বিআরটি প্রকল্প রীতিমতো গলার কাঁটা
প্রকাশিতঃ 10:10 am | August 18, 2022

কালের আলো রিপোর্ট :
তুরাগ পরিবহনের চালক মো. মাহাতাব। দীর্ঘ ২৫ বছর গাড়ি চালান ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। সড়কটির সাম্প্রতিক বেহাল দশা নিয়ে কথা বলতেই তার অভিযোগের আঙুল বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের দিকে। মাহাতাব এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরুর পর থেকে রাস্তার অবস্থা ভালো নেই। এত পরিমাণ ভাঙা এবং একই রাস্তায় কোথাও এক হাত উঁচু আবার কোথাও এক হাত নিচু। রাতে চলাচল যে কতটা ভয়ংকর, তা কল্পনা করা যায় না।’
আদতে যানজট নিরসন এবং যান চলাচলে আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার প্রবর্তনের জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের শিববাড়ি মোড় থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কাজের ধীরগতির কারণেই এই প্রকল্প এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন সড়কটিতে চলাচলকারী যাত্রী, পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ।
সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল বিআরটি প্রকল্পের কাজ। ধীরগতির কারণে ব্যয় ও মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়। আরেক দফা প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে আরও দেড় বছর, সঙ্গে ব্যয়ও।
দেখা গেছে, বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণকাজের জন্য সমন্বয় না করেই যত্রতত্র খোঁড়া হচ্ছে সড়ক। আর রাস্তা খোঁড়ার পর তা সঠিকভাবে মেরামত না করায় প্রতিনিয়ত লেগে থাকছে যানজট, ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। দেশের অন্যতম ব্যস্ত এই মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে লাখো মানুষ। যানজটের কবলে পড়ে যাদের নষ্ট হচ্ছে গড়ে প্রায় ৬ থেকে ৭ কর্মঘণ্টা।
এদিকে, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা না নিয়েই বিআরটি প্রকল্পের ভারী ও কঠিন কাজগুলো করা হচ্ছে। এতে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এমনকি গত সোমবার ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় গার্ডার পড়ে মৃত্যু হয় পাঁচজনের। এর আগে গত ১৫ জুলাই চান্দনা চৌরাস্তায় ফ্লাইওভারের লঞ্চিং গার্ডার পড়ে এক নিরাপত্তাকর্মী নিহত ও দু’জন আহত হন। এসব ঘটনায় প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের আন্তরিকতা, দায়িত্বশীলতা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
বিআরটি প্রকল্পের কারণে টঙ্গী থেকে গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারের চার লেনের সড়কে এখন দুই লেনে চলছে যানবাহন। এতে করে চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে এই মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতি ঘণ্টায় প্রায় আড়াই হাজার যানবাহন চলাচল করে এই সড়ক দিয়ে। আর ঈদ এলে যে সংখ্যা বাড়ে কয়েকগুণ। আগে চার লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও লেগে থাকত তীব্র যানজট। এখন দুই লেন দিয়ে এই বিপুলসংখ্যক যানবাহন কীভাবে ওই ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে, তা নিয়ে চিন্তিত যানবাহনের মালিক, চালক ও পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়ক ঘুরে দেখা যায়, চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় কোথাও পিলার নির্মাণ আবার কোথাও উড়ালসড়কসহ নানা কর্মযজ্ঞ চলছে। আর এসব কাজের জন্য ভোগড়া থেকে টঙ্গী স্টেশন রোড পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে সড়কের মাঝখানে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে।
বিআরটি প্রকল্পের ধীরগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে গাজীপুরের প্রকৌশলী আকরাম হোসেন বলেন, ‘যানজট নিরসন এবং যান চলাচলের আধুনিক পরিবহনব্যবস্থাসহ যে প্রত্যাশা নিয়ে বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল তা ধীর ধীরে এর কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলছে। সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে একটি অপরিকল্পনার ছাপ। ’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহ বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজের প্রায় ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
কালের আলো/ডিএস/এমএম