ময়মনসিংহে ২০০ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা পুলিশের হাতে
প্রকাশিতঃ 5:16 pm | January 28, 2018
অ্যাক্টিং এডিটর | কালের আলো:
হাত বাড়ালেই আর গাঁজা, হেরোইন, ফেন্সিডিল কিংবা ইয়াবা নয়। শিক্ষা নগরী ময়মনসিংহে মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন থামাতে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে পুলিশ। ইতোমধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ২’শ মাদক ব্যবসায়ীর নামের তালিকা। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক কারবারি করেই আখের গুছানো কোটিপতি এসব মাদক ব্যবসায়ীদের এবার আর নিস্তার নেই।
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের গুটিকয়েক নেতার আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে এতোদিন তাঁরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কব্জায় আসেননি। তালিকাভুক্ত এসব মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে এবার জোরদার করা হয়েছে পুলিশের অভিযান।
শুধু তাই নয়, মাদক ব্যবসায় লগ্নি করা অর্থের যোগানদাতাদেরও শেষ রক্ষা হবে না। প্রস্তুত করা হয়েছে তাদের অর্থ যোগানদাতা ও তদবিরবাজদের তালিকাও। চিহ্নিত করা হয়েছে মাদক কারবারিদের পেছনের গডফাদারদেরও। খবর পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রের।
মাদক নির্মুলে পুলিশ ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থানে রয়েছে জানিয়ে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) রাতে পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি দৈনিক কালের আলোকে বলেন, মাদক যার কাছ থেকে পাওয়া যাবে তাকেই ধরা হবে। কারা মাদকের যোগানদাতা, প্রশ্রয়দাতা সবার সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। মাদকের বিষয়ে কোন ছাড় নেই। কোন পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
জানা যায়, ময়মনসিংহ নগরী থেকে উপজেলা পর্যন্ত সাম্প্রতিক সময়ে বিস্তৃত হয়েছে মাদকের নেটওয়ার্ক। এখানকার প্রায় তিন শতাধিক স্পটে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার মাদক কেনা-বেচা হচ্ছে। এসব পয়েন্ট হয়ে উঠেছে মাদকের নিরাপদ অভয়ারণ্য। এসব পয়েন্টের মাদক ব্যবসায়ীদের হাত ধরেই ময়মনসিংহে আসছে হেরোইন, গাঁজা, ইয়াবা ও ফেন্সিডিলের চালান।
সূত্র জানায়, একাধিক প্রভাবশালী ফেন্সিডিল, ইয়াবা, গাঁজা ও হেরোইনের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক। বছরের পর বছর এরা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থাকেন। ময়মনসিংহ শহর ও শহরতলীতে শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের মাধ্যমে মাদক বহন করা হচ্ছে।
নগরীর উল্লেখযোগ্য মাদক স্পট সমূহ হচ্ছে- কৃষ্টপুর, পুরোহিত পাড়া, ডিবি রোড, চামড়া গুদাম, রামকৃষ্ণ মিশন রোড, বাসাবাড়ি কলোনী, মাসকান্দা, সানকিপাড়া, সানকিপাড়া শেষ মোড়, গোহাইলকান্দি, জামতলা মোড়, চরপাড়া, ব্রাহ্মপল্লী, নওমহল, আকুয়া, মালগুদাম, কালিবাড়ি, গোদারাঘাট, পাটগুদাম রেলওয়ে কলোনী ও কেওয়াটখালী।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, এসব স্পটের পাশাপাশি ১১ টি উপজেলার বিভিন্ন স্পটে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার ফেন্সিডিল, হেরোইন, গাঁজা ও ইয়াবার প্রকাশ্যে রমরমা বাণিজ্য চলছে। মাঝে মধ্যে র্যাব বা পুলিশের অভিযান চললেও রাঘব বোয়ালা মাদক ব্যবসায়ীরা থেকে যান ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। আবার নিয়মিতই পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করলেও আইনের ফাঁকগলে এরা বেরিয়ে নতুন উদ্যমে মাদক কারবার চালিয়ে যায়।
মাদকের এমন ভয়াবহ আগ্রাসন বন্ধ করতে রীতিমতো হার্ডলাইন নিয়েছে ময়মনসিংহ রেঞ্জ ও জেলা পুলিশ। পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি ও জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলামের কঠোর নির্দেশে তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ।
জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম শনিবার (২৭ জানুয়ারি) রাতে দৈনিক কালের আলোকে বলেন, ‘ময়মনসিংহকে মাদকমুক্ত করবো এটা আমার অঙ্গীকার। এ সংক্রান্ত কঠোর নির্দেশনাই পুলিশ সদস্যদের দেয়া হয়েছে। এ নগরীতে মাদকের কোন উৎপাত থাকবে না। মাদক ব্যবসায়ীদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না।’
পুলিশ সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) মধ্যরাত থেকে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। এ খবরে চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত অনেক মাদক ব্যবসায়ী আত্নগোপন করেছেন।
মাদক ব্যবসায়ীদের আস্তানা চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান দৈনিক কালের আলোকে জানান, ময়মনসিংহে কোন মাদকের আস্তানা থাকবে না। ইতোমধ্যে প্রায় দু’শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। মাদকের পেছনে গডফাদারদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে। করা হয়েছে তদবিরবাজ ও মাদকের পেছনে অর্থ যোগানদাতাদেরও তালিকা।
সূত্র মতে, গোটা ময়মনসিংহ নগরীকে মাদকমুক্ত করতে তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারে যৌথ অভিযানে নেমেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ। নগরীর কৃষ্টপুর এলাকা থেকে গ্রেফতারকৃত ৭ মাদক ব্যবসায়ীকে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) দিনগত গভীর রাতে নগরীর মাদকজোন হিসেবে পরিচিত কৃষ্টপুর এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী আমিন, আলী হোসেন, রফিকুল ইসলাম, মালেকা, জয়নাল আবেদিন, রমিজ আহম্মেদ ও তুষারকে গ্রেফতার করা হয়।
কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি/ইনটিলিজেন্স এন্ড কমিউনিটি পুলিশিং) মো: মুশফিকুর রহমান দৈনিক কালের আলোকে জানান, গ্রেফতারকৃত তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ২ থেকে ৩ টি করে মাদক আইনে মামলা রয়েছে। তালিকাভুক্ত সব মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এসব ব্যাপারে কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহমুদুল ইসলাম দৈনিক কালের আলোকে বলেন, ‘মাদকমুক্ত ময়মনসিংহ উপহার দেয়া ডিআইজি ও জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) অঙ্গীকার। তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান শুরু হয়ে গেছে। এ অভিযান নিয়মিতই চলবে। কোন মাদক ব্যবসায়ীর শেষ রক্ষা হবে না।’
কালের আলো/এমকে