বাদ বাকী মেয়রদের পদমর্যাদা কবে নির্ধারণ হবে?

প্রকাশিতঃ 5:06 pm | August 24, 2022

কালের আলো রিপোর্ট :

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার দু’বছরের মাথায় মন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছেন আতিকুল ইসলাম। একইভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকেও দেওয়া হয়েছে মন্ত্রী পদমর্যাদা। তাদের গাড়িতে এখন উড়ছে জাতীয় পতাকা।

রাজধানীর দু’মেয়রের মতোই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীও প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করছেন। ফলত চার সিটির বাসিন্দাদের মাঝে চলছে অন্যরকম এক উচ্ছ্বাস।

বিপরীতে এখনও পদমর্যাদা সুরাহা হয়নি ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রদের। সেখানে একরকম হতাশাই তৈরি হয়েছে। তবে এসব বিষয়ে কোন মেয়রই কথা বলতে রাজি হননি। তবে তাদের এলাকার সাধারণ নাগরিকরা প্রত্যাশা করেন, এসব মেয়রদের কর্মের মূল্যায়ন করে পদমর্যাদা নির্ধারণ করলে নাগরিক সুবিধা বাড়বে এবং উন্নয়ন কাজও ত্বরান্বিত হবে। অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্তই গ্রহণ করবেন।

এর আগে শুধুমাত্র রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও খুলনা সিটি করপোরেশনের তালুকদার আব্দুল খালেককে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছে সরকার।

রাজধানীর বাইরে দশটি সিটি করপোরেশনের মধ্যে আটটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন-রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, খুলনা সিটি করপোরেশনের তালুকদার আব্দুল খালেক, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র আরফানুল হক রিফাত, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম (বরখাস্ত) সেখানে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে আসাদুর রহমান কিরণ দায়িত্ব পালন করছেন।

বাদ বাকী দুটির মধ্যে সিলেটে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির। রংপুর সিটি মেয়র হিসেবে দায়িত্বে আছেন জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

জানা যায়, তিন সিটির মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। ময়মনসিংহের মেয়র ইকরামুল হক টিটু মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও কুমিল্লার মেয়র আরফানুল হক রিফাত মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

সূত্র জানায়, ৫ সিটির মেয়রদের মর্যাদার অমীমাংসিত বিষয়টির নিষ্পত্তি হলে প্রটোকলসহ সরকারি সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বাড়তি গতির সঞ্চার হবে। এতে আরও বেশি উপকৃত হবেন তাদের এলাকার বাসিন্দারাই।

শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট মেয়রদের বিশেষ মর্যাদা নির্ধারিত হলে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে প্রটোকল নিয়ে সমস্যারও সমাধান হবে বলে মনে করেন মেয়রদের ঘনিষ্ঠরা। তারা বলছেন, সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বা মন্ত্রী পর্যায়ের কোনো কমিটির ডাকে মেয়রদের আসন বিন্যাস নিয়ে যথেষ্ট বেকায়দায় থাকেন সরকারি কর্মকর্তারা।

ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স মানলে সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে অতিরিক্ত সচিবের ‘উপরে’ মর্যাদায় তাদের গণ্য করতে হয়। আবার ব্যক্তিত্ব, পূর্ববর্তি পদ, রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় তাদের বাড়তি গুরুত্ব না দিয়েও উপায় নেই। সব মিলিয়ে বিভিন্ন সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় সরকারি কর্মকর্তাদের। বিব্রত হতে হয় মেয়রদেরও। তাদের ঘনিষ্ঠরা দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।

সবাই একবাক্যে অন্য সিটি করপোরেশনের মেয়রদের মতো নিজেদের সিটির মেয়রদেরও মর্যাদার উন্নতি চান। চান উন্নয়ন বরাদ্দে সরকারের সুস্পষ্ট নীতিমালা। সরকার সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন মর্যাদার প্রশ্নে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন নীতিমালা করুক এই প্রত্যাশাও সংশ্লিষ্টদের।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ এসব বিষয়ে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের মেয়ররা নগর পিতা। তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি হলে খুব স্বাভাবিকভাবেই কাজে গতি আসবে। তবে এক্ষেত্রে অভিন্ন একটি নীতিমালা থাকতে পারে। সরকারপ্রধানের ইচ্ছায় নির্বাহী আদেশে সিটি করপোরেশনের মেয়রদের মর্যাদাদানের ক্ষেত্রে একটি ক্যাটাগরিও নির্ধারণ করা যেতে পারে।’

যদিও সরকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেয়ররা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা পাবেন কি না সেটা পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সিদ্ধান্ত। কখন কাকে কোন পদমর্যাদা দেওয়া হবে সেটি নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছার ওপর।

বরিশাল, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের মেয়রদের মর্যাদা বৃদ্ধি হলে নগরকে যে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সেটি প্রতীয়মান হয়। এর মাধ্যমে সরকারের প্রতি নগরবাসীর আস্থা আরও তৈরি হওয়ার সুযোগ থাকে। এতে করে দল, সরকার ও সিটি করপোরেশনের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। আগামী সিটি করপোরেশনের ভোটে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে সহায়ক হবে। আমরা মনে করি এই বিষয়টিতে সরকারের নজর দেওয়া উচিত।’

একাধিক সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন বৈঠকে কাউন্সিলররা নিজেদের মেয়রদের পদমর্যাদা নিয়ে মেয়রদের সামনে প্রায়ই আলোচনা তোলেন। তবে মেয়ররা এই বিষয়ে কোন কথা না বলে সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয় বলে জানিয়ে দেন। যদিও তাদের ঘনিষ্ঠজনরা চান দ্রুত এ ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্তের। এখন দেখা যাক বাদ বাকী ৫ সিটির মেয়রদের মর্যাদার বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরা কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

কালের আলো/ডিএস/এমএম