সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েই জেনারেল শফিউদ্দিন ছুটে গিয়েছিলেন ৩২ নম্বরের সেই বাড়িতে
প্রকাশিতঃ 2:44 pm | August 15, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
ইতিহাসের করুণ ও নির্মম অধ্যায় জড়িয়ে আছে এই বাড়িজুড়েই। আবার, বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়-প্রতিটি ঘটনারই স্বাক্ষীও এই বাড়িটিই। দীর্ঘ ৪৭ বছর পরও অক্ষত, অমলিন সব স্মৃতি। এখনও মুছে যায়নি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মমতার চিহ্ন।
এখানেই প্রায় ১৪ টি বছর স্বপরিবারে কাটিয়েছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা এই বাড়িটিকেই ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ তম সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার দু’দিনের মাথায় ২০২১ সালের শনিবার (২৬ জুন) সকালে বাঙালি জাতির জন্ম ইতিহাসের সূতিকাগার এই বাড়িটিতেই ছুটে গিয়েছিলেন জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। ঘুরে ঘুরে দেখেছিলেন কালের স্বাক্ষী হয়ে থাকা স্মৃতি জাদুঘরটির বিভিন্ন কক্ষ। সঙ্গে ছিলেন তাঁর জীবনসঙ্গী বেগম নুরজাহান আহমেদ ও তাদের রক্তের উত্তরাধিকার। বাঙালির ইতিহাস ছোঁয়া এই বাড়িটি সেদিন শোকাচ্ছন্ন করে তাদেরকেও।
সেখানে এখনও পরিপাটি বঙ্গবন্ধুর ব্যবহার করা বিভিন্ন সামগ্রী ও আসবাব-অবকাঠামো। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর শয়ন কক্ষ, পড়ার ঘর, ছোট্ট একটি ড্রয়িং রুম যেখানে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসে টিভি দেখতেন ধন্য সেই পুরুষ। আছে বঙ্গবন্ধু ব্যবহৃত পাইপ, চশমা, বঙ্গবন্ধুর পানের বাটা, চাদর, ছোট ও বড় আকারের কোরআন শরিফ, তসবি, টুপি, বেগম মুজিবের ব্যবহৃত জবা কুসুম তেল, শাড়ি, সুরমাদানি, ব্যবহৃত স্যান্ডেল, জুতো, হাতব্যাগ ও পাসসহ বিভিন্ন ব্যবহার সামগ্রী।
এসব ব্যক্তিগত স্মৃতিচিহ্নের পাশাপাশি ঐতিহাসিক নানা ঘটনাপ্রবাহের সাক্ষ্যও আজও অমলিন এই বাড়িতে। এসব কিছুই দেখার ফাঁকে স্বভাবতই সেদিন নতুন সেনাপ্রধানের চোখের কোণে কয়েক ফোটা মণিমুক্তো।
এই বাড়িটির প্রতিটি স্থানে ছড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধু, তাঁর স্ত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ পরিবারের অন্যদের আরও অনেক স্মৃতি। একটি কক্ষের পাশেই বঙ্গবন্ধুর পড়ার ঘর। এখানে বসে জাতির পিতা লেখালেখি করতেন। এখান থেকেই তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠিয়েছিলেন। অমলিন এসব স্মৃতি আপ্লুত করেছিল জেনারেল এস এম শফিউদ্দিনকেও।
ইতিহাসের কলঙ্কিত ভয়াল পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের নির্মমতার চিহ্ন দেখে কিছুক্ষণের জন্য থমকে যান সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। দীর্ঘ সময় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনের সময় কার্যত তাঁর মুখচ্ছবিতে ফুটে ওঠে বেদনার চিহ্ন। ওইদিন আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন এই চারতারকা জেনারেল।
বঙ্গবন্ধু ভবন পরিদর্শন শেষে সেদিন গণমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন। আবেগমোথিত কন্ঠে তিনি উচ্চারণ করেছিলেন-‘আমাদের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাতে পারা সেনাপ্রধান হিসেবে আমার জন্য সৌভাগ্য।’
এর আগে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। পরে তিনি সেখানে রক্ষিত পরিদর্শন বইয়েও স্বাক্ষর করেন বলে ওইদিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)।
নিজের প্রতিটি বক্তব্যে ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বাঙালির আবেগ-উদ্দীপনা ও সংগ্রামী চেতনার দ্যোতনায় অসাধারণভাবেই উপস্থাপন করেন। নিখাদ স্টাইলের মৌলিকত্ব, চিরকালীন ও সর্বজনীন নানা উপমা হয়ে উঠেছে মহান জাতির পিতাকে নিয়ে তাঁর প্রতিটি বক্তব্য।
২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর সেনা সদরে ‘খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্য এবং ২০২০/২০২১ সালে শান্তিকালীন পদকপ্রাপ্ত সেনাসদস্যগণকে সেনাবাহিনী প্রধান কর্তৃক সংবর্ধনা ও পদক প্রদান’ অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ উপস্থাপন করেন পাকিদের ২৩ বছরের শাসন-শোষণ আর পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে বাঙালি জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহসী, ঐতিহাসিক নেতৃত্ব ও দূরদর্শীতার কথা।
সেদিন জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসের এই শুভলগ্নে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ।’
কালের আলো/বিএস/এমএম