লেষকরাও অভিন্ন কন্ঠে বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে এই মেগাপ্রকল্পসমূহ দৃশ্যমান উন্নয়ন বাস্তবতার উদাহরণ তৈরি করবে। ভোটে জয়-পরাজয়েও হয়ে উঠবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। টানা জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার ‘ট্রাম্পকার্ড’ হবে উন্নয়নের স্বর্ণদুয়ার উন্মোচনের এসব দৃশ্যকাব্য।

তাদের পরিস্কার ভাষ্য হচ্ছে- একটি রাজনৈতিক দল, কিছু সুশীল ও নিধিরাম সর্দার মার্কা লোক ক্ষমতার যাওয়ার রঙিন খোয়াব দেখেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ বোকা নয় মোটেও। তারা জানে বিএনপিকে ভোট দিয়ে ফায়দা নেই।

ভোটের আগেই যখন এসব মেগাপ্রকল্প উদ্বোধন হবে তখন বিএনপি চোখে সর্ষের ভূত দেখবে। এই দেশের ভোটের রাজনীতি বড় জটিল। মানুষ এখন উন্নয়ন চায়। সাধারণ মানুষের মাঝে বিশ্বাস জন্মেছে আওয়ামী লীগের পক্ষেই উন্নয়ন সম্ভব।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, ‘সমালোচকরা সমালোচনা ও অপপ্রচার করবে। আমরা জবাব দেব কাজে। শেখ হাসিনা সরকার কাজেই জবাব দেয়। আমরা মেট্রো রেল, পদ্মা সেতুসহ মেগা প্রজেক্ট দিয়ে জবাব দিচ্ছি।’

‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ’- শীর্ষক একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুত অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন এবং ২১ দফা অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন দৃশ্যমানতা সাধারণের কাছে স্পষ্ট করার কৌশলও রয়েছে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতাসীন দলটির। সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজের অগ্রগতিতে অনেক দূর এগিয়ে গেছে সরকার। মূলত-সরকারের এই দৃশ্যমান উন্নয়ন বাস্তবতাগুলো আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলটির জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে অন্যতম ‘ট্রাম্পকার্ড’ হতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

দলীয়সহ বিভিন্ন পরিমন্ডলে নিজ সরকারের সময়ে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির চিত্র সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গেই তুলে ধরছেন দলটির নীতি নির্ধারকরা। মাঠে মাঠে আওয়াজ দিচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন বিপ্লবে সারা দেশে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটির কথা। আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের বিজয় সুনিশ্চিতের বার্তা।

চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিল, সমাবেশ, জনসভা বা অনুষ্ঠানে টানা তেরো বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন-সমৃদ্ধির মহাসোপানে থাকা দেশকে উপস্থাপন করছেন আওয়ামী লীগের টানা চারবারের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি এমপি।

মায়ের মমতায় দেশ পরিচালনা করা প্রধানমন্ত্রীর ক্যারিশমেটিক লিডারশিপকে তিনি উচ্চকিত করেছেন। বলেছেন, ‘উন্নয়নের বাইরে কেউ থাকবে না-এই নীতি সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সততা, দৃঢ়তা, সাহস, মনোবলের কারণে আজকের বাংলাদেশ দীপ্ত পায়ে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে।

দেশে পদ্মা সেতুর মত বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। যার সুফল এখন সারাদেশের মানুষ পাচ্ছে। এখন আর দেশে কেউ না খেয়ে ঘুমায় না, বরং বহির্বিশ্বে বিপদে পড়া দেশকে খাদ্য সহায়তাকারী দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।’

পাশাপাশি বিএনপির শাসনামলে দেশের অর্থনীতির নাজুক অবস্থা, বিদ্যুৎহীন অন্ধকার অধ্যায়, দুর্নীতিতে শীর্ষ অবস্থান, জঙ্গিবাদে উত্থান, জিয়া পরিবারের দুর্নীতির দায়ে সাজা পাওয়ার বিষয়গুলোও মোটা দাগেই উপস্থাপন করছেন শিক্ষামন্ত্রী। উন্নয়নের সূচকগুলোর মাধ্যমে তিনি দেখিয়ে দিচ্ছেন দল হিসেবে সরকারে যাওয়া ও থাকার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগই শ্রেষ্ঠ।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ ও তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ এমপি মনে করেন, ‘দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হবেন।’ ঘরে বসে থেকে নয়, উন্নয়নের কথা মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। নেতাকর্মী বা সমর্থক হিসেবে দলের প্রচারে বাইরে বিচরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

দলীয় এবং সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সরকারের ৯৬ থেকে ২০০১ ও ২০০৯ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশের অর্জনগুলো তুলে ধরছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী। ২০৪১ সাল নাগাদ সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন।

কালের আলো/ডিএস/এমএম